জুমবাংলা ডেস্ক : অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঋণ জালিয়াতিতে নিমজ্জিত দুর্বল ব্যাংকের পর এবার দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও (এনবিএফআই) একীভূত করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সবল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার চিন্তা করা হচ্ছে।
তীব্র আর্থিক সংকট, উচ্চ খেলাপি ঋণ এবং আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে না পারায় এসব প্রতিষ্ঠান কার্যত মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছে। এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথম ধাপে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থানে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে একীভূত করে এই খাতকে বাঁচানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানায়, মোট ২২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে পুনর্গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। প্রথম ধাপে একীভূত করা হবে ১১টি প্রতিষ্ঠানকে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণের হার ৭৫ থেকে ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত।
এর মধ্যে এফএএস ফাইন্যান্স, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও আভিভা ফাইন্যান্সের মতো প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের হার ৯৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এনবিএফআই খাতে মোট ঋণ বিতরণ হয়েছে ৭৩ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৬ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা বা ৩৫ দশমিক ৫২ শতাংশ ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। গত বছরের শেষে এই হার ছিল ২৯ শতাংশের মতো। অর্থাৎ এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৫৭০০ কোটি টাকা।
এনবিএফআই খাতে সংকটের মূল কারণ হিসেবে দীর্ঘদিনের অনিয়ন্ত্রিত পরিচালনা, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা এবং পরিকল্পিত লুটপাটকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
২০১৭ সালের পর থেকে পি কে হালদার ও এস আলম গ্রুপের মতো বিতর্কিত গোষ্ঠী একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। এতে পুরো খাতটাই ধসের মুখে পড়ে।
এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের পর্ষদ বাতিল করেছে আদালতের মাধ্যমে এবং আভিভা ফাইন্যান্স, এফএএস ফাইন্যান্সসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে। এছাড়া পর্যায়ক্রমে বাকি দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনায়ও পরিবর্তন আনা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এই খাত পুনর্গঠনে আমরা স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কাজ করছি। দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোকে একীভূত করে সংখ্যা কমানো হবে। গভর্নর স্যারের নেতৃত্বে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে সব প্রতিষ্ঠানই সংকটে নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ১৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের হার তুলনামূলকভাবে কম।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ব্যাংকের তুলনায় এই খাতের অবদান কম। তাই সংস্কারের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ব্যাংক খাতেই। তবে এনবিএফআই খাতেও সংস্কার চলছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই খাতকে টিকিয়ে রাখতে হলে সুশাসন, দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও পুনঃঅর্থায়নের বিকল্প নেই।
বিশিষ্ট ব্যাংকার মোহাম্মদ নূরুল আমিন বলেন, ব্যাংকের পর এনবিএফআই গঠনের উদ্দেশ্য ছিল বিশেষায়িত আর্থিক সেবা। কিন্তু তারা একই পণ্যে প্রতিযোগিতায় গিয়ে নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক এই খাতকে সময় দিতে পারে।
আইএমএফের শর্ত মেনে ডলারের দাম বাজারের ওপর ছাড়ল বাংলাদেশ ব্যাংক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।