রঞ্জু খন্দকার ও হেদায়েত উল্লাহ সৌখিন, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে: দেশের আর দশটা গ্রামের মতো শুধু ছায়াঢাকা, পাখিডাকা নয়। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণপুর ছয়ঘরিয়া যেন চারা আর ফুলে-ফলে ঢাকা এক নার্সারিগ্রাম। এ গ্রামে এখন সব মিলিয়ে প্রায় ৭০টি নার্সারি রয়েছে।
কৃষ্ণপুর ছয়ঘরিয়া গ্রামটি উপজেলা শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে গুমানীগঞ্জ ইউনিয়নে। এ গ্রামের ৩০-৩৫ জন কৃষক গড়ে তুলেছেন নার্সারিগুলো। এসব নার্সারিতে কাজ করে খাচ্ছেন কয়েক শ’ কর্মী। এ গ্রাম থেকে চারা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।
সম্প্রতি উপজেলা শহর থেকে পিচঢালা পথ ধরে ওই গ্রামে ঢুকে দেখা যায়, চারপাশটা গাছের চারায় ছাওয়া নার্সারিতে ঢাকা। কোনো নার্সারিতে ফুটে আছে বাহারি ফুল। কোথাও ফলদগাছের কচি চারা। নার্সারিতে কাজ করছেন অনেকে।
কথা হয় মাইশা নার্সারির মালিক মো. খোকন মিয়ার সঙ্গে। তিনি ৫ বিঘা জমিতে নার্সারি করেছেন।
খোকন জানান, তিনি ২০১৩ সালে ৩ বিঘা জমিতে নার্সারি শুরু করেন। এখন বছরে তাঁর উপার্জন ৩ লাখ টাকা প্রায়। তাঁর নার্সারিতে সবসময় ৪ থেকে ৫ জন কর্মী কাজ করেন।
এ গ্রামের পলাশ নার্সারির মালিক সাঞ্জু শেখ। তাঁর জমির পরিমাণ ৬ বিঘা। তিনি নার্সারি শুরু করেন ২০১৪ সালে। এখন উপার্জন প্রায় আড়াই লাখ। তাঁর শ্রমিক ৫ জন।
ভাইভাই নার্সারির মালিক মো. রানা মিয়া ২০১৪ সালে ৩ বিঘা জমিতে নার্সারি শুরু করেন। তিনি জানান, এখন তাঁর জমির পরিমাণ ৬ বিঘা। উপার্জন বছরে প্রায় ৩.৫ লাখ টাকা। তাঁর এখানেও শ্রমিক ৫ জন।
মায়ের দোয়া নার্সারির মালিক মো. অসীম মিয়া। তাঁর জমির পরিমাণ ২৫ বিঘা। এখানে শ্রমিক ২৫ জন। তিনি ১৯৯০ সালে নার্সারি শুরু করেছিলেন।
গ্রামে হাঁটতে হাঁটতে দেখা যায় খেজুরচারার নার্সারিও। এটি নার্গিস নার্সারির মালিক জাহিদুল ইসলামের। কথা হয় তাঁর ছেলে মো. নাসিমুল ইসলামের সাথে।
নাসিমুল জানান, প্রায় ৩ যুগ আগে এ গ্রামের প্রথম নার্সারিটি প্রতিষ্ঠা করেন তাঁর বাবা। তাঁদের দেখাদেখি পুরো গ্রামই এখন নার্সারিতে ভরে গেছে।
নাসিমুল বলেন, এখন ১৫-২০ জন শ্রমিক নিয়ে নার্সারি দেখাশোনা করেন। প্রায় সব ধরনের ফলের গাছের চারাই উৎপাদন করেন তাঁরা।
শুরুতে এক বিঘা জমিতে নার্সারি করেছিলেন জাহিদুল ইসলাম। মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আজ তিনি প্রায় ২২ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ফল ও চারার নার্সারির রাজ্য গড়ে তুলেছেন। জাহিদুল তাঁর স্ত্রী নার্গিসের নামে নার্সারির নামকরন করেছেন।
জাহিদুল ও নার্গিসের সন্তান নাসিমুল জানান, তাঁদের নার্সারিতে রয়েছে মিয়াজাকি, সূর্যডিম, কিং অব চাকাপাত, চ্যাংমাই, ব্রুনাই কিং, রারি ৪, বানানা ম্যাংগোসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন আমগাছের চারা। রয়েছে লটকন, রাম্বুটান, মাল্টা, কমলা,আপেল, ডুরিয়ান, সুপারি, নারকেলসহ নানা ফলগাছের চারা।
নাসিমুল বলেন, স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি তাঁরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চারা বিক্রি করেন। প্রতি বছর চারা ও ফল বিক্রি করে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আয় করেন তাঁরা।
নাসিমুলের সঙ্গে কথা বলতে বলতে সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হয়ে রাত নামে। ততক্ষণে কয়েকটি ট্রাক ভরে গেছে চারাগাছে। এগুলো দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হবে।
ট্রাকগুলো বের হয়ে যাচ্ছিল নার্গিস নার্সারি থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে। আমরাও ফিরছিলাম আমাদের গন্তব্যে। পেছনে চারা আর ফুলে-ফলে ঢাকা বিস্তীর্ণ নার্সারিগ্রাম কৃষ্ণপুর ছয়ঘরিয়া।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।