আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন ধনকুবের জেফরি ইপস্টেইনের বিরুদ্ধে যৌ’ন নিপীড়নের অভিযোগের ব্যাপারে জবানবন্দি দিতে মঙ্গলবার ২৩ জন নারী আদালতে উপস্থিত হন। যুক্তরাষ্ট্রের জেলা জজ আদালতের বিচারক রিচার্ড বারম্যান খোলামেলাভাবে শুনানির জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী, ইপস্টেইনের আইনজীবী এবং ইপস্টেইনের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীদের কথা বলার সুযোগ দেন।
গত ১০ আগস্ট জেফরি ইপস্টেইন আত্মহ’ত্যা করার কারণে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খারিজ করে দেওয়ার আগে গতকালের শুনানিটি ছিল শেষ পদক্ষেপ। জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবারই অনেক নারী প্রথমবারের মতো নিজেদের অভিযোগ ক্রিমিনাল আদালতে জানাতে পেরেছেন। অনেক নারীই দাবি করেছেন, তাদের অভিযোগের ব্যাপারে যেন তদন্ত সাপেক্ষে সিদ্ধান্তে আসা হয়।
ভার্জিনিয়া রবার্ট জেফরি নামের এক নারী অভিযোগ করেছেন, তার যখন কেবল ১৮ বছর বয়স; ওই সময় জেফরি ইপস্টেইন তার বন্ধুদের সঙ্গে বিছানায় যেতে ওই নারীকে বাধ্য করেছেন। সেই নারীর দাবি, (আত্মহ’ত্যার কারণে) পাওনা মিটে যায়নি। এটা (বিচারকার্য) চলতে থাকা দরকার। কারণ, তিনি (অভিযুক্ত) একা এসব করেননি, আমরা ভুক্তভোগীরা সেটা জানি।
সারাহ র্যানসাম নামের আরেক নারীর অভিযোগ, তাকে দিয়েও যৌ’ন ব্যবসা করিয়েছেন ইপস্টেইন। এই নারীও অনুরোধ জানিয়েছেন, এই মামলা যেন চালিয়ে যাওয়া হয়।
ধ’র্ষণের অভিযোগ ওঠার পর গত ১০ আগস্ট আত্মহ’ত্যা করেন জেফরি ইপস্টেইন। এর আগে ২০০৮ সালে ফ্লোরিডার আদালতে হালকা মাত্রার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন জাফরি। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর পদক্ষেপের ব্যাপারে নিউইয়র্কের আইনজীবীরা বেজায় চটেছেন। ফলে শেষাবধি জেফরি মারা যাওয়ার পর সিদ্ধান্ত হয়, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, ওই ব্যাপারে খোলামেলাভাবে শুনানি হবে।
বিচারকও মনে করেন অমীমাংসিত ওই ইস্যুতে অন্তত একদিন বৈধভাবে শুনানি হওয়া দরকার। আর সেটা খুব শিগগিরই চাচ্ছিলেন তিনি। তবে, অভিযুক্তের আইনজীবী দাবি করেছিলেন, তার মক্কেলের আত্মহ’ত্যার বিষয়টির দিকে আলোকপাত করা হোক। সেই আত্মহ’ত্যার পেছনে আসলে কারা দায়ী, সেটাও উদঘাটনের আবেদন জানান তিনি।
জানা গেছে, মার্কিন বিচার বিভাগ এবং এফবিআই জেফরির আত্মহ’ত্যার বিষয়টি তদন্ত করছে। এরই মধ্যে নিউইয়র্ক সিটি মেডিক্যালের চিকিৎসকরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, জেফরি আত্মহ’ত্যা করেছেন। সে কারণে তার মৃ’ত্যু যে আসলে হ’ত্যা না, তা আদালতের কাছেও অনেকটাই পরিষ্কার। আর সে কারণেই শুনানির আয়োজন করা হয়।
আড়াই ঘণ্টার ওই শুনানিতে একের পর এক ভুক্তভোগী নিজেদের জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে কয়েকজন নারী নিজেদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া বিষয়টি মুখে না বলে লিখে দিয়েছেন। এমনকি প্রায় ১২ জন নিজেদের পরিচয় জনসম্মুখে প্রকাশ করতে রাজি হননি।
জানা গেছে, জেফরি ইপস্টেইন ৫৭৭ মিলিয়ন ডলারের সম্পদ রেখে গেছেন। এরই মধ্যে স্বতন্ত্রভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন পাঁচজন নারী। তবে মামলার শুনানির সময় অবশ্য জেফরির সম্পদের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
অ্যাটনি ব্র্যাড এডওয়ার্ড আদালতকে বলেন, আদালত কক্ষে তিনি ১৫ জন ভুক্তভোগীকে উপস্তিত করেছেন। আরো এমন ২০ জন রয়েছেন, যারা আদালতে হাজির হতে চাননি। আর অন্য আটজন নারী নিজের থেকে আদালতে গিয়ে অভিযোগ করেছেন।
তিনি আরো বলেন, এরকম পরিস্থিতিতে মামলাটি নিষ্পত্তি করে দিলে ভুক্তভোগীরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবে। এছাড়া আরো যে পাঁচজন নারী মামলা করেছেন, তাদেরও মামলার শুনানি হওয়া দরকার। এজন্য তিনি মামলার শুনানির জন্য পরবর্তী তারিখ নির্ধারণের জন্য বিচারকরে প্রতি অনুরোধ জানান।
১৪ জন নারী সেখানে উপস্থিত হয়ে কথা বলেছেন। তাদের মধ্যে ১০ জন নিজেদের প্রকৃত নাম উল্লেখ করেছেন। এমনকি প্রথমবারের মতো পাবলিক পরিসরে তারা অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলেছেন।
ওইসব নারীরা জেফরির বিরুদ্ধে যৗ’ন হয়রানি, ধ’র্ষণ এমনকি দেহ ব্যবসা করানোর অভিযোগ তুলেছেন। পাঁচজন নারী বলেছেন, জেফরি যখন তাদের ধ’র্ষণ করেছেন, ওই সময় তারা কিশোরী ছিলেন। ওই নারীদের অভিযোগ, জেফরির খ্যাতি এবং অর্থের দাপটের কারণে এসব অপরাধ করা থেকে তাকে বিরত রাখার শক্তি তারা পাননি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।