বিনোদন ডেস্ক : একমাত্র অভিভাবক নানাভাইকে হারিয়ে বেদনায় আচ্ছন্ন ঢাকাই সিনেমার নায়িকা শামসুন্নাহার স্মৃতি পরীমনি।
নানার মৃত্যুর পরে এই নায়িকার উপলব্ধি হলো, এমন ভালোবাসা তিনি আর কারো কাছ থেকে পাননি। তবুও নানাভাইয়ের দেওয়া ‘শিক্ষায়’ নিজেকে শক্ত রেখেছেন বলেও জানিয়েছেন পরীমনি।
এই নায়িকার ভাষ্য, ছেলেবেলায় বাবা-মাকে হারালেও এই প্রথম নিজেকে ‘এতিম’ বলে মনে করছেন তিনি।
শনিবার সকালে ফেইসবুকে নানা শামসুল হক গাজীর কবরের ছবি শেয়ার করে পরীমনি লিখেছেন, “এই জীবনে আমার নানার মতন কেউ আমাকে ভালোবাসে নাই আর। যারা আমাকে খুব কাছ থেকে চেনেন তারা সবাই জানেন এই মানুষটা আমার জন্যে কি ছিলো।”
শুক্রবার রাত ২টা ১১ মিনিটে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরীমনির নানা শামসুল হক গাজীর মৃত্যু হয়েছে। এই হাসপাতালে আইসিইউতে ছিলেন পরীমনির নানা। শুক্রবার সকালে ফেইসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে এ খবর জানিয়েছেন নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী।
শামসুল হক গাজীর বাড়ি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার সিংহখালী গ্রামে। পেশায় তিনি স্কুল শিক্ষক ছিলেন। শুক্রবার সিংহখালী গ্রামে সমাহিত করা হয় তাকে।
পরীমনি ফেইসবুকে বলেন, “এই কবর স্থানে এখন তিনটা কবর। প্রথমটা আমার মায়ের। তারপর নানি আর এই যে আমার জানের মানুষটার কবর। নানু মরে যাওয়ার আগে নিজেকে আমার এতিম লাগে নাই কোনো দিন। এই জীবনে আমার নানার মতন কেউ আমাকে ভালোবাসে নাই আর। যারা আমাকে খুব কাছ থেকে চেনেন তারা সবাই জানেন এই মানুষটা আমার জন্যে কি ছিলো। আজ হয়তো এই পরিবারের সবার থেকে ভেঙে পড়ার কথা ছিলো আমার। কিন্তু আমার নানা আমাকে সবার বট গাছ করে দিয়ে গেছে।”
‘এই মৃত্যুর চেয়ে বড় শোক কোনোদিন আসবে না’ বর্ণনা করে পরীমনি বলেন, “যদি আসেও, সব শোক সহ্য করার ক্ষমতা আল্লাহ আমাকে দিবেন এটা আমার নানুর দোয়া। কতো ভাগ্যে আমি আমার নানুর সাথে তার শেষ কলেমা পড়তে পেরেছি! আহা নানুভাই কতো শান্তনায় রেখে গেলো আমাকে। জীবন সুন্দর। মৃত্যু যে বড় সুন্দর।”
ছোটবেলায় মা-বাবাকে হারিয়ে পরীমনি বেড়ে ওঠেন ভাণ্ডারিয়ায় তার নানা বাড়িতে। সেখান থেকেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন পরীমনি।
পরীমনির ভাষ্য অনুযায়ী, নানা শামসুল গাজীই ছিলেন তার ‘অভিভাবক’। পরীমনি ঢাকায় স্থায়ী হলেও তার নানা শামসুল হক ভাণ্ডারিয়াতেই থাকতেন। তবে পরীমনির সুসময়-দুঃসময়ে বরাবর নাতনির পাশে দেখা গেছে তাকে।
পরীমনিও তার জীবনে শামসুল হককে দিয়েছিলেন ‘বাবার জায়গা’। ছয় বছর আগে বাবা দিবসে এক ফেইসবুক পোস্টে পরীমনি বলেছিলেন, তার নানা শামসুল হক গাজীকেই তিনি ‘বাবার জায়গা দিয়েছেন’।
নানাও মনে করতেন নাতনিই ‘তার সব’। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শামসুল হক গাজী বলেছিলেন, “আমার কাছে একদিকে পৃথিবী আরেক দিকে পরী। ওই-ই আমার পৃথিবী।”
পরীমনির ফেইসবুকের ‘ফটো গ্যালারিতে’ নানা-নাতনির বহু ছবি জায়গা পেয়েছে। এমনকি কভার ফটোতেও পরীমনি যে ছবিটি রেখেছেন, তাতে আছেন তার নানা।
২০২১ সালে ঢাকা বোট ক্লাবের ঘটনার পর র্যাবের করা মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে পরীমনি যখন কারাগারে যান, আলোচনায় আসেন তার নানা শামসুল হক গাজী। সে সময় ঢাকায় এসে শামসুল হক গাজী বারবার নাতনির মুক্তি দাবি করে বলেছিলেন, “ষড়যন্ত্র করে তার নাতনিতে ফাঁসানো হয়েছে’।
সে সময় পরীমনির মামলার শুনানির সময় আদালত প্রাঙ্গণে নাতনিকে দেখতে গেলে ‘আবেগঘন পরিবেশ’ তৈরি হয়। আদালতে অপেক্ষমাণ নানাকে দেখে কেঁদে ফেলেন এই নায়িকা।
অভিনেতা শরীফুল রাজের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বিয়ের সময়ও পরীমনির পাশে একমাত্র অভিভাবক হিসেবে শামসুল হক গাজীকে দেখা গেছে। শামসুল হক উপস্থিত ছিলেন নাতনির ছেলে রাজ্যর জন্মের সময় এবং তার ‘মুখে ভাত’ অনুষ্ঠানেও।
পরীমনি একা বা বিয়ের পর রাজের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যখন ঘুরতে গেছেন, অনেক সময়ে সঙ্গে থেকেছেন শামসুল হক। পরীমনি ও রাজ দুজনে মিলে পালন করেছেন নানার জন্মদিন অনুষ্ঠানও।
এরপর চলতি বছরে পরীমনির সংসার ছেড়ে রাজ বেরিয়ে যাওয়ার পর, নাতনির কাছে ছুটে আসেন এই নানাভাই। সে সময় বেশ কিছুদিন নাতনির সঙ্গে ছিলেন তিনি। ছেলে রাজ্যর জন্মদিনের অনুষ্ঠানেও শামসুল হক গাজী ছিলেন নাতনির সঙ্গে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।