দেশের মানুষের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাংকে সঞ্চয়ের প্রবণতা গত কয়েক বছরে অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে এফডিআর-ডিপিএস পদ্ধতির মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়ের একটি নিরাপদ পথ খুঁজে পেয়েছেন অনেকে। চলতি ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক কী পরিমাণ মুনাফা দিচ্ছে তা নিয়ে সচেতনতা ও আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে।
এফডিআর-ডিপিএস: বর্তমান আর্থিক সুরক্ষার আধুনিক মাধ্যম
এফডিআর-ডিপিএস বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ সঞ্চয় মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এই দুটি সিস্টেমের মাধ্যমে গ্রাহক নির্ধারিত সময়ের জন্য নির্দিষ্ট অর্থ জমা রেখে নির্দিষ্ট হারে সুদ পেয়ে থাকেন। চলতি বছরে এই সুদের হার বিভিন্ন ব্যাংকে ব্যাপকভাবে ভিন্ন।
Table of Contents
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ৬১টি ব্যাংকে মেয়াদি আমানতের উপর মুনাফার হার ৩% থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৩% পর্যন্ত। এ তথ্য সাধারণ গ্রাহকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা হয়ে উঠেছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সুদের হার ২০২৫
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে এফডিআর ও ডিপিএসে সুদের হার তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। বেসিক ব্যাংক বর্তমানে সবচেয়ে বেশি সুদ প্রদান করছে। ৩-৬ মাসের জন্য সুদের হার ৭% – ৯.২৫%, ৬ মাস থেকে ১ বছরের জন্য ৭.২৫% – ১০%, ১-৩ বছরের জন্য ৭.৫% – ৯.৫% এবং ৩ বছরের বেশি মেয়াদে ১০.৬৭% পর্যন্ত মুনাফা দিচ্ছে।
সোনালী, অগ্রণী, রূপালী, জনতা, বিডিবিএল, পিকেবি, রাকাব এবং বিকেবি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে আমানতের উপর সুদের হার ৬.৩২% থেকে ৯% এর মধ্যে।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মুনাফা ও প্রতিযোগিতা
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলো সুদের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে। মিডল্যান্ড, মেঘনা, পদ্মা, ইউনিয়ন, মধুমতি, এসএবিসি, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটিজেন এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক মেয়াদি আমানতে ৪% থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৩% পর্যন্ত সুদ প্রদান করছে।
এনআরবি ব্যাংক ৩-৬ মাসের জন্য ৫% – ১০.৫০%, ৬ মাস – ১ বছরের জন্য ৬.৫০% – ১০.৭৫% এবং ৩ বছরের বেশি মেয়াদে ১২% – ১৩.৪৬% পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। এসএবিসি ব্যাংক ৫% – ১২% এবং এবি ব্যাংক ১২% পর্যন্ত সুদ প্রদান করছে। ব্র্যাক, ঢাকা, আইএফআইসি, আইসিবি, মার্কেন্টাইল, উত্তরা ও ন্যাশনাল ব্যাংক ৭% – ১১% পর্যন্ত মুনাফা প্রদান করছে।
ইসলামি ব্যাংকের শরিয়াহভিত্তিক মুনাফা হার
শরিয়াহ ভিত্তিক সম্পূর্ণ ইসলামি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও এক্সিম ব্যাংক সর্বোচ্চ মুনাফা দিচ্ছে। ইসলামী ব্যাংক ১০.৫% – ১১%, এক্সিম ব্যাংক ১০.৫০% – ১১.৫০% পর্যন্ত মুনাফা দিচ্ছে। এছাড়াও আল-আরাফাহ্, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি, শাহজালাল, ইউনিয়ন, আইসিবি ইসলামিক, গ্লোবাল এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকগুলো ৯% – ১১% এর মধ্যে মুনাফা প্রদান করছে।
বিদেশি ব্যাংকের সুদের হার তুলনামূলকভাবে কম
বাংলাদেশে কার্যরত বিদেশি ব্যাংকগুলো সাধারণত কম সুদের হার প্রস্তাব করে। যেমন: কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন ১১.৫% এর বেশি, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ৬% – ৯%, হাবিব ব্যাংক ৭% – ১১%, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক সর্বনিম্ন ২%, এইচএসবিসি ও ওরি ব্যাংক ১% – ৬% পর্যন্ত সুদ প্রদান করে।
সাধারণ ডিপোজিট ও সঞ্চয়ের হার
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সাধারণ ডিপোজিটে ৩% – ৪.৫% পর্যন্ত সুদ প্রদান করে। তুলনামূলকভাবে এই হার প্রাইভেট ব্যাংকগুলোর চেয়ে কম হলেও নিরাপত্তার দিক থেকে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পায়।
সঞ্চয়ের জন্য কোথায় যাবেন?
বর্তমানে যাঁরা সঞ্চয়ের সেরা বিকল্প খুঁজছেন, তাদের জন্য বেসিক, এনআরবি, এসএবিসি, এবি ব্যাংক এবং কিছু ইসলামি ব্যাংক সবচেয়ে উপযুক্ত হতে পারে। এই ব্যাংকগুলো তুলনামূলকভাবে বেশি মুনাফা প্রদান করছে এবং গ্রাহকের সঞ্চয়ের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করছে।
সতর্কতা ও পরামর্শ
সঞ্চয় শুরু করার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বর্তমান সুদের হার যাচাই করে নেওয়া উচিত। বিশেষ করে যারা দীর্ঘমেয়াদি এফডিআর খুলতে আগ্রহী তাদের জন্য ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা এবং তারল্য পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সরকারি পোর্টাল থেকে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
এফডিআর-ডিপিএস বর্তমানে বাংলাদেশে নিরাপদ ও লাভজনক সঞ্চয়ের অন্যতম উপায় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে যাঁরা নিয়মিত সঞ্চয়ের মাধ্যমে ভবিষ্যতের আর্থিক নিশ্চয়তা গড়তে চান, তাদের জন্য এই প্ল্যানগুলো চমৎকার বিকল্প হতে পারে।
প্রশ্নোত্তর: এফডিআর-ডিপিএস
এফডিআর ও ডিপিএসের মধ্যে পার্থক্য কী?
এফডিআরে এককালীন অর্থ জমা রেখে নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে সুদসহ ফেরত পাওয়া যায়। ডিপিএসে মাসিক কিস্তিতে অর্থ জমা রেখে মেয়াদ শেষে মূলধন ও সুদ ফেরত পাওয়া যায়।
কোন ব্যাংকে সর্বোচ্চ সুদ পাওয়া যায়?
২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী এনআরবি ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক ও কিছু ইসলামি ব্যাংক সর্বোচ্চ সুদ প্রদান করছে, যা ১৩% এর কাছাকাছি।
সঞ্চয়ের জন্য কোন ব্যাংক নিরাপদ?
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো তুলনামূলকভাবে বেশি নিরাপদ হলেও কিছু ভালো রেটিংপ্রাপ্ত প্রাইভেট ব্যাংকেও নিরাপদ সঞ্চয় সম্ভব।
ডিপিএসের সর্বনিম্ন কিস্তি কত হতে পারে?
সাধারণত মাসিক ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ডিপিএস চালু করা যায়, তবে ব্যাংকভেদে এটি ভিন্ন হতে পারে।
ডিপিএস ও এফডিআরে কর প্রযোজ্য কি?
হ্যাঁ, মুনাফার উপর সরকার নির্ধারিত কর কাটা হয়, যা নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করলে কার্যকর হয়।
এফডিআর ভাঙ্গার নিয়ম কী?
মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে এফডিআর ভাঙলে পূর্ণ সুদ পাওয়া যায় না। কিছু ব্যাংক প্রিপেনাল্টি কেটে নেয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।