উনকোটি শব্দের অর্থ এক কোটি থেকে এক কম। অর্থাৎ ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৯। ইউনেসকোর হেরিটেজ স্থানের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে ত্রিপুরার এই পাহাড়ি অঞ্চল। এখানকার পাথরে খোদাই করা সপ্তম-নবম শতাব্দীর অনবদ্য ভাস্কর্যগুলো নিয়ে নানা গল্প রয়েছে।
হিন্দু পুরাণমতে, শিব এক কোটি দেব–দেবীকে নিয়ে কাশী যাওয়ার পথে এখানে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। সকালে শিব ঘুম থেকে উঠলেও বাকি দেব–দেবীরা উঠতে পারেননি। তাই তিনি বাকিদের পাথর হয়ে যাওয়ার অভিশাপ দিয়ে নিজেই কাশীর উদ্দেশে রওনা দেন। তাই এখানে এক কোটির চেয়ে এক কম দেব-দেবীর মূর্তি রয়েছে।
এই ভাস্কর্যগুলো ত্রিপুরার রঘুনন্দন পর্বতশ্রেণির মধ্যে একটি পাহাড়ে খোদাই করা আছে। জানা যায়, এখানে ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৯টি (৯৯,৯৯,৯৯৯) মূর্তি পাওয়া গেছে। উনকোটি কেবল ধর্মীয় গুরুত্বই রাখে না, এটি প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক দিক থেকেও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। স্থানীয় ককবরক ভাষায় একে বলা হয় সুব্রাই খুং। এটি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার কৈলাশহর মহকুমার উনকোটি জেলার প্রধান পর্যটন স্থান।
আগরতলা থেকে এই উনকোটির দূরত্ব প্রায় ১৪২ কিলোমিটার। গাড়ি ভাড়া করেও যাওয়া সম্ভব। আমাদের বাজেট কম ছিল, তাই সকালের ট্রেনই একমাত্র আস্থা। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে ছয়টায় এবং আগরতলা শিলচর এক্সপ্রেস বেলা ১১টায় আগরতলা স্টেশন থেকে ছাড়ে। ভোরের ট্রেনটা ধরার চেষ্টা করাই উচিত। কারণ, অনেকটা সময় লাগে। আবার বিকেল ৫টার পর উনকোটির গেট বন্ধ হয়ে যায়। আগরতলার উদ্দেশে শেষ ফিরতি ট্রেন ছাড়ে বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে।
প্রথমে এই ট্রেনে করে নামতে হবে কুমারঘাট স্টেশনে। ওখান থেকে কৈলাশহর প্রায় ২৬ কিলোমিটার। আমরা একটা ছোট মারুতি গাড়ি ভাড়া করেছিলাম। যাওয়া ও আসা বাবদ ৮০০ রুপি নিল। লোকাল অটো করেও যাওয়া যায়। প্রায় ১৫০ টাকা করে। যাওয়ার পথে দুই ধারের পাহাড়, সবুজ প্রকৃতি যেন আমাদের সঙ্গেই চলছে উনকোটির পথে। আঁকাবাঁকা পথ ধরে পৌঁছে গেলাম শেষমেশ উনকোটি।
পাহাড়ের সবুজের শরীরে যেন দৈত্যাকৃতি কিছু মুখমণ্ডল বসিয়ে দিয়েছে কেউ। সনাতন ধর্মের দেব-দেবীর মূর্তি এসব। গবেষণার কাজে এখানে অনেক গবেষক এসেছেন। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলেও এর ওপর একটা ডকুমেন্টারি তৈরি হয়েছে।
আসলেই সৃষ্টির রহস্য অনেক বিস্ময়কর। এখানে এসে সব ধরনের দাম্ভিকতা যেন চূর্ণ হয়ে যায়। একটু নিচে নামতেই পাহাড় ঘেঁষে নামছে ঝরনা অঝোর ধারায়। এখানে শুধু হিন্দুধর্মাবলম্বীরা নয়, বরং রয়েছে নানা ধর্মের মানুষের বিচরণ। কেউ হয়তো পূজার জন্য আসেন। আবার কেউ হয়তো আমারই মতো প্রকৃতির সৌন্দর্যে বিলীন হতে আসে, হারিয়ে যেতে আসে।
ঝরনায় একটু পা ভিজিয়ে আশপাশটা দেখে ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। সবুজের এত বর্ণ একসঙ্গে দেখার সৌভাগ্য আমার সেদিন হয়েছিল! এই পাহাড়ের রূপ যেন আজও চোখ বুজলে ধরা দেয়। আমাকে এখনো টেনে নিয়ে যায় তাঁর কোলে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।