স্পোর্টস ডেস্ক: ভারতের মাটিতে শুরু হয়ে গেছে আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩তম আসর। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযান শুরু হবে আজ (৭ অক্টোবর)। ধর্মশালায় হিমাচল প্রদেশ অ্যাসোসিয়েশন ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হওয়ার মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামবে টাইগাররা। খেলাটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল ১১ টায়।
এ নিয়ে সপ্তমবারের মতো আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ। ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচের আগে চলুন জেনে আসি একদিনের ক্রিকেটের বিশ্বমঞ্চে টাইগারদের যাবতীয় খুঁটিনাটি-
অংশগ্রহণ : ১৯৭৫ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু হলেও প্রথম ছয় আসরে অংশ নিতে পারেনি বাংলাদেশ। কেনিয়াকে হারিয়ে ১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে আয়োজিত আইসিসি ট্রফির শিরোপা জিতে ক্রিকেটের বিশ্বযজ্ঞে লাল-সবুজদের পা রাখার দুয়ার খুলে যায়। ক্রিকেটের আদিভূমি খ্যাত ইংল্যান্ডে আয়োজিত ১৯৯৯ বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের অভিষেক। সেই থেকে শুরু। এরপর একবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশ ওয়ানডে বিশ্বকাপের নিয়মিত দল, টাইগাররা অংশ নিয়েছে টুর্নামেন্টের সর্বশেষ ছয় আসরেই।
ম্যাচ সংখ্যা ও জয়-পরাজয় : বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ওয়ানডে বিশ্বকাপের ছয়টি আসরে অংশ নিয়ে খেলেছে ৪২টি ম্যাচ। এর মধ্যে ১৪টি ম্যাচে জয়ের বিপরীতে লাল-সবুজের দল ২৫টি ম্যাচে পরাজিত হয়েছে। এছাড়া, পরিত্যক্ত হয়েছে তিনটি ম্যাচ। ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জয়ের হার ৩৩.৩৩%। বিশ্বকাপে আফগানিস্তান, বারমুডা, নেদারল্যান্ডস ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের রেকর্ড শতভাগ। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, কেনিয়া ও কানাডার বিপক্ষে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ এখনো জিততে সমর্থ হয়নি।
প্রথম জয় : ১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপ অভিষেকে গ্রুপপর্বে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচেই যথাক্রমে নিউজিল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে পাত্তা পায়নি বাংলাদেশ। তবে বি গ্রুপে এডিনবার্গে পরের ম্যাচে স্কটল্যান্ডকে ২২ রানে হারিয়ে ঠিকই বিশ্বকাপের মঞ্চে নিজেদের প্রথম জয় তুলে নেয় লাল-সবুজের দল। টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৮৫ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাবে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ১৬৩ রানে গুটিয়ে যায় স্কটিশরা।
টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর বিপক্ষে যত জয় : ১৯৯৯ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের অভিষেকেই সেই আসরের ফাইনালিস্ট পাকিস্তানকে ৬২ রানে হারিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের চমক উপহার দেয় বাংলাদেশ। ২০০৭ বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বে ভারতকে ৫ উইকেটে ও সুপার এইটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৬৭ রানে পরাজিত করে টাইগাররা। ২০১১ ও ২০১৫ বিশ্বকাপে দুবার ইংল্যান্ডকে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে পরাজিত করে লাল-সবুজরা। এছাড়া, ২০১৯ সালে আয়োজিত ওয়ানডে বিশ্বকাপের সর্বশেষ আসরে দক্ষিণ আফ্রিকা, আফগানিস্তান আর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারায় বাংলাদেশ।
সর্বোচ্চ সাফল্য : এখন পর্যন্ত ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১২টি আসর মাঠে গড়িয়েছে। যুগে যুগে টুর্নামেন্টের ফরম্যাটও বিভিন্নভাবে পাল্টেছে। তবে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাফল্য এসেছে ২০১৫ ও ২০০৭ সালে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল টাইগাররা। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজে আয়োজিত ২০০৭ বিশ্বকাপে সুপার এইটে খেলেছিল লাল-সবুজের দল।
দলীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ : ইংল্যান্ড আর ওয়েলসে অনুষ্ঠেয় ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে অষ্টম স্থানেই টাইগারদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। রাউন্ড রবিন ফরম্যাটের লিগ পর্বে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ও টুর্নামেন্টের ইতিহাসের সফলতম দল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ের জন্য ৩৮২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৩৩ রান সংগ্রহ করতে সমর্থ হয় বাংলাদেশ। ম্যাচটি ৪৮ রানে হেরে গেলেও এটিই ওয়ানডে ক্রিকেটে ও বিশ্বকাপের মঞ্চে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।
সফলতম রান তাড়া : ইংল্যান্ড আর ওয়েলসে অনুষ্ঠেয় ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপটা যে বাংলাদেশের জন্য বিস্মরণযোগ্য ছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এই আসরে বাংলাদেশ শুধু নিজেদের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহই করেনি, টুর্নামেন্টের ইতিহাসে নিজেদের সফলভাবে রান তাড়ারও নতুন নজির রেখেছিল। আর সেটি এসেছিল দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
রাউন্ড রবিন ফরম্যাটের লিগ পর্বে বাংলাদেশের সামনে জয়ের জন্য ৩২২ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাবে চতুর্থ উইকেটে সাকিব আল হাসান ও লিটন দাসের অবিচ্ছিন্ন ১৮৯ রানের জুটিতে ৫১ বল হাতে রেখেই ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ৭ উইকেটের জয় তুলে নেয় টাইগাররা। এটি ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সফলতম ও বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সফলতম রান তাড়ার ঘটনা।
সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ : ২০১১ বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ৫৮ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের মঞ্চে এটাই লাল-সবুজদের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ। ম্যাচটিতে শেষ পর্যন্ত ক্যারিবীয়দের কাছে ৯ উইকেটের পরাজয়ের লজ্জায় ডুবেছিল টাইগাররা।
সবচেয়ে বড় জয় : রানের ভিত্তিতে আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়টি এসেছিল ২০১৫ সালে। গ্রুপপর্বে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে সাকিব ও মুশফিকুর রহিমের ফিফটির বদৌলতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৬৭ রানে অলআউট হয়ে বাংলাদেশ। পরে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা আর সাকিবের দুর্দান্ত স্পেলে আফপগানদের ১৬৭ রানে বেঁধে ফেলে ১০৫ রানের ব্যবধানে জয় পায় তারা।
অন্যদিকে, উইকেটের ভিত্তিতে ২০০৭ সালের আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপে টুর্নামেন্ট ইতিহাসে নিজেদের সবচেয়ে বড় জয় তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। গ্রুপপর্বের বৃষ্টিবিঘ্নিত শেষ ম্যাচে বারমুডাকে ৭ উইকেটে হারিয়েছিল টাইগাররা। ২১ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে টস হেরে ব্যাট করতে নামা বারমুডা ৯ উইকেট হারিয়ে ৯৪ রান করে। জবাবে ২১ বল হাতে রেখেই ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ : ২০১৫ সালে আয়োজিত বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে সেই আসরের অন্যতম আয়োজক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১২৩ বলে অপরাজিত ১২৮ রানের ইনিংস খেলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। হ্যামিল্টনে কিউইদের বিপক্ষে ডানহাতি অলরাউন্ডারের ইনিংসটিতে ছিল ১২টি চার ও তিন ছক্কা। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে এটিই কোনো বাংলাদেশি খেলোয়াড়ের ব্যাক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।
সেরা বোলিং ফিগার : ২০১৯ সালে ইংল্যান্ড আর ওয়েলসে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের সর্বশেষ আসরে আগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে টুর্নামেন্টে পাঁচ উইকেট নেন সাকিব, বিনিময়ে ১০ ওভার বল করে খরচ করেন মাত্র ২৯ রান। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের মঞ্চে এটাই বাংলাদেশির সেরা বোলিং ফিগার। তবে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ দুবার পাঁচ উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। গত আসরেই ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইফার পেলেও যথাক্রমে ৫৯ ও ৭৫ রান গুণেন এই পেসার।
এক আসরে সর্বোচ্চ রান : বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের কৃতিত্ব সাকিব আল হাসানের। ২০১৯ সালে ইংল্যান্ড আর ওয়েলসে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের সর্বশেষ আসরে ৮ ম্যাচে ৮৬.৫৭ গড়ে ও ৯৬.০৩ স্ট্রাইক রেটে ৬০৬ রান করেন এ বাঁহাতি অলরাউন্ডার, যার মধ্যে ছিল ২টি সেঞ্চুরি ও পাঁচটি হাফ সেঞ্চুরি। ২০০৩ বিশ্বকাপে শচীন টেন্ডুলকারের পর দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে এক আসরে সাতটি পঞ্চাশোর্ধ রানের ইনিংস খেলেন সাকিব, সেটিও ভারতের ব্যাটিং গ্রেটের চেয়ে কম ম্যাচ খেলে।
এক আসরে সর্বোচ্চ উইকেট : বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ উইকেটে শিকারের কৃতিত্বটা মুস্তাফিজুর রহমানের। ২০১৯ সালে ইংল্যান্ড আর ওয়েলসে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের সর্বশেষ আসরে ৮ ম্যাচে ২৪.২০ গড়ে ও ৬.৭০ ইকোনমি রেটে ২০ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন এ বাংলাদেশি পেসার। গ্রুপপর্বের শেষ দুই ম্যাচে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট নেন মুস্তাফিজ। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩টি এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২টি করে উইকেট নেন এ ফাস্ট বোলার।
সর্বোচ্চ ডিসমিসাল : আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষে উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন মাত্র দুজন; একজন খালেদ মাসুদ পাইলট ও অন্যজন মুশফিকুর রহিম। এর মধ্যে একদিনের ক্রিকেটের বিশ্বমঞ্চে টাইগারদের হয়ে সর্বোচ্চ ডিসমিসালের রেকর্ডটি মুশফিকের দখলে। এ পর্যন্ত চারবার বিশ্বকাপ খেলে মোট ২৯টি ডিসমিসাল করেছেন তিনি। এর মধ্যে ২০০৭ সালে ৩টি, ২০১১ বিশ্বকাপে ৭টি, ২০১৫ বিশ্বকাপে ৮টি এবং ২০১৯ বিশ্বকাপে ১১টি ডিসমিসাল করেছেন এ উইকেটরক্ষক। মুশফিকের ডিসমিসালগুলোর মধ্যে ২১টি ক্যাচ, ৭টি স্টাম্পিং ও একটি রান আউট।
সর্বোচ্চ ক্যাচ : আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ক্যাচ নিয়েছেন সৌম্য সরকার। বাংলাদেশের পক্ষে ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপ খেলেছেন এ ক্রিকেটার। একদিনের ক্রিকেটের বিশ্বমঞ্চে দুটি আসরে খেলে মোট ১৩টি ক্যাচ তালুবন্দি করেছেন সৌম্য। বিশ্বকাপের মঞ্চে বাংলাদেশের পক্ষে একটি নির্দিষ্ট ম্যাচে সর্বোচ্চ ক্যাচের রেকর্ডটাও তার। ২০১৫ বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে এক ম্যাচে চারটি ক্যাচ নিয়েছিলেন সৌম্য। আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের ইতিহাসে উইকেটরক্ষক ব্যতিত ফিল্ডারদের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট ম্যাচে সর্বোচ্চ সংখ্যক ক্যাচ লুফে নেওয়ার যৌথ রেকর্ডেও অংশীদার সৌম্য।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।