জুমবাংলা ডেস্ক: মেহেরপুরে এবার কুরবানির পশুর হাটের আলোচিত গরু মুজিবনগরের রাজাবাবু। কালো কুচকুচে নাদুস নুদুস গরুটির দাম হাঁকানো হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা। গরুটি লালন পালন করেছেন মোনাখালী গ্রামের ইনছান আলী নামে খামারি। প্রতিদিন গরুটি দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন নানা প্রান্তের মানুষ।
লম্বায় সাড়ে ১০ ফুট, উচ্চতা ৬ ফুট, ৬০ মন ওজনের কালো কুচকুচে গরুটি চলে হেলে দুলে। শান্ত স্বভাব চরিত্রের গরুটির নাম দেয়া হয়েছে মুজিবনগরের রাজাবাবু। নামের মতোই তার খাবারও রাজকীয়। ভুট্টা, ছোলা, মোটরের ডাল, চালের গুড়া মিশিয়ে প্রতিদিন ২০ কেজি খাবার দিতে হয় তাকে। গত কুরবানির ঈদে রাজাবাবুকে সাড়ে ১৫ লাখ টাকায়ও বিক্রি করেননি গরুটির মালিক মেহেরপুরের মোনাখালী গ্রামের ইনছান আলী।
গরুর মালিক ইনছান আলী বলেন, তিন বছর আগে ৬ মাস বয়সী এ বাছুরটি ৮৫ হাজার টাকায় কেনা হয় এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। ওই ব্যবসায়ী কিনেছিলেন ৭৫ হাজার টাকায়। তারপর থেকেই গরুটি লালন পালন করে আসছি। নাম রাখি মুজিবনগরের রাজাবাবু। ছোট থেকেই রাজাবাবুর চালচলন, খাবার একটু আলাদা।
কাঁচা ঘাস, বিচালি, সঙ্গে ছোলা, ভুট্টা, চালের গুড়া মিশিয়ে খেতে দিতে হতো। দিন যতো যায় রাজাবাবুর খাবারের চাহিদাও বাড়তে থাকে। প্রতিদিন গোসল করাতে হয় দুইবার। গত বছর কুরবানিতে গরুটি বিক্রি করতে চেয়েছিলাম। দাম দিয়েছিলাম ২৫ লাখ টাকা। সাড়ে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছিল। কিন্তু ভাবলাম আর একটু বড় করে আগামী বছর কুরবানিতে রাজাবাবুকে বিক্রি করবো। এখন বিক্রি করতে চাচ্ছি। দাম দিয়েছি ৩৫ লাখ টাকা। রাজধানী ঢাকাসহ জেলা ও জেলার বাইরে থেকে ব্যবসায়ীরা আসছেন। তবে এখন পর্যন্ত তারা তেমন দাম বলেননি। তবে আশা করছি ভালো দামে বিক্রি করতে পারবো রাজাবাবুকে।
ইনছানের স্ত্রী শাহিনা আক্তার বলেন, নিজের ছেলেমেয়ের মতো রাজাবাবুকে বড় করেছি। পরিবারের প্রতিটি সদস্যদের প্রাণিটির উপর মায়া জড়িয়ে গেছে। মন চায়না গরুটি বিক্রি করতে। কিন্তু প্রয়োজনের তাগিদেই রাজাবাবুকে বিক্রি করতে হবে। এ কথা বলতে বলতে তার চোখে পানি চলে আসে।
ইনছানের মেয়ে সেজুতি সবনম বলেন, রাজাবাবুকে নিয়ে আমাদের গর্ব হয়। প্রতিদিন কতো মানুষ তাকে দেখতে আসে। এমনকি আমার বান্ধবীরাও রাজাবাবুকে নিয়ে সব সময় আলোচনা করে। সবখানেই রাজাবাবুর প্রশংসা।
রাজাবাবুকে দেখতে আসা গাংনীর মাজেদুল হক মানিক বলেন, শুনেছি মোনাখালি গ্রামে কুরবানির জন্য একটি বড় গরু লালন পালন করা হয়েছে। গরুটি দেখতে আসলাম। এতো বড় গরু এর আগে আমি কখনই দেখিনি। স্মৃতি ধরে রাখতে রাজাবাবুর সঙ্গে বেশ কয়েকটি ছবিও তুলেছি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে আসা রাইহান বলেন, আমরা বেশ কয়েকজন মিলে গরুটি দেখতে এসেছি। দেখে বিস্মিত হয়েছি। যেমন তার রং তেমন নাদুস নুদুস। মনে হচ্ছে গরুটি হাতির সমান।
মদনাডাঙ্গা গ্রামের গরু ব্যবসায়ী নাসির উদ্দীন বলেন, বাজারে বড় গরুর চাহিদা কম থাকে। কারণ উচ্চবিত্ত মানুষ ছাড়া এসব গরু কিনতে চান না। মাংসের তুলনায় গরুর দাম বেশি হয়ে যায়। ফলে যারা সৌখিন মানুষ আছে তারাই এ ধরনের গরুগুলো কিনে থাকেন। রাজাবাবুর দাম নেহাত কম হবে না। ৩৫ লাখ টাকা না হলেও ভালো দামে বিক্রি করতে পারবেন গরুর মালিক।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ে রাজাবাবুকে লালন পালন করা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের পরামর্শ ইনছান আলীকে দেয়া হয়েছে। এখন গরুটি যাতে ভালো দামে বিক্রি করা যায় সে চেষ্টা করছি। আমাদের একটি অনলাই পেজ আছে। সেখানে রাজাবাবুর ছবি, মালিকের নাম ও মোবাইল নং দিয়ে প্রচারণা চালাবো। গত বছরও এ প্রচারণ আমরা চালিয়েছিলাম। সেখান থেকে অনেক ফোন আসে। এবারও আমরা সে চেষ্টা করে যাচ্ছি। কারণ এমনিতে খামারিরা বেশি মোটা গরু পালন করতে চান না। ইনছান আলী যদি রাজাবাবুর ভালো দাম পান তাহলে অনেক খামারি বড় গরু লালন পালনে উদ্বুদ্ধ হবেন।
চলন্ত ট্রেনের নিচে পড়েও ‘অলৌকিকভাবে’ প্রাণে বাঁচল শিক্ষার্থী
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।