মাহবুব কবির মিলন : কানাঘুষা শুনছি চায়না থেকে নাকি বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিগুলো মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। আমেরিকা চায়না কনফ্লিক্ট এর বড় একটি কারণ হতে পারে। যদি তাই হয়, তাহলে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রায় সব দেশগুলো মুখিয়ে থাকবে এই সুযোগ নেয়ার জন্য। ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, ভারত, মালদ্বীপ, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ইত্যাদি। তো হোয়াট এবাউট বাংলাদেশ?
বিনিয়োগে বিশ্বে একটি কথা বা র্যাংকিং ইন্ডেক্স চালু আছে,”Ease of doing business”। মানে কোন দেশে ব্যবসা করা কত সহজ। কেউ ব্যবসা শুরু করতে চাইলে সে দেশের সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা থেকে অনুমতি, কাগজপত্র, জমি কেনা ইত্যাদি করতে কত দিন বা কত সহজে নেয়া যায়, তার একটা আন্তর্জাতিক র্যাংকিং ইন্ডেক্স আছে। সেটা দেখে বিনিয়োগকারীরা সহজে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তারা কোন দেশে যাবে।
উইকিপিডিয়ায় দেয়া র্যাংকিং অনুযায়ী ১৯০ দেশের মধ্যে ২০২০ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৮ নাম্বারে। হতবাক হবার বিষয় ২০১০ সালে আমাদের র্যাংকিং ছিল ১১৯ নাম্বারে। তারমানে এই ১১ বছরে আমরা অনেক নিচে নেমে গিয়েছি। আমাদের এখানে ব্যবসা করা অনেক কঠিন এখন, সেই ইন্ডেক্স অনুসারে।
নেপাল, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভারত, পাকিস্তানও আমাদের অনেক অনেক উপরে। ভিয়েতনাম ২০১০ সালে ছিল ৯৩, ২০২০ সালে এসে বিশ্ব র্যাংকিং এ সে ৭০ নাম্বার সিরিয়ালে। দঃ পূর্ব এশিয়ার সব দেশ এগিয়েছে, শুধু আমরা ছাড়া।
আমি ২০১০ সাল থেকে বহু বছর বিনিয়োগ বোর্ডে ছিলাম, যা এখন বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নামে পরিচিত। তখন থেকেই দেখেছি, ঢাকায় বহু চেষ্টা করেও একটি ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু করা যায়নি আজ পর্যন্ত। বিনিয়োগকারীরা যাতে এসে অফিসে অফিসে দৌড়াতে বা হ্যারাসমেন্টের স্বীকার হতে না হয়। তারা যেন এক ডেস্ক থেকে অতিদ্রুত কোম্পানি রেজিষ্ট্রেশন, জমির ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, ট্রেড লাইসেন্স, টিন, পরিবেশ সারর্টিফিকেট বিনা কষ্টে অতিদ্রুততম সময়ে পেয়ে কারখানা চালু করতে পারে।
কিন্তু আজ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। সব অফিসে একজন করে কর্মকর্তা বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তপক্ষে প্রেষণে প্রেরণের জন্য বারবার পত্র দেয়া হয়েছে। আমি শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের দুইজন জয়েন্ট ডাইরেক্টর দেখেছি ঢাকা বিডা অফিসে। আর কেউ আসেনি। কেউ আসে না। কারণ এটা ক্রীম পোস্টিং নয়। এখানে পোস্টিং দেয়া হলে, অনেকের এক্সট্রা কামাইয়ের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে।
চট্টগ্রামে বিনিয়োগ বোর্ডের কাজ করে দিতাম একদিনে। অনেককে সামনে চেয়ারে বসে। কিন্তু অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী অন্য অফিস ঘুরে আসার পর, আমার টেবিলে রাখা টিস্যু পেপার দিতাম, তাঁদের চোখের পানি, নাকের পানি মোছার জন্য।
হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে এই দেশে বিনিয়োগ করতে এসে হুহু করে কাঁদতে দেখেছি বিদেশিদের। আল্লাহর শপথ করে বলছি, এর এক বিন্দুও তা মিথ্যা নয়।
চট্টগ্রামে আমার অফিসে আসার পর অনেক বিদেশি উদ্যোক্তাকে জিজ্ঞেস করতাম। তুমি আমার অফিস চিনলে কি করে? উত্তরে বলত, ট্যাক্সিওয়ালা। উঠেছ কোথায়? হোটেল আগ্রাবাদে। ভাড়া কত নিয়েছে? ৫০০ টাকা। হোটেল আগ্রাবাদ থেকে বাদামতলির মোড়ে আমার অফিসের দূরত্ব খুব বেশি হলে এক কিমি। ট্যাক্সি ভাড়া বেশি হলে ৬০ টাকা। পরে যা বুঝলাম, তাকে দুনিয়া ঘুরিয়ে নিয়ে এসেছে।
এত কথা বললাম, শুধু বুঝাবার জন্য। আমাদের দেশে এসে বিদেশিদের অবস্থা কি হয়। দঃ কোরিয়ায় দেখেছি, ওদের ওয়ান স্টপ সার্ভিস পাঁচ তারকা হোটেলের মত। থাকা খাওয়া, বেড়ানো সব ফ্রী। এক দিনেই সব কাজ শেষ। ভিয়েতনামেও তাই। পাশের মায়ানমারও আমাদের থেকে এগিয়ে।
এবার বলেন, বড় বড় কোম্পানিগুলো কি আমাদের দেশে আসবে, নাকি ভিয়েতনাম, মায়ানমার যাবে?
সমস্যা হচ্ছে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন ছিল। যা তাঁদের আইনে করা হয়নি। তবুও কোন কর্তৃপক্ষ বা সংস্থার কাছে সময় বেঁধে দিয়ে অফিসার চেয়ে না দিলে, সেই সংস্থা প্রধানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পত্র দেয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
আমাদের দেশে না এসে, শুধুমাত্র সার্ভিসের জন্য অন্যদেশে চলে যাবে, এটা মেনে নেয়া যায় না।
এই সুযোগ হারালে পস্তাতে হবে জীবনভর।
একটি বিষয় মাথায় ঢুকে না আমার। নেপাল মালদ্বীপ আমাদের থেকে এগিয়ে থাকে কি করে!
মাহবুব কবির মিলন
অতিরিক্ত সচিব
বাংলাদেশ রেলওয়ে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।