জুমবাংলা ডেস্ক: কাঁচা সবজি থেকে শুরু করে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। সম্প্রতি কাঁচা বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ডিমের দামও। ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি পিস ১০ টাকায় বিক্রি হলেও হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১৭ টাকায়। আর মুরগির ডিম হালি ৪০ টাকা, ডজন ১২০ টাকা। অন্যদিকে হাঁসের ডিম হালি ৭০ টাকা ও ডজন ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, দিনমজুর মানুষের বড় অংশের পছন্দের তালিকায় রয়েছে ডিম। শরীরে প্রয়োজনীয় সুষম খাদ্যের ঘাটতি মেটাতে মাছ ও মাংসের পরিবর্তে ডিম খাচ্ছিলেন, এখন সেই ডিমের দাম আকাশচুম্বি হওয়ায় কপালে ভাঁজ পড়েছে।
বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর একমাত্র ডিমের বড় পাইকারি বাজার তেজগাঁওয়ে অন্যান্য দিনের চেয়ে আজকে তুলনামূলক ডিম সরবরাহ কম। একই চিত্র কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, হাতিরপুল খুচরা বাজারে। ডিমের দাম বাড়ায় দোকানগুলোয় ক্রেতাদের ভিড় ছিল কম।
জানা গেছে, নরসিংদী, গাজীপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, ময়মনিসংহ, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ফার্ম থেকে সারাদিন ডিম সংগ্রহ করে রাতে ডিমের গাড়ি রাজধানী তেজগাঁও ঢোকে। সেখান থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খুচরা ব্যবসায়ীরা ডিম নিয়ে যান। তেজগাঁওয়ে পাইকারি ফার্মের মুরগির ডিম ডজন ১০০ থেকে ১০৫ টাকা, হাঁসের ডিম হালি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা ডিমের ডজন ১০ থেকে ১৫ টাকা লাভে বিক্রি করছেন।
তেজগাঁও পাইকারি ডিম ব্যবসায়ী সোবাহান মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ডিম সংগ্রহ করে তেঁজগাও আনা হয়। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় গাড়ি ভাড়া বেড়েছে। সেতুর টোল ভাড়া বেড়েছে। সড়কে চাঁদাবাজি বেড়েছে। সবমিলে পরিবহন ব্যয় বাড়ায় ডিমের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে উল্টো কথা বলছেন কারওয়ান বাজারের খুচরা ডিম ব্যবসায়ী সাহাবউদ্দিন। তিনি বলেন, বাজারে কাঁচা সবজির দাম বাড়ায় মানুষ ডিম বেশি খাচ্ছেন। ডিমের চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়েছে। কারণ, কাঁচা বাজারের সঙ্গে ডিমের সম্পর্ক রয়েছে। কাঁচা বাজারের দামের সঙ্গে ডিমের দাম ওঠা-নামা করে। এক মাস ধরে বাজারে হাঁসের ডিমের হালি ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারে মুরগির ডিম ১১০ টাকায় বিক্রি হলেও দোকানে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা।
কারওয়ান বাজারে আরেক খুচরা ডিম ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, খুচরা বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের হালি ৪০ টাকা বিক্রি হলেও ১০০ ডিম কিনলে কিছুটা কম দাম পাওয়া যায়। ৮৫০ টাকায় ১০০ ডিম কেনা যায়। সাইজে ছোট হলে ১০০ ডিম কিনতে লাগছে ৮৩০ টাকা। তিনি আরও বলেন, আমরা খুচরা ডিম বিক্রি করছি, যখন পাইকারদের কাছ থেকে ডিম নিয়ে আসা হয় তখন দেখা যায় ১০০ ডিমের মধ্যে কমপক্ষে তিনটি থেকে চারটি ডিম ভাঙা বের হয়। সেজন্য ইচ্ছে করলেও ডিমের দাম রাখার সুযোগ থাকে না।
মহল্লার মার্কেটে ডিমের দাম বেশি হওয়ায় কারওয়ান বাজারে নিয়মিত ডিম কিনতে আসেন লাবণী আক্তার। তিনি বলেন, আমার ছেলে-মেয়েরা ফার্মের মুরগির ডিম পছন্দ করে না সেজন্য নিয়মিত হাঁসের ডিম কিনতে হয়। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই হাঁসের ডিমের দাম আকাশ চুম্মি হয়েছে। এতদিন চার থেকে পাঁচ ডজন করে ডিম কিনতাম, এখন দাম বাড়ায় বাধ্য হয়েই এক ডজন হাঁসের ডিম কিনতে হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডিমের ভোগ ৭ দশমিক ২ গ্রাম থেকে ১৩ দশমিক ৫৮ গ্রাম বেড়েছে।
অন্যদিকে প্রাণিসম্পদ বিভাগের উৎপাদনের তথ্য বলছে, দেশে ২০১০ সালে ডিমের উৎপাদন ছিল ৬০০ কোটি পিস, যা এখন ১ হাজার ৭৩৬ কোটিতে পৌঁছেছে। এক দশকে উৎপাদন প্রায় তিনগুণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদাও বেড়েছে। দেশে প্রতিদিন মুরগি, হাঁস, কবুতর ও কোয়েলের প্রায় পৌনে পাঁচ কোটি ডিম উৎপাদন হয়। পৃথক হিসাবে, কেবল মুরগির ডিম উৎপাদন হয় সাড়ে তিন থেকে চার কোটি। হাঁসের ডিমের সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, দেশে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় ডিমের দাম বেড়েছে। তবে সরকারের সদিচ্ছা থাকলে তিন মাসের মধ্যে ডিমের দাম কমানো সম্ভব। এ ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ে ডিমের উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা নিতে হবে।
বাজারে প্রতিনিয়ত ডিমসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে কিন্তু জনগণ নিশ্চুপ। পণ্যের দামের লাগাম টানতে হলে জনগণকে সোচ্চার হতে হবে। জনগণ সোচ্চার না হলে আগামীতে পণ্যের দাম আরও বাড়বে বলে মনে করেন গোলাম রহমান।
চাল-ডাল-নুন-তেল বিক্রি করা তারকা ‘মুদিওয়ালা’র হাজার কোটি মুনাফার ব্যবসা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।