জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আরেকটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। সম্প্রতি একনেকের বৈঠকে ২৪ হাজার ২৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৬টি নতুন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ খবর শুধু সংখ্যার দিক থেকে নয়, দেশের অর্থনীতি, অবকাঠামো ও সামাজিক কাঠামোর ওপরও এক বিশাল প্রভাব ফেলবে। একনেকে নতুন প্রকল্প অনুমোদন কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক নিদর্শন নয়, বরং এটি দেশের ভবিষ্যতের প্রতি সরকার কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তা বোঝায়।
একনেকে নতুন প্রকল্প অনুমোদন: জাতীয় অগ্রগতির চিত্র
২০২৫ সালের ২০ এপ্রিল পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এই প্রকল্পগুলো অনুমোদিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মূল প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, যার একক ব্যয় প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। এটি বাংলাদেশের সামুদ্রিক বাণিজ্যের সক্ষমতা বহুগুণে বাড়াবে।
Table of Contents
মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারি অর্থায়ন রয়েছে ৩ হাজার ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ ১৬ হাজার ৭১৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৪ হাজার ৪২৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এ ধরনের বিনিয়োগ বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
এই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে দেশের পরিবহন, নগর ব্যবস্থাপনা, পানি সরবরাহ, শক্তি খাত ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে দৃশ্যমান উন্নয়ন হবে। যেমন— ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্প’, ‘চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্প’, ‘SSPIRIT’, এবং ‘LICA’ প্রকল্প ইত্যাদি নগর জীবনমান উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে।
অর্থনীতিতে প্রভাব ও বাস্তবায়নের রূপরেখা
এই অনুমোদিত প্রকল্পগুলো কেবল উন্নয়নের কথা বলছে না, বরং এগুলো বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। যেমন ‘Bangladesh Sustainable Recovery, Emergency Preparedness and Response Project (B-STRONG)’ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের জরুরি প্রস্তুতি এবং পুনরুদ্ধারের সক্ষমতা বাড়বে।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ ও খনিজসম্পদ খাতে ‘তিতাস ও বাখরাবাদ ফিল্ডে দুটি গভীর অনুসন্ধান কূপ খনন’ প্রকল্প এবং ‘বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের খনন সক্ষমতা বৃদ্ধি ও শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্প দেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ‘গ্রিন রেলওয়ে পরিবহন প্রস্তুতিমূলক কারিগরি সহায়তা’ প্রকল্প পরিবেশবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থার দিকেও ইঙ্গিত করে, যা টেকসই উন্নয়নের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এই প্রকল্পগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে PPS সফটওয়্যার ব্যবহার শুরু করা হয়েছে, যার মাধ্যমে প্রকল্প পরিকল্পনা ও অনুমোদন আরও স্বচ্ছ ও গতিশীল হবে।
অবকাঠামো উন্নয়ন ও সামাজিক খাতের অগ্রগতি
একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে অবকাঠামো ও সামাজিক খাতের উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়েছে। ‘নলকা-সিরাজগঞ্জ-সয়দাবাদ আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প’ দেশের সড়ক যোগাযোগে নতুন মাত্রা আনবে। পাশাপাশি, ‘বাংলাদেশ টেলিভিশনের ডিজিটাল টেরিস্ট্রিয়াল সম্প্রচার প্রবর্তন’ গণমাধ্যমের আধুনিকায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘SSPIRIT’ প্রকল্প এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম’ শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পসমূহ
- বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড-এর সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিস্থাপক জাহাজ সংগ্রহ
- নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন পরিচ্ছন্ন কর্মনিবাস নির্মাণ
- ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প
- লালমনিরহাট টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট স্থাপন
- বাংলাদেশ পাওয়ার সিস্টেম রিলায়েবিলিটি অ্যান্ড ইফিসিয়েন্স ইমপ্রুভমেন্ট
টেকসই উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তরের পথ আরও সুগম হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও পরিবেশবান্ধব উদ্যোগেও কিছু প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, যেমন— ‘Air Pollution Monitoring’ প্রকল্প।
এই ধরনের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত জীবনধারা নিশ্চিত করতে পারে।
Wikipedia অনুসারে, পরিকল্পনা কমিশন হচ্ছে সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণকারী সংস্থা যা দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নকে গতি দেয়।
FAQs: একনেকে নতুন প্রকল্প অনুমোদন
একনেকে নতুন প্রকল্প অনুমোদনের উদ্দেশ্য কী?
জাতীয় উন্নয়ন কৌশল বাস্তবায়ন, অবকাঠামো ও সামাজিক সেবার মান উন্নয়ন, এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন এই প্রকল্পগুলোর মূল উদ্দেশ্য।
সবচেয়ে বড় প্রকল্প কোনটি?
চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বে টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি সবচেয়ে বড় প্রকল্প, যার ব্যয় প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা।
এই প্রকল্পগুলো কীভাবে অর্থায়ন করা হচ্ছে?
সরকারি অর্থায়ন, উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর ঋণ, এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নের মাধ্যমে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা কত?
প্রতিটি প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা ভিন্ন, তবে অধিকাংশ প্রকল্প ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে এই প্রকল্পগুলোর সম্পর্ক কী?
এই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো, জ্বালানি দক্ষতা, ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করা সম্ভব হবে, যা টেকসই উন্নয়নের মূল উদ্দেশ্য পূরণে সহায়ক।
এই প্রকল্পগুলো সাধারণ মানুষের জীবনে কী প্রভাব ফেলবে?
যোগাযোগ, শিক্ষা, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহসহ বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।