উপসচিবের আবেগঘন স্ট্যাটাস

image-94460-1573298402জুমবাংলা ডেস্ক : ঝিনাইদহ শহরে বসবাসকারী সরকারের অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি সেক্রেটারি আবু বকর তার অভাব অনটন ও যাপিত জীবন নিয়ে একটি আবেগঘন লেখা ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। গত ৫ নভেম্বর ‘হায়রে নিয়তি! হায়রে মুক্তিযোদ্ধা’ শিরোনামে লেখাটি তিনি তার টাইমলাইনে পোস্ট করার পর নেটিজেনরা তার পাশে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

২৪ বছর আগে অবসর নেওয়া এই মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বানিয়াবহু গ্রামে। বর্তমান তিনি দ্বিতীয় স্ত্রী ও এক মেয়ে নিয়ে বসবাস করেন ঝিনাইদহ শহরের মহিলা কলেজ পাড়ায়।

ফেসবুকে তার লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো, ‘কিছু বলতে বড় বেদনা বাজে বুকে। আমি একজন সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা, প্রথম সারির সংগঠক। মুজিব নগর সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম দায়িত্বপ্রাপ্ত এসডিও (মেহেরপুর ড. তৌফিক-ই- এলাহির অবর্তমানে- ৭১ এর ডিসেম্বরের ৫ তাং থেকে), জাতির পিতার অনুমোদনক্রমে মহাকুমা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান, ১৭ এপ্রিলের শপথ অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক (অন্য দু’জন হচ্ছেন দুই বীর বিক্রম, ড.তৌফিক-ই- এলাহী ও এসডিপিও জনাব মাহবুব)। ১ হাজর ৮’শ মুক্তিযোদ্ধার অস্ত্র সমর্পণের কমান্ডার, ৭৫০ জন শহীদকে গণকবর থেকে তুলে তাদের দাফন কাফনের ব্যবস্থা করেছি। ২.৫ লক্ষ শরণার্থীকে নিজ গ্রামে ভারতীয় আর্মীর গাড়িতে পৌঁছে দিয়েছি। এছাড়া মুজিবনগর কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। ৪ বার জাতির পিতার সান্নিধ্য লাভ করেছি। তাঁর আদরের কিল খেয়েছি পিঠে। গোপালগঞ্জ জেলার এডিএম থাকা কালে ১৯৯১ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে টুঙ্গী-কোটালিপাড়ার সকল গ্রামে সংসদ নির্বাচন পরিচালনার জন্য ছুটে বেড়িয়েছি। দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিসি হিসাবে কাজ করেছি। মাঠ পর্যায়সহ ৬ টি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু কী পেলাম জীবনে? ডিএস হিসাবে ২৪ বছর আগে অবসর জীবনের শুরুতে ৩০৮০ টাকা ভাতা পেতাম। আজ তা ১১৫০০/- মাত্র। আমি আজ গৃহহীন, সহায় সম্বলহীন। পৈত্রিক জমি বিক্রি করে ছেলেমেয়ের লেখাপড়া শিখিয়েছি। তারা আজ লন্ডন, অস্ট্রেলিয়া, ঢাকা ও খুলনায়। প্রধান শিক্ষিকা বউ মরে গেলে ঝিনেদার ভাড়া বাসায় একাকী থেকেছি এবং নিজেই রান্না করে খেতাম। পরে সবাই মিলে আবার আমায় বিয়ে করালো। বউ ও এক কন্যা নিয়ে সংসার। পেনশনের টাকা ঘর ভাড়া, চাল, ডাল,ওষুধ গ্যাস বিদ্যুৎ বিল দিতেই শেষ। মুক্তিযোদ্ধার ভাতা দিয়ে ছোট মাছ, ডিম ও তরকারি কিনি। ঐ দিয়েই ফকিরের মত জীবন যাপন। অথচ রাজাকার ও ক্ষমতাসীনরা আজ হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। হায়রে জীবন! এ জীবন চাইনা, চাই মৃত্যু। জীবন নামের যাত্রাপালার এটি শেষ দৃশ্য। এবার অন্যকথা। বউ মেয়ে এবং আমি তিনজনই গুরুতর অসুস্থ। মেয়ে অজানা কঠিন রোগে আক্রান্ত। ২৯.১০ তারিখে সে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি হলো। একটি সিট মিললো, কিন্তু তারা ওষুধ দিলনা, বাইরে চারটি পরীক্ষা ও ওষুধ কিনতে গেল হাজার দশেক। গত ৩.১১,১৯ তারিখে বাধ্যতামূলক ভাবে ডাক্তার তাকে রিলিজ করে ঢাকা মেডিকেলে রেফার করে দিল। গতমাসের ভাতা তুলে তাদের (৪.১১) ঢাকা পাঠিয়েছি। ঢাকায় গিয়ে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে সিট পেল না, নার্স এসে টাকা চায়। পরিশেষে অন্য এক রোগীর সিটে জায়গা দিয়েছে এক দিনের জন্য। আগামী কাল একতলার বারান্দায় মাদুর পেতে শুতে হবে বলে ফরমান জারী হয়েছে। হাসপাতালে পরীক্ষা নয়। রক্ত ছাড়াও আরও ৪ টি পরীক্ষা বাইরে থেকে করাতে হবে এবং ওষুধও কিনতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের বউ- বাচ্চার জন্য সিট রিজার্ভ ব্যাখ্যা বা ওষুধ দেওয়ার সরকারি আদেশ কেন হাসপাতাল মানেনা? কে দেবে এর জবাব? আমি মরবো, বউ মরবে, মেয়ে মরবে, কারণ পয়সা নেই। হায়রে স্বদেশ! হায়রে মুক্তিযোদ্ধা! আমি চাইনা এ ঘৃণিত জীবন। মন্ত্রী, এমপি মহোদয়রা সর্দি হলে বিদেশ যায় সরকারি খরচে। আমি বাংলা সাহিত্যের একজন মহাকবি, কিন্তু আজও সরকার দেয়নি কোনো পদক বা খেতাব। জাতির জনকের মহামহীম কন্যার আদেশ ছাড়া রাষ্ট্রযন্ত্র ঠিক মত চলে না। তিনি জনতার নেতা, তিনি জননী, তিনি কল্যাণকামী বিশ্ববরেণ্য নেতা। তাঁকেই জানাই, মাগো দৃষ্টি দিন আমার পানে। আমার ও আমার পরিবারকে আরও কিছুদিন বাঁচতে দিন। তা না হলে-চাইনা ভাতা, চাইনা ওষুধ, চাইনা রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন। মরার পর চাইনা কাফন- দাফন, চাইনা বেহেশত। নীরবে নিভৃতে মিশে যেতে চাই দূর অজানায়, যেখানে হাসপাতাল নেই, সরকার নেই, নেই চন্দ্র- সূর্য, গ্রহ- তারা। ৮৪ বছরের এক হৃদ রোগী মুক্তিযোদ্ধা।
Ds-Abu-Bakar-01

Write a Comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *