সাজেদ রহমান : ‘নকশী কাঁথা, ফুলের মেলা, খেজুর গুড়ের যশোর জেলা’Ñ যশোরের খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য আধুনিকায়নের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যেতে বসেছে। যশোরের এ ঐতিহ্য যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য ব্যক্তি উদ্যোগে দীর্ঘ ৮ বছর গবেষণা করেছেন সৈয়দ নাকীব মাহমুদ। তিনি বৃহত্তর যশোরের বিভিন্ন অঞ্চল, বরিশাল ও গাজীপুর থেকে দীর্ঘ ৮ বছর সময় নিয়ে উচ্চ ফলনশীল রস উৎপাদন করে এমন খেজুরের গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে ৮ হাজার খেজুরের চারা উৎপাদন করেছেন। সেই বীজ থেকে চারা তৈরি করে যশোরের বিভিন্ন স্থানে লাগিয়েছেন তিনি।
২০২১ সালের আগস্ট মাসে যশোরের মণিরামপুরের নাগরঘোপ গ্রামে সরকারি জায়গায় দেশীয় উন্নত জাতের সেই চারা রোপণ করেছিলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। এই বাগানে রয়েছে রসবতী-১ ও রসবতী-২ জাতের খেজুর গাছ। আগামী শীত মৌসুমে এই বাগানের কয়েকটি গাছ থেকে রস সংগ্রহ শুরু হবে।
যশোরের জেলা প্রশাসনও এ ব্যাপারে সহযোগিতা করছে। তারা গবেষণার জন্য সরকারি জমি বরাদ্দ দিয়েছে। সেখানেই মূলত এই উচ্চ ফলনশীল খেজুর রসের গাছগুলো লাগানো হয়েছে। প্রতিনিয়ত তা পরিচর্যা করা হচ্ছে।
সৈয়দ নাকীব মাহমুদ বলেন, যশোরে খেজুরের গুড় ও পাটালিই নয় বরং এক সময় চিনিও উৎপন্ন করা হতো। কিন্তু খেজুরের রস ও খেজুর গাছি কমে যাওয়ায় ইটভাঁটি ও অন্যান্য জ্বালানি হিসেবে গাছ বিক্রি করে দেওয়া হয়। ফলে খেজুরের রস ও গুড় কমে যায় এ অঞ্চলে। অন্যদিকে খেজুরের রস থেকে চিনি উৎপাদন করাও বন্ধ হয়ে যায়। এটা দেখে প্রকৃতিপ্রেমী হিসেবে আমার কষ্ট লাগে। তারপর আট বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে মোট আটটি জাতের খোঁজ পাই যেগুলো প্রচুর রস দিয়ে থাকে। বর্তমানে গাছগুলোতে ২-৩ লিটারের বেশি রস পাওয়া যায় না, কিন্তু এই জাতের গাছে ১২ থেকে ১৬ লিটার পর্যন্ত রস পাওয়া যায়। অতিরিক্ত রস পাওয়া যাওয়ায় গাছিরা (খেজুর গাছ থেকে যারা রস সংগ্রহ করেন) অধিক পরিমাণে রস সংগ্রহ করতে পারবেন এবং এটা থেকে খেজুরের গুড় বেশি পরিমাণে পাওয়া যাবে।
৮টি জাতের মধ্যে থেকে তিনি দুইটি জাত আলাদা করে বাছাই করেন। এর নাম দেন রসবতী-১ ও রসবতী-২। রসবতী-১ এর বৈশিষ্ট্য- এক মৌসুমে একটি গাছে প্রায় ৬শ’ লিটার রস পাওয়া যাবে। পূর্ণ মৌসুম যখন শুরু হবে তখন ২৪ ঘণ্টায় একটি গাছে রস পাওয়া যাবে প্রায় ১৬ লিটার। আর রসবতী-২ তে এক মৌসুমে রস পাওয়া যাবে ৫শ’ লিটার। পূর্ণ মৌসুমে ২৪ ঘণ্টায় রস পাওয়া যাবে প্রায় ১২ থেকে ১৪ লিটার। এর আরও একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা হলো দীর্ঘমেয়াদি। এটা ১৫ নভেম্বর থেকে এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত। তবে শেষের দিকে রস দেবে কম।
গবেষক সৈয়দ নাকীব মাহমুদ আরও একটি আশাবাদের কথা জানালেন। তিনি বলেন, গাছিরা সাধারণত দিনে ১৫ টির বেশি গাছে উঠতে পারে না, কষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু আমরা গাছে ওঠার একটি যন্ত্র তৈরির শেষ প্রান্তে আছি। যার ফলে আমাদের গাছিদের গাছে উঠতে কষ্ট হবে না এবং আরও বেশি পরিমাণে গাছে উঠতে পারবেন। যশোরের জেলা প্রশাসক আহরাউল হাচান মজুমদার বলেন, নানা কারণে যশোরের ঐতিহ্য খেজুরের গুড়-পাটালির সংকট তৈরি হয়েছে। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সৈয়দ নাকীব মাহমুদের মাধ্যমে আমরা যশোরে উচ্চ ফলনশীল খেজুর রসের প্রকল্প গ্রহণ করেছি। আগামীতে আমরা জেলার বিভিন্ন জায়গাতেও চারা রোপণের কর্মসূচি হাতে নেব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।