আসাদুজ্জামান নূর আওয়ামী লীগের সময় সাবেক সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রী ছিলেন। বছরে আনুমানিক ৪ হাজার কোটি টাকার বিজ্ঞাপনের বাজারের ৮০ শতাংশ দখল তার কাছেই ছিল। এশিয়াটিক গ্রুপকে সাথে নিয়ে তিনি এটি দখলে রেখেছিলেন। এশিয়াটিক গ্রুপ হচ্ছে আলী যাকের পরিবারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান।
একটি বা দুইটি নয় বরং ১৭ টি ভিন্ন ভিন্ন নামে দেড় দশকে বিজ্ঞাপনের বাজারকে কুক্ষিগত করে রাখা হয়। বিজ্ঞাপনের এই বিশাল বাজার দখলে রেখে মূলত দেশের গণমাধ্যমগুলোকে পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে এশিয়াটিক গ্রুপের বিরুদ্ধে।
বিজ্ঞাপনের বাজার যেন এশিয়াটিক গ্রুপের দখলে থাকে সেজন্য বহুজাতিক গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তারা সহযোগিতা করেছেন। শেখ হাসিনার আমলে অনেক বিজ্ঞাপনী সংস্থাকে জোর করে বের করে দেওয়া হয়েছিল, এ ধরনের অভিযোগ আনা হয়। ২০১৫ সালে কোম্পানির বিজ্ঞাপনী সংস্থা ক্যারেটের ব্যবসা বন্ধ করে দেয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়।
এ বিজ্ঞাপনী সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, তারা সরকার বিরোধী কর্মকান্ডে যুক্ত রয়েছে এবং জঙ্গিবাদে অর্থায়ন করছে। এরপর এশিয়াটিক গ্রুপ বাংলালিংক এর বিজ্ঞাপনের কাজ নিয়ে যায়। কিছুদিন পরেও বাংলালিংক এর টপ অফ মাইন প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা হাতিয়ে নেয় এশিয়াটি গ্রুপ।
এ বিষয়ে বাংলালিংকের কথা হচ্ছে যে, তারা স্বচ্ছতা বজায় রেখে কাজ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। পাশাপাশি তারা কোন নীতিমালা ভঙ্গ করেনি। ২০১৬ সালে ইউনিলিভার থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয় মার্কেট এক্সেস। এটি মার্কেটিং সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান।
ওই সময় তথ্য প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তারানা হালিম। তার চাপের কারণে বিজ্ঞাপনের দায়িত্ব দেওয়া হয় এশিয়াটিক গ্রুপকে। এর আগে banglalink থেকে মার্কেট এক্সেসকেই বিদায় করে দেওয়া হয়। বাংলালিংকে কর্মরত ফাজলে নূর তাপসের এক বন্ধু চাপ দিয়ে এ সকল কাজ করতে সহযোগিতা করেন।
ওই কর্মকর্তা এখনো বাংলালিংকে নিয়োজিত রয়েছেন। তারানা হালিম সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছেন যেন এশিয়াটিক গ্রুপের কাছেই বিজ্ঞাপনের সকল কাজ থাকে। পাশাপাশি সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ পলক এবং আসাদুজ্জামান নূর এ বিষয়ে সহযোগিতা করেন।
এক অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে যে, এশিয়াটিক গ্রুপ দেশের বিজ্ঞাপনের বাজারের ৮০ শতাংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলো। বিজ্ঞাপনের বাজার যেন এশিয়াটিক গ্রুপের দখলে থাকে সেজন্য বহুজাতিক গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তারা সহযোগিতা করেছেন। ওই সময় তথ্য প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তারানা হালিম। তার চাপের কারণে বিজ্ঞাপনের দায়িত্ব দেওয়া হয় এশিয়াটিক গ্রুপকে।
তারানা হালিমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা দুইটি ফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। পলক এবং নূর জেল হাজতে থাকায় তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, নানা অসৎ উপায় অবলম্বন করে এশিয়াটিক গ্রুপ বিজ্ঞাপনের কাজ নিজের দখলে রাখতো।
এ গ্রুপ ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়ে কমপক্ষে 17 টি গ্রুপ তৈরি করেছে। প্রকাশনা, সৃজনশীলতা, মার্কেটিং সহ যাবতীয় কাজ যেন নিজেরাই করতে পারে সেজন্য এতগুলো কোম্পানি খোলা হয়েছে। এশিয়াটিক গ্রুপ ও নিজেদের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞাপনী সংস্থা হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করত।
বর্তমানে বিজ্ঞাপনের বাজারে সৃজনশীলতা, মিডিয়া প্ল্যানিং, জনসংযোগ সহ নানা কাজের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এশিয়াটিক গ্রুপ ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়ে সব ধরনের কাজ করে যাচ্ছে। নানা কৌশল অবলম্বন করে অন্য কোম্পানিদের বের করে দিত তারা।
তাদের অধীনে থাকা অন্য কোম্পানী হল এশিয়াটিক সোশ্যাল, এশিয়াটিক টকিং পয়েন্ট, মাইন্ড শেয়ার বাংলাদেশ, এমবিএ, ওয়েব মেকার, ব্ল্যাক বোর্ড স্ট্রাটেজিস, এশিয়াটিক এক্সপেরিমেন্টাল অপটিমাল সার্ভিস। এর বাইরে অন্য নামেও তাদের কোম্পানি রয়েছে।
তাদের অরাজগতা নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন একটি টেলিভিশন চ্যানেলের শীর্ষ কর্মকর্তা। তিনি এশিয়াটিক গ্রুপের পক্ষে অনৈতিক কাজ কর্মের ব্যাখ্যা দেন। তারা একই সাথে গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংকের বিজ্ঞাপনের কাজ করতো।
তারা একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানির নাম নিয়ে বিজ্ঞাপনের নানা কাজ করতো এশিয়াটিক গ্রুপ। গুটি কয়েক কোম্পানির হাতে বিজ্ঞাপনের বাজার চলে গেলে অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়। আমাদের দেশে দীর্ঘদিন ধরে সেটাই চলেছে।
আলী যাকের মারা যাওয়ার পর আসাদুজ্জামান নূর এসে এশিয়াটিক গ্রুপের দায়িত্ব নেন। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর এশিয়াটি গ্রুপ থেকে আসাদুজ্জামান নূরকে সরিয়ে দেওয়া হয়। গত বছরের অগস্ট মাসে এশিয়াটি গ্রুপের সব শেয়ার ছেড়ে দেন আসাদুজ্জামান নূর, এমনটাই শোনা গেছে।
তবে এসব শেয়ার কারা কিনেছে এবং কত তারিখে তা সম্পাদন করা হয়েছে তা তাদের পক্ষে বলা হয়নি। বর্তমানে এশিয়াটিক গ্রুপের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছে আলী যাকেরের স্ত্রী সারা যাকের। আসাদুজ্জামান নূরের সন্তান সুদীপ্ত সেই গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
আলী যাকের মারা যাওয়ার পর আসাদুজ্জামান নূর এসে এশিয়াটিক গ্রুপের দায়িত্ব নেন। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর এশিয়াটি গ্রুপ থেকে আসাদুজ্জামান নূরকে সরিয়ে দেওয়া হয়। গত বছরের অগস্ট মাসে এশিয়াটি গ্রুপের সব শেয়ার ছেড়ে দেন আসাদুজ্জামান নূর, এমনটাই শোনা গেছে।
তবে এসব শেয়ার কারা কিনেছে এবং কত তারিখে তা সম্পাদন করা হয়েছে তা তাদের পক্ষে বলা হয়নি। বর্তমানে এশিয়াটিক গ্রুপের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছে আলী যাকেরের স্ত্রী সারা যাকের। আসাদুজ্জামান নূরের সন্তান সুদীপ্ত সেই গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে যেমন খুনের অভিযোগ রয়েছে তেমনি এশিয়াটিক গ্রুপের মাধ্যমে মিডিয়া শাসন করার অভিযোগও রয়েছে। কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন বিল আটকে দিয়ে গণমাধ্যমকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখত এশিয়াটিক গ্রুপ।
কম মূল্যে বিজ্ঞাপন পাবলিশ করতে গণমাধ্যমকে বাধ্য করা হতো হাসিনার আমলে। এর ফলে বিজ্ঞাপন সংখ্যা বাড়লেও আয় কমেছে সকল মিডিয়ার। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অনেক মিডিয়া। তিনি টিভি চ্যানেল বা পত্রিকা বয়কট করার মাধ্যমে তাদের চাপে রাখতেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেলের শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, এশিয়াটিক গ্রুপের ওসব বড় ধরনের চাপ তাদের পক্ষে উপেক্ষা করা সম্ভব হতো না। শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি দেশে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আওয়ামী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরআই।
প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার তত্ত্বাবধানে এটি পরিচালিত হতো এবং বিরোধী মতাদর্শের লোকদের বিরুদ্ধে কর্মীদের দমনের সব ধরনের নকশা হতো এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। তারা বিএনপি ও জামাতের বিরুদ্ধে চালাতো মিথ্যা প্রচারণা।
এশিয়াটিক গ্রুপের সাথে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরআই এর যোগাযোগ ছিল। জাকের পুত্র ইরেশ জাকের নানা চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে গণমাধ্যম নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখত। সরকারি নানা মিডিয়া এবং বিজ্ঞাপনের বাজার নিজের দখলে রাখেন ইরেশ যাকের।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রাজনাধ কোভিন্দ স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশে এসেছিলেন। সে সময় দেশে যত ইভেন্ট আয়োজন করা হয় তার কাজ সবই এশিয়াটিক গ্রুপ পায়। এশিয়াটি গ্রুপ হচ্ছে আলী যাকের পরিবারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশের সবথেকে বড় বাজেটের কাজ ছিল স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ইভেন্ট এ নরেন্দ্র মোদিক কেন্দ্র করে। আওয়ামী লীগের রিসার্চ ইন্সটিটিউটকে সঙ্গে নিয়ে সেসব কাজ সম্পাদন করেন আলী যাকেরের পুত্র ইরেশ যাকের।
আলী যাকের মারা যাওয়ার পর আসাদুজ্জামান নূর এসে এশিয়াটিক গ্রুপের দায়িত্ব নেন। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর এশিয়াটি গ্রুপ থেকে আসাদুজ্জামান নূরকে সরিয়ে দেওয়া হয়। গত বছরের অগস্ট মাসে এশিয়াটি গ্রুপের সব শেয়ার ছেড়ে দেন আসাদুজ্জামান নূর, এমনটাই শোনা গেছে।
একটি দরপত্র থেকে দেখা যায় যে, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে শুধু গণপূর্ত অধিদপ্তরের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগে ৯৮ কোটি ৫১ হাজার টাকা বিল নেয় এশিয়াটি গ্রুপ যা অস্বাভাবিকভাবেই বেশি। এ বিষয়ে এশিয়াটিক গ্রুপ দাবি করে যে, ইরেশ যাকের কখনোই সিআরআই এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না।
তারা আরও দাবি করেন যে, রেহানা পুত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির সঙ্গে কোন যোগাযোগ ছিল না ইরেশ যাকেরের। তারা আরও দাবি করে যে, বাধ্যকতা মেনেই ওই সময় মুজিব শতবর্ষ এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে সব ইভেন্ট আয়োজন করে এশিয়াটিক গ্রুপ।
তবে অনুসন্ধান করে দেখা যায় যে, ববির সঙ্গে ইরেস যাকেরের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। ববির পারিবারিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ইরেশ যাকেরকে দেখা যেত। শেখ হাসিনার পরিবারের কোন অনুষ্ঠানে দাওয়াত পাওয়া খুব কম সংখ্যক মানুষের কপালেই জুটেছে।
ইরেশ যাকের তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। জয় বাংলা কনসার্টের সময় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রচারণার সকল কাজ করেছে এশিয়াটিক গ্রুপ। নির্বাচনের সময় দেশে ও বিদেশে শত শত কোটি টাকা খরচ করে আওয়ামী লীগের উন্নয়নের প্রচারণা করতে এশিয়াটিক গ্রুপ। বিদেশে এ সকল কাজ করার জন্য লবিস্ট নিয়োগ করত এশিয়াটিক গ্রুপ।
গত জাতীয় নির্বাচনের আগে মুজিব সিনেমার সকল ধরনের প্রচারণার কাজ এশিয়াটিক গ্রুপ করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন বহুজাগতিক কোম্পানির বিজ্ঞাপনের কাজ এখনো পর্যন্ত এশিয়াটিক গ্রুপের কব্জায় রয়েছে।
ভারতের সহযোগিতা থাকায় গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক, বিকাশ, কোকাকোলা, ডানো, কোলগেট সহ বড় বড় বিজ্ঞাপনের বাজার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে তারা। এ নিয়ে এশিয়াটিক গ্রুপের ব্যাখ্যা হচ্ছে, দেশি এবং বিদেশি কোম্পানির বিজ্ঞাপনের বাজার অবৈধ উপায়ে নিজেদের দখলে রাখার অভিযোগ ভিত্তিহীন অবাস্তব।
সাবেক আইজিপি বেনজীরের প্রভাবে ক্রিকেট বোর্ডের প্রচারণার কাজ নিজের দখলে রাখার অভিযোগকে মিথ্যা বলেছেন কোম্পানিটি। কোন ধরনের দরপত্র ব্যতীত পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে অনুষ্ঠিত সমাপনী অনুষ্ঠানের জনসংযোগের কাজ করেছে এশিয়াটিক গ্রুপ।
এতে খরচ হয়েছিল পাঁচ কোটি টাকা। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রচারণার দায়িত্ব পেয়েছিল এশিয়াটিক গ্রুপ। আসাদুজ্জামান নূর এবং ইরেশ যাকেরের প্রভাবে এ দুটি কাজ তারা ভাগিয়ে নেয়। তবে এশিয়াটিক গ্রুপ জানায় যে, যথাযথ সব নিয়ম মেনে তারা এ দুটি কাজ সম্পাদন করেছে। এখানে তারা কোন অনিয়ম করেনি।
বাংলাদেশে বহুজাগতিক কোম্পানির একটি বড় অংশের শীর্ষ পদে রয়েছে ভারতীয় নাগরিকরা। আর এদের সহযোগিতায় বিজ্ঞাপনের বাজার সহজে নিয়ন্ত্রণ করত এ এশিয়াটিক গ্রুপ। কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে পেপসি, রবি, টাটা, কোকাকোলা, colgate, হিমালয়া, ডাবর ইত্যাদি।
এশিয়াটিক গ্রুপের সহযোগিতায় 2000 সালে যাত্রা শুরু করে এশিয়াটিক মাইন্ড শেয়ার লিমিটেড। তারা মূলত দেশের কোম্পানির বিজ্ঞাপনের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।
গ্রুপ এমএ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোরশেদ আলম গত বছর ৫ মার্চ প্রথম আলোর এক সাক্ষাৎকারের দাবি করেন যে, হ্যাঁ আমাদের প্রতিষ্ঠান বেশ বড়। এখন সত্তর শতাংশ বাজারের হিস্যা আমাদের। আমরা একদিকে গ্রাহকের জন্য মিডিয়ার প্ল্যান করেছি, কোথায় এবং কোন মিডিয়ার কোন স্টাইলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়া উচিত এবং যেসব বিষয় মাথায় রাখা উচিত এ বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছি আমরা।
কী কী কোম্পানি তাদের দখলে আছে তা জানিয়েছিলেন মোরশেদ আলম। বহুজাগতিক কোম্পানির অধিকাংশের সঙ্গে আমরা কাজ করেছি। এর মধ্যে ইউনিলিভার, গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক, কোকাকোলা, নেসলে, ডাবর, দারাজ, বিকাশ কোলগেট, হুন্ডা অন্যতম।
দেশি ব্র্যান্ডের মধ্যে মেঘনা গ্রুপ, ইফাদ, ওয়ালটন অন্যতম। বর্তমান বাজারে ৭০% কোম্পানির সঙ্গে আমরা যুক্ত। তবে প্রতিযোগী অন্যান্য কোম্পানির দাবি অনুযায়ী ৮০ পার্সেন্ট কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে এশিয়াটিক গ্রুপ।
এশিয়াটিক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্রুপ এমএ এমডি মোরশেদ আলম বলেন, মিডিয়া বায়িং এবং প্ল্যানিং সংক্রান্ত কাজের জন্য চারটি কোম্পানি কাজ করছে। এছাড়া ইনফ্লুয়েন্সার ম্যানেজ করার জন্য তদারকিতে রয়েছে তাদের আরো একটি কোম্পানি।
এ পাঁচটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করছে মোরশেদ আলম। তিনি জানান সবগুলো কোম্পানিতে নিজের মাইনরিটি শেয়ার রয়েছে। এসব কোম্পানির অন্য মালিকরা হলেন, আসাদুজ্জামান নূর, সারা যাকের, ইরেশ যাকের, শ্রেয়া যাকের।
৫ আগস্ট এর পর সারা যাকেরের চেয়ারম্যান হওয়ার বিষয়টি তিনি জানান। মোরশেদ আলম উল্লেখ করেন, তিনি চেয়ারম্যান হওয়ার আগে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আসাদুজ্জামান বর্তমানে কোম্পানিগুলোর চেয়ারম্যান পদে আর নেই।
পাশাপাশি তিনি পরিচালনা পর্ষদের বাইরে রয়েছেন। তিনি শুধু কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার হিসেবে কার্যকর রয়েছেন। বিজ্ঞাপনের কাজের সৃজনশীলতার বিষয়টি দেখে এশিয়াটিক মার্কেটিং কমিউনিকেশনস লিমিটেড। এ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন ফেরদৌস হাসান।
তবে মালিকানায় আসাদুজ্জামান নূর, সারা জাকের, ইরেশ যাকের রয়েছেন। মোরশেদ আলম জানান, পাঁচ আগস্টের পর চেয়ারম্যানের পর থেকে ও পরিচালনা পর্ষদ থেকে আসাদুজ্জামান নূরকে বাদ দেওয়া হয়।
পাশাপাশি সারা যাকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ইভেন্ট এবং অ্যাক্টিভেশন এজেন্সি হিসেবে এশিয়াটিক ইএক্সপি লিমিটেডের কথা উল্লেখ করেন মোরশেদ আলম।
তিনি জানান, এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন ইরেশ যাকের। তবে মালিকানায় রয়েছেন আসাদুজ্জামান নূর, সারা জাকের,, শ্রেয়া যাকের, ফেরদৌস হাসান। আসাদুজ্জামান নুরকে এ কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
জনসংযোগ সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুটি এজেন্সের নাম উল্লেখ করেন মোরশেদ আলম। তারাও এশিয়াটিক গ্রুপের সদস্য। ইকরাম মইন চৌধুরী এ দুটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। যার হাতে রয়েছে কোম্পানি দুইটির মাইনোরিটি শেয়ার।
এ দুটি এজেন্সি হচ্ছে ফর থট পিআর, ব্ল্যাকবোর্ড পিআর। এখানেও মালিক হিসেবে রয়েছেন আসাদুজ্জামান নূর, সারা যাকের, ইরেশ যাকের প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। এখানেও পাঁচ আগস্ট ২০২৪ এর পর আসাদুজ্জামান নূরকে সরিয়ে সারা যাকেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।
আসাদুজ্জামান নূর পরিচালনা পর্ষদ থেকেও অব্যাহতি প্রাপ্ত হন। শুধু কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার হিসেবে এখনো রয়ে গেছেন। বাংলাদেশের বাইরে আরব আমিরাতে বা অন্য কোন দেশে এশিয়াটিক গ্রুপের মালিকানাধীন কোন কোম্পানি কার্যকর আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, এ বিষয় তিনি পুরোপুরি অবগত নন।
অ্যাফিলিয়েট এজেন্সি হিসেবে প্রিন্সিপালগুলোকে রয়ালটি বা ফি হিসেবে অর্থ পরিশোধ করে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা অডিট সাপেক্ষে নিয়মিত রয়ালটি বাবদ অর্থ পরিশোধ করেন। কীভাবে সেই অর্থ পরিশোধ করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনে প্রচলিত আইনে তারা অর্থ পরিষদ করেন।
মোরশেদ আলমকে হোয়াটসঅ্যাপ এর মাধ্যমে অনুরোধ করা হয়েছিল এশিয়াটিক গ্রুপের চেয়ারম্যান সারা জাকের, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইরেশ জাকের, এশিয়াটিক এমসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফেরদৌস হাসান, তাদের সাক্ষাৎ বা ফোনে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য তবে তিনি জানেন এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে জানানো হবে।
সোর্স: ডেইলি আমার দেশ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।