নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনার এই পরিস্থিতিতে সবাইকে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এইটুকু চাই সবাই যেন সততার সঙ্গে কাজ করেন। এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে কেউ যেন কোনরকম দুর্নীতি, অনিয়ম বা অপব্যবহার না করেন।’
‘কেউ করবেন না, সেটাই আমার অনুরোধ। আমরা যদি সঠিকভাবে কাজ করতে পারি তাহলে সমাজের কোন স্তরের মানুষই কোন অসুবিধায় পড়বে না,’ যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় অনুষ্ঠিত প্রেস কনফারেন্সে প্রদত্ত লিখিত ভাষণে এই অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে আশ্চর্য এক সহনশীল ক্ষমতা এবং ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা। ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বান সাড়া দিয়ে যে জাতি মাত্র ৯ মাসে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে – সে জাতিকে কোন কিছুই দাবিয়ে রাখতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘মহান আল্লাহ বিশ্ববাসীকে এই মহামারী থেকে রক্ষা করুন।’ প্র্রধানমন্ত্রী আ্ল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দেশের জনগণসহ বিশ্বের সকল মানুষের সুরক্ষাও কামনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এর আগে আমি রফতানিমুখী শিল্পকর্মী ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা (জরুরী) প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি এবং আজ আমি নতুন করে ৬৭,৭৫০ কোটি টাকার চারটি নতুন আর্থিক উদ্দীপনা প্যাকেজ ঘোষণা করছি।’
লিখিত ভাষণে তিনি আরও বলেন, ‘নতুন বরাদ্দসহ মোট আর্থিক বরাদ্দ দাঁড়াবে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, যা জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ২২ শতাংশ।
এসময় বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব উত্তরণে তাঁর সরকারের ৪ দফা কার্যক্রম তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের দ্রুত বিস্তার, স্বাস্থ্য পরিষেবার উপর সৃষ্ট বিপুল চাপ এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে নজিরবিহীন লকডাউন ও যোগাযোগ স্থবিরতা বিশ্ব অর্থনীতির উপর ইতোমধ্যেই ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, শিল্প উৎপাদন, রপ্তানি বাণিজ্য, সেবাখাত বিশেষত: পর্যটন, এভিয়েশন ও হসপিটালিটি খাত, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ, কর্মসংস্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রে ধ্বস নেমেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু সরবরাহ ক্ষেত্রেই নয়, চাহিদার ক্ষেত্রেও ভোগ ও বিনিয়োগ চাহিদা হ্রাস পেতে শুরু করেছে।
দীর্ঘ ছুটি বা কার্যত লক-ডাউনের ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের উৎপাদন বন্ধ এবং পরিবহন সেবা ব্যাহত হওয়ায় স্বল্পআয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস এবং সরবরাহ চেইনে সমস্যা হতে পারে বলেও তিনি আশংকা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নভেল করোনাভাইরাস-এর প্রাদুর্ভাব বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে এটিকে বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ যাবৎ ২০২টি দেশ ও অঞ্চলে এর সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। বিশ্বে এখন প্রতিদিন ৭০ হাজারের বেশি মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে এবং ৪ হাজারের বেশি মারা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘গতকাল পর্যন্ত প্রায় ১১ লাখ ৩০ হাজার ৮১৪ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং ৬০ হাজার ১৪৯ মারা গেছেন। ২ লাখ ৩৫ হাজার ৯০২ সুস্থ হয়েছেন। কাজেই সুস্থ হবার হারটা বেশি।’
‘বাংলাদেশে সময়মত ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে আল্লাহর রহমতে এখনও আমাদের এখানে ব্যাপক সংক্রমণ ঘটেনি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে’,যোগ করেন তিনি।
এ সময় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবেলায় তাঁর সরকারের পদক্ষেপসমূহের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত বছর ডিসেম্বর মাসের শেষে চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পরপরই আমরা এই বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেই।’
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা ও আইইডিসিআর যৌথভাবে কাজ শুরু করে। আইইডিসিআর-এ কন্ট্রোল রুম খোলা হয় এবং রোগটি মোকাবিলায় প্রস্তুতি শুরু করা হয়। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পৃথক পৃথক কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ১৪ এপ্রিল আমাদের বাংলা নববর্ষ শুরু। এই নববর্ষ সকলে ঘরে বসে নিজের মত করে উদযাপন করেন। আমাদের নববর্ষকে ঘিরে যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা যা কিছু তা মিডিয়ার মাধ্যমেই হবে।
তিনি বলেন, সামনেই আমাদের ‘শবে বরাত’ রয়েছে। সেক্ষেত্রেও আমি বলবো সকলে ঘরে অবস্থান করেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করুন-আমাদের ‘বরাত’টা যেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ভাল রাখেন এবং দেশের মানুষ যেন আর্থ-সামাজিকভাবে এগিয়ে যেতে পারেন। আর এই মহামারির থেকে যেন বাংলাদেশের জনগণ সহ সমগ্র বিশ্ববাসী মুক্তি পায়।
অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তাফা কামাল তাঁর বক্তৃতা বলেন, বিপদ কেটে যায় এবং এই বিপদও কেটে যাবে। তবে, এই বিপদ কেটে যাওয়ার সঙ্গে যাতে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারি এবং আমাদের সক্ষমতার জায়গায় যেখানে ছিলাম, সেখানে আবার চলে যেতে পারি, সেই লক্ষ্য অর্জনেই প্রধানমন্ত্রী আজকে এসব উদ্দীপনামূলক প্যাকেজগুলো ঘোষণা করেছেন।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দেরি করেন নাই। করোনা ঘটে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন নাই। তাঁর অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞান দ্বারা আগেই ব্যবস্থা নিয়েছেন।’
‘আর আমাদের এসব প্যাকেজে কৃষক, কামার,কুমার জেলে সহ সকল প্রকার খেটে খাওযা জনগণ এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, কেউই বাদ পড়েন নাই, ’যোগ করেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৫ এর কোঠায় রয়েছে এবং অর্থনীতি একটি মজবুত অবস্থানে থাকায় প্যাকেজের অর্থ যদি ব্যাংক থেকে অর্থায়ন করি তাহলে আমরা আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন অব্যাহত রেখে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের কাছাকাছিই রাখতে সক্ষম হব।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।