জুমবাংলা ডেস্ক : শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন পদত্যাগ করেছেন।
গতকাল সোমবার বিকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ ২০ দিন আন্দোলন-সংগ্রাম যেখান থেমে মূলত সূত্রপাত হয়েছিল, তা হলো একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে। যেটি দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া। এই স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে বহিষ্কার করেন। পরে অবশ্য তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তবে আন্দোলন মোড় নেয় অন্যদিকে। সেই আন্দোলনে উপাচার্যের পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য হন ভিসি নাসির উদ্দিন।
উপাচার্যের পদত্যাগের পর নিজের ফেসবুক ওয়ালে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন জিনিয়া। সেখানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়, উপাচার্য, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে তার নিজের অনুভূতির কথা জানিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে জিনিয়া নিজের ওয়ালে এই স্ট্যাটাসটি দেন। তার ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো…
‘আজকের ভোরটা আমার কাছে অন্যরকম ছিল। দীর্ঘ কুড়ি দিনের লড়াই শেষে আজ অন্যরকম একটি সূর্য আমার জীবনে এসেছে। আমার এই ছোট জীবনে আমি কখনোই ভাবিনি এই রকম একটি যুদ্ধের মুখোমুখি আমাকে হতে হবে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী? প্রশ্নটি আমার ফেইসবুকে মন্তব্য কেন্দ্রিক হলেও এই প্রশ্নটির উত্তর আমি হাতে কলমে শিখছি। আলো থেকে অন্ধকারের পথগুলো পেরিয়ে শিখতে পেরেছি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ, একটি বিবেককে জাগিয়ে তোলা।
শিক্ষা ও গবেষণার বাহিরে যে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ধুকে ধুকে মরতে বসেছিল, তা ওই একটি প্রশ্ন সকল অন্যায়কে ভষ্ম করে সত্যের ও ন্যায়ের দ্বার উম্মোচন করেছে। আমি কখনোই ভাবিনি, কয়েকটি শব্দের একটি বাক্য এইভাবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিটারজেন্ট হিসেবে কাজ করবে।
আমার লড়াইটা ছিল স্রেফ আমার বিবেকের। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ আমার দীর্ঘদিনের অভ্যাস। আর সেই অভ্যাসের কারণে হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছোট বহিষ্কারাদেশকে বড় কিছু মনে করতে পারিনি। আমার বিশ্বাস ছিল, যদি কোথাও সত্যের জয় না হয়, তবে বিবেকের কাছে আমি জয়ী। আমার এই লড়াইয়ে প্রথমেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি সেই সকল ভাইবোনদের প্রতি যারা রাত-দিন, ঝড়-বৃষ্টি এমনকি সন্ত্রাসী হামলা উপেক্ষা করে অত্যন্ত অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন।
আমি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি, সেইসব শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের, যারা এই ঘুনে ধরা সমাজে মেরুদণ্ড সোজা করে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। একজন সংবাদকর্মী হিসেবে হয়তো পেশাদারিত্বের বাধ্য বাধ্যকতায় আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারিনি, তবে আমার আত্মা সবসময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গেই ছিল। স্লোগানের ভাষায় সংবাদগুলো ছিল আমার প্রতিবাদের ভাষা। আমি অভিভূত, যাদের সঙ্গে আমার কোনোদিন পরিচয় হয়নি, তারা আমাকে যেভাবে আপন করে নিয়েছেন, আমি সত্যি ভাগ্যবান। দেশের বাহিরে থেকে যারা আমাকে শক্তি যুগিয়েছেন তাদের প্রতি রইলো কৃতজ্ঞতা। আপনাদের সমর্থন না পেলে হয়তো আমাদের দাবি আাদায়ে আরও অনেক বেশি প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হতো।
সর্বোপরি কৃতজ্ঞ সকল গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি যারা সমগ্র দেশের নিকট এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির বিষয়টি পৌঁছে দিয়েছেন। গণমাধ্যমকে যদি আমরা কাছে না পেতাম তাহলে হয়তো অসংখ্য জিনিয়াকে এই বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে হতো অন্যায় অপবাদ নিয়ে। সবার সম্মলিত প্রচেষ্টায় আজ বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় কলঙ্কমুক্ত হলো। আশা করি, জাতির জনকের এই জন্মভূমিতে অন্যায়কারীরা আর আবাসন তৈরি করার কোনো সাহস দেখাবে না। সবার সু-স্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করছি।’
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে গত ১১ সেপ্টেম্বর আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপাচার্যের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে আইন বিভাগের লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেসময় উপাচার্য নাসির উদ্দিন ও জিনিয়ার মোবাইলের একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জিনিয়ার সঙ্গে অশালীন ভাষায় কথা বলেন। এরপর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ২১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশ উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যায়। এ অবস্থায় ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন গোবরা এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা করে বহিরাগতরা। এতে ২০ শিক্ষার্থী আহত হন। পরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে তিন সহকারী প্রক্টর পদত্যাগ করেন।
সূত্র : আমাদের সময়
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।