জুমবাংলা ডেস্ক : এইচএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র আনতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা জানতে পারে উচ্চ মাধ্যমিকে তাদের ভর্তিই করানো হয়নি। তারা ওই কলেজের শিক্ষার্থীই নয়।
অথচ গত দুই বছর ধরে কলেজে নিয়মিত ক্লাস করেছে তারা, ১ম বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় বর্ষে উঠে তারা। এরপর তারা টেস্ট পরীক্ষায়ও অংশ নেয়।
কিন্তু বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) এইচএসসির দিনে জানতে পারে তারা পরীক্ষা দিতে পারবে না।
বগুড়া সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজে ঘটেছে এই অদ্ভুত ঘটনা। প্রবেশপত্র না পেয়ে এবারের এইসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছে না অন্তত ২০ শিক্ষার্থী।
মূলত: গত ২ বছর ধরে কলেজ কর্তৃপক্ষের একটি চক্রের প্রতারণার শিকার এসব শিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) বিকেলের দিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের মধ্যে চারজনের সঙ্গে কথা বলে এই প্রতিবেদক।
ওই চার শিক্ষার্থীর দাবি, অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে এমন প্রতারণা করেছে কলেজের কয়েকজন অফিস সহকারী।
আর কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ভুয়া ভর্তির ঘটনা স্বীকার করলেও তাদের সঠিক সংখ্যা বলতে পারেনি।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রায় দুই বছর নিয়মিত ক্লাস করে ১৭ আগস্ট চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসার জন্য তারা কলেজে প্রবেশপত্র আনতে যান। তখনই তারা জানতে পারেন যে, উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে তাদের ভর্তিই করানো হয়নি।
কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, কলেজে কর্মরত হারুনুর রসিদ এবং আব্দুল হান্নান নামে দুই কর্মচারী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরীক্ষা দিতে না পারা শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান জানান, ২০২১ সালে এসএসসি পাস করার পর নিয়ম অনুযায়ী তিনিসহ অন্তত ২০ জন অনলাইনে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিলেন। ওই আবেদনে তারা বগুড়ার একাধিক কলেজের নামে চয়েস দিয়েছিলেন। কিন্তু তার একটিও কার্যকর হয়নি। পরে তারা লোকমুখে শুনতে পান যে, বগুড়া সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজে অফলাইনে এইচএসসিতে ভর্তি করানো হচ্ছে। এরপর তারা ওই কলেজের দুই পিওন হারুনুর রসিদ এবং আব্দুল হান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ভর্তির জন্য তারা ১০ হাজার টাকা দাবি করেন।
শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান আরও বলেন, আমি হারুণের কাছে ১০ হাজার টাকা দিলে তিনি আমাকে কলেজে ভর্তির রসিদ দেন। তারপর আমি কলেজের ইউনিফর্ম বানিয়ে ক্লাস করতে থাকি। পরে পরীক্ষা এবং ফরম পূরণসহ বিভিন্ন সময় কলেজে এবং বোর্ডে জমা দেওয়ার কথা বলে তিনি আরও টাকা নেন। নিয়মিত ক্লাস করার পাশাপাশি আমি টেস্ট পরীক্ষায় অংশ নেই এবং ফরম পূরণ করি। চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসার জন্য প্রবেশপত্র চাইলে তিনি বুধবার (১৬ আগস্ট) সকাল ১০টায় কলেজে যেতে বলেন। তবে ওইদিন কলেজে গেলে তিনি বলেন, প্রবেশপত্র প্রিন্ট হয়নি। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে আনতে হবে। আমি রাজশাহী যাচ্ছি তোমরা বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা কর।
শারমিন নামে আরেক শিক্ষার্থী জানান, আমাকে প্রবেশপত্র নেওয়ার জন্য হান্নান পরীক্ষার দিন অর্থাৎ ১৭ আগস্ট ভোরে কলেজে যেতে বলেন। তবে সকাল ৬টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান করেও তাকে কলেজে না পেয়ে ফোন দিলে হান্নান রিসিভ করেননি। পরে আমিসহ অন্যরা পরীক্ষাকেন্দ্র পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজে গেলে সেখানে আমাদের কোনো সিট খুঁজে পাইনি। এরপর কলেজে এসে যোগাযোগ করে জানতে পারি আমাদের ভর্তিই করানো হয়নি। ভর্তির রশিদসহ যেসব কাগজপত্র দেওয়া হয়েছিল সবই জাল ছিল।
হাবিবা আক্তার নামে এক শিক্ষার্থীর মা হাসিনা বানু আক্ষেপ নিয়ে জানান, কলেজের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যদি ভর্তির নামে প্রতারণা করেন। তাহলে বাচ্চারা কীভাবে বুঝবে? আর আমারসহ এতগুলো অভিভাবকের সন্তানের দুই বছর জীবন থেকে নষ্ট হয়ে গেল তার কী হবে? এই বিচার কে করবে?
কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীরা জানান, যখন থেকে অনলাইনে ভর্তির প্রক্রিয়া চালু হয়েছে, তখন থেকেই হারুনুর রসিদ এই অপরাধ করে আসছে। বিষয়টি অনেকেই জানতেন। কিন্তু তাকে কিছু বলা হতো না। ভর্তি প্রতারণার কর্মকাণ্ডে তার সঙ্গে হান্নানও জড়িত। এর আগে হারুন গণিত বিভাগের অফিস সহকারী ছিলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাছে অনৈতিকভাবে টাকা নেওয়ার অভিযোগে তাকে সেখান থেকে বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু তাকে চাকরি থেকে বাদ দেয়া হয়নি।
কলেজের প্রধান সহকারী (বড়বাবু) তাজমিলুর রহমান জানান, আমি এসবের সঙ্গে জড়িত না। এসব টাকা নেওয়ার কাজ হারুনেরা করেছে ৷ খোঁজ নিয়ে দেখেন যারা টাকা দিয়েছে তাদের কাছে কোনো মূল রসিদ নেই। আমার ক্যাশ মিলিয়ে দেখেন কোনো অনিয়ম পাবেন না।
শাহ সুলতান কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মোহাম্মদ আইয়ুব আলী জানান, ওই শিক্ষার্থীরা দুই বছরে কখনও কোনো শিক্ষকের কাছে আসেনি। আসলে হয়ত এই অবস্থায় পড়া লাগতো না। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক রেজাউন নবী জানান, যে দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে অফলাইনে ভর্তি করানোর অভিযোগ উঠেছে তাদের মধ্যে হারুনুর রসিদ মাস্টার রোলে শিক্ষক স্টাফ রুমে অফিস পিওন হিসেবে কর্মরত। আর আব্দুল হান্নান নামে অপরজন রাজস্ব খাতের কর্মচারী এবং কলেজের লাইব্রেরিতে অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত। আমরা ওই দুজনকে ডেকেছিলাম। তাদের মধ্যে হারুন ভর্তি করানোর নামে শিক্ষার্থীদের কাছে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছে। আর আব্দুল হান্নান বলেছে যে, সে টাকা নিয়ে হারুনকে দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত চার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তের জন্য একটি কমিটি করা হবে। পাশাপাশি তাদের বিশেষ ব্যবস্থায় ভর্তি করানো যায় কিনা সে ব্যাপারে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব। সূত্র : বাংলানিউজ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।