জুমবাংলা ডেস্ক: ভোগ্যপণ্যের বাজারে আরেকদফা বেড়েছে ডিমের দাম। প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকায়। একদিন আগেও প্রতিহালি ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে ডিমের বাজার নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
তবে বাজার স্বাভাবিক করতে ভারত থেকে ডিম আমদানির অনুমতি দিতে চায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও সম্মতি প্রদানে কৃষি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধ করা হবে। নিত্যপণ্যের বাজারে যেকোন পণ্যের দাম বাড়লে এর দায়ভার এসে পড়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর। এ কারণে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও চাপ সামলাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিম আমদানির পক্ষে।
এদিকে, ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার জন্য এ খাতের কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়ী করেছে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি এ্যাসোসিয়েশন।
রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন সংগঠনটির নেতারা। এ জন্য পোলট্রি বোর্ড গঠন ও তার মাধ্যমে পণ্যের দাম নির্ধারণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে পোলট্রি এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, বড় কোম্পানিগুলো ফার্মের মুরগি ও ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। তিনি বলেন, দফায় দফায় মুরগির খাবারের দাম বাড়ছে। কিন্তু খামারিরা যখন পণ্য বিক্রি করতে যাচ্ছেন, তখন ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। তাই প্রান্তিক
খামারিদের টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে অনেক ছোট খামারি ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, ২০০৯ সালে দেশে মুরগি ও ডিম উৎপাদন করে, এমন খামার বা ফার্মের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার। ২০২১-২২ অর্থবছরে তা কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খন্দকার বলেন, কোম্পানিগুলো একটি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা ২৫-৩০ টাকায় উৎপাদন করে। আর বিক্রি করে ৪০ টাকায়। এতে খামারিরা মুরগি পালন করে পোষাতে পারছেন না। পোলট্রি শিল্পের চলমান সঙ্কট নিরসনে পোলট্রি বোর্ড গঠনের প্রস্তাবের পাশাপাশি আরও কিছু দাবি উত্থাপন করা হয়। প্রান্তিক খামারিদের জন্য প্রাণিসম্পদের লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স বা ব্যবসার সনদসহ অন্যান্য সনদ প্রাপ্তি সহজ করা, খামারিদের জন্য সহজ শর্তে ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করা, খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান, খামারিদের বিমার আওতায় আনা ও ডিম সংরক্ষণের জন্য হিমাগার স্থাপনের দাবি জানানো হয়েছে।
নিত্যপণ্যের বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শনিবারের তুলনায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে আমিষের প্রধান উৎস ডিমের দাম। ঢাকায় বসবাসকারী প্রতিটি পারিবারের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় ডিম একটি অপরিহার্য খাদ্যপণ্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। নগরবাসীর ডিম ছাড়া একদিনও চলে না। হোটেল-রেস্তরাঁ ও খাবার দোকানগুলোতে সকালের নাস্তার প্রধান আইটেম এই ডিম। এ কারণে ডিমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বাজারে। দাম বাড়ায় নগরবাসীর জীবনে এর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ভোগ্যপণ্যের বাজারে অস্বস্তি বিরাজ করছে। ডিমের দাম বাড়ায় বাজার করতে গিয়ে কেউ আর স্বস্তি পাচ্ছে না।
সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবির তথ্যমতে, গত কয়েকদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে ডিমের দাম। এ অবস্থায় ডিম আমদানি করে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় ডিম আমদানির অনুমতি দিতে প্রস্তুত। তবে এক্ষেত্রে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি প্রয়োজন।
সংশ্লিষ্টদের মতে, একক সিদ্ধান্তে ডিম আমদানির অনুমতি দিতে পারে না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সম্প্রতি এক আলোচনা সভা শেষে জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিম আমদানির পক্ষে। এ মুহূর্তে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে ভারত থেকে আমদানি করা প্রয়োজন। তবে এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়েল সম্মতি আদায়ে অনুরোধ করা হবে। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও মনে করেন ডিমের চলমান সঙ্কট ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে আমদানি করা যেতে পারে। এতে করে বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে এবং অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজির সুযোগ নিতে পারবে না। উল্লেখ্য, গত কয়েক দশকে দেশে পোলট্রি শিল্পে ব্যাপক বিনিয়োগ হয়েছে। এ কারণে ব্রয়লার মুরগি ও ডিম আমদানির প্রয়োজন হয় না। কিন্তু অসাধু সিন্ডিকেট কর্পোরেট ব্যবসায়ী ও খামার মালিকদের অতি মুনাফা করার কারণে বাজার অস্থির হয়ে পড়ছে।
ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য সুখবর, ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া খোলা যাবে ব্যাংক হিসাব
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।