জুমবাংলা ডেস্ক : এখনও লক্কড়-ঝক্কড় পরিবহনের দখলে রাজধানীসহ সারা দেশের সড়ক। সরকার ছয় মাস সময় বেঁধে দিলেও আসেনি ইতিবাচক পরিবর্তন। দেশে ৭৫ হাজারের বেশি বাস ও ট্রাক মেয়াদোত্তীর্ণ। অর্থনৈতিক আয়ু শেষ হওয়া এসব মোটরযান সড়কে দুর্ঘটনা ও বিশৃঙ্খলার অন্যতম কারণ।
অথচ রাজধানীতে চলতি মাস থেকে গণপরিবহনের এমন চিত্র আর দেখার কথা ছিল না। গেল বছরের অক্টোবরে ৬ মাস সময় বেঁধে দিয়ে ফিটনেসবিহীন এসব যানবাহন বন্ধের ঘোষণা দেয় সরকার। বাস্তবতা হলো, সরকারি ঘোষণা তোয়াক্কা না করেই সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ফিটনেসবিহীন গণপরিবহন। সেবার মানেও আসেনি কোনো পরিবর্তন।
উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পর মেয়াদোত্তীর্ণ এসব যান সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে উদ্যোগী হন। তিনি ঘোষণা দেন, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি সরিয়ে নিতে মালিকরা ছয় মাস সময় পাবেন। এ সময়ের পর সড়কে আর এসব গাড়ি চলতে পারবে না। মালিকদের দেওয়া ছয় মাস সময় অতিবাহিত হয়েছে গত এপ্রিলে।
এরপর আরো প্রায় এক মাস পেরিয়ে যাচ্ছে, এখনো রাস্তায় অবাধে চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি।
এছাড়া গত বছরের ৬ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়।
চিঠিতে বায়ুদূষণ কমাতে ২০ বছরের বেশি পুরনো বাস ও মিনিবাস এবং ২৫ বছরের বেশি পুরনো ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান রাস্তা থেকে প্রত্যাহারের জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) অনুরোধ জানায় পরিবেশ মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে পুরনো ডিজেল চালিত বাস ও ট্রাকের ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়ার সময় বাধ্যতামূলকভাবে নিঃসরণ পরীক্ষা চালুর অনুরোধ জানানো হয়।
এরপরই গত বছরের ২৪ অক্টোবর সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান একটি আলোচনা সভায় জানিয়েছিলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে ২০ থেকে ২৫ বছরের পুরোনো ও ফিটনেসবিহীন বাস, মিনিবাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ প্রভৃতি মোটরযান রাস্তা থেকে অপসারণ করতে হবে।
এরই অংশ হিসেবে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সড়ক উপদেষ্টা ভবিষ্যতে ইলেকট্রনিক ভেহিকেল চালু করার ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের সুযোগ নিতে বলেন এবং এ জন্য সহজ শর্তে ব্যবসায়ীদের ঋণ প্রদানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলেও জানান উপদেষ্টা।
এরপর গত জানুয়ারি মাসে মিরপুর ঢাকা মেট্রো-১ সার্কেলে বিআরটিএর সেবা সহজীকরণ সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-এর চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন জানিয়েছিলেন, মে মাস থেকে সড়কে কোনো ফিটনেসবিহীন বাস চলতে দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে।
এছাড়া ওই একই অনুষ্ঠানে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক জহির আল লতিফ বলেছিলেন, ঢাকার বাসগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। এর আগে আরো খারাপ ছিল। আপনারা আগামী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে ঢাকার পরিবহনব্যবস্থায় অনেক উন্নতি দেখতে পারবেন।
তবে ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এসব কিছুই ঘটেনি। যদিও সড়ক উপদেষ্টা দাবি করেছেন, কিছু মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি এরই মধ্যে ডাম্পিং করে দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, সামনে যেহেতু ঈদ, এ সময় মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তা জনভোগান্তির কারণ হবে, তাই ঈদের পর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, যাত্রীবাহী বাসের অর্থনৈতিক আয়ু ২০ বছর ও পণ্যবাহী গাড়ির ২৫ বছর নির্ধারণ করে ২০২৩ সালের মে মাসে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন সরকার। যদিও পরিবহন মালিকদের চাপে তিন মাস পর প্রজ্ঞাপনটি স্থগিত করা হয়।
দেশের সড়ক পরিবহন খাতের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ—বিআরটিএর তথ্য বলছে, ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলায় ২০ বছরের পুরনো বাস ও মিনিবাস রয়েছে ১০ হাজার ৫৫৬টি। এর বাইরে সারা দেশে আরো ১৮ হাজার ২০৫টি বাস ও মিনিবাস রয়েছে। আর ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলায় ২৫ বছরের পুরনো পণ্যবাহী (ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ট্যাংকলরি) মোটরযানের সংখ্যা ১৪ হাজার ৬৮৩। এর বাইরে সারা দেশে আরো ৩১ হাজার ৭৯৮টি পণ্যবাহী মোটরযান রয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ বাস ও ট্রাকের সংখ্যা ৭৫ হাজারের বেশি।
বিষয়টি সম্পর্কে সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা ঈদের (আসন্ন ঈদুল আযহা) সময়টা একটু দেখতে চাই। এখন আমরা সীমিত পরিসরে পুরনো যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছি। ঈদের পর বড় আকারে অভিযান শুরু হবে। ঈদের সময় মানুষের নির্বিঘ্নে যাতায়াতের একটা বিষয় আছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।