জুমবাংলা ডেস্ক : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় সাংবাদিককন্যা স্কুলছাত্রী ঊর্মি (১০) হত্যা মামলার জমিনে থাকা আসামি ছগীর আকন (৪২) আবারও তন্বী আক্তার (২৪) হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়েছে। তন্বী হত্যার ১০ দিনের মাথায় বিভিন্ন তথ্য যাচাই করে কুখ্যাত খুনি ছগীর আকনসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ।
দুদিনের রিমান্ড শেষে বুধবার বিকালে মঠবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাকে হাজির করলে ম্যাজিস্ট্রেট মো. কামরুল আজাদ জেলহাজতে পাঠানো আদেশ দেন।
ছগীর উপজেলার উপজেলার উত্তর বড় মাছুয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মৃত কুদ্দুস আকনের ছেলে।
গত ১ জানুয়ারি ছগীর, একই এলাকার সাইয়েদ আকনের ছেলে ওমরসানী (২৮) এবং সালমা বেগমের ছেলে সাকিবকে (২৫) আটক করে পুলিশ। ওমরসানীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়। ছগীর ও সাকিবকে গ্রেফতার দেখিয়ে ২ জানুয়ারি সোমবার আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কুদ্দুস।
আদালতের বিচারক শুনানি শেষে সাকিবের ১ দিন ও ছগীরের ২ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ছগীর আকন সাংবাদিক কন্যা ঊর্মি হত্যা মামলার একমাত্র চার্জশিটভুক্ত আসামি।
গত ২২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে তন্বী আক্তারের গলাকাটা লাশ উপজেলার উত্তর বড়মাছুয়া গ্রামের মান্নান আকনের বাগান থেকে উদ্ধার করে মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের বাবা আ. রাজ্জাক আকন (৭২) ২৩ ডিসেম্বর শুক্রবার মঠবাড়িয়া থানায় অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন।
পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ, পিবিআই, র্যা ব, সিআইডি পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ২১ ডিসেম্বর বুধবার বিকাল থেকে তন্বী আক্তার নিখোঁজ ছিল।
ঊর্মি হত্যা মামলা ও এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৩ জুলাই সকালে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সাংবাদিক কন্যা ৯ বছর ৩ মাস বয়সী ঊর্মির অর্ধগলিত ভাসমান লাশ একই এলাকার পরিত্যক্ত একটি বাগানের নালা (ব্যার) থেকে উদ্ধার করে মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ। ২৩ জুলাই রাতে নিহত ঊর্মির বাবা সাংবাদিক জুলফিকার আমীন সোহেল মঠবাড়িয়া থানায় অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে মঠবাড়িয়া থানায় মামলা করেন। সোহেল উপজেলার ওই উত্তর বড় মাছুয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত মো. রুহুর আমীন আকনের ছেলে।
মামলার কয়েক দিন পর বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে ছগীর আকনকে গ্রেফতার করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন মঠবাড়িয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাজহারুল আমিন। ঊর্মিকে বাড়ির মধ্যে ডেকে নেয় ছগীর- প্রতক্ষ্যদর্শীর এমন সাক্ষীর পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দফা রিমান্ডে আনলেও কোনো স্বীকারোক্তি দেয়নি ছগীর।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাজহারুল আমিন প্রায় দশ মাস অধিকতর তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ২২ মে ঊর্মি হত্যার একমাত্র আসামি হিসেবে ছগীরকে চিহ্নিত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে তিনি উল্লেখ করেন শিশু ঊর্মিকে ধর্ষণের পর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে লাশ পরিত্যক্ত বাগানের নালায় ফেলে দিয়ে আসে।
চার্জশিটে তিনি আরও উল্লেখ করা হয়, ছগীর নিহত তন্বীর বাবা আ. রাজ্জাক আকনের একটি গরু গোয়ালঘর থেকে নিয়ে হত্যা করে ফেলে রাখে, যেখানে ঊর্মির লাশ পাওয়া যায় সেই নালার উপরিস্থানে। এছাড়া গাছ খাওয়ায় স্থানীয় শামসের হক (শামসু) সরদারের গরুর পা কেটে নেয়। এছাড়াও ঊর্মি হত্যা মামলায় গ্রেফতারের কয়েক দিন আগে তার আপন বড় ভাই কবির আকনের ৬টি হাঁস পা দিয়ে পিষে মেরে কাদামাটির মধ্যে ঢুকিয়ে রাখে ছগীর।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসী জানান, অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথার খুনি ছগীর শিশু ঊর্মি হত্যাসহ একাধিক গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি মেরে ফেলে। আর্থিকভাবে সচ্ছল ও আত্মীয়-স্বজন বিভিন্ন প্রশাসনে থাকায় এলাকাবাসী ভয়ের মধ্যে থাকেন।
মঠবাড়িয়া থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, সাকিবকে ১ দিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার এবং ছগীরের ২ দিনের রিমান্ড শেষে বুধবার আদলতে প্রেরণ করা হলে ম্যাজিস্ট্রেট মো. কামরুল আজাদ তাদের জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। ছগীরকে আরও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।