বিনোদন ডেস্ক : সাফল্যের একের পর এক মাইলফলক জুটছে ‘টুয়েলভথ ফেল’র। ডিজনি হটস্টারে কিছুদিন আগে ‘মোস্ট ওয়াচড’ সিনেমার তকমা পেয়েছিল বিধু বিনোদ চোপড়ার এই সিনেমা। এবার আইএমডিবিতেও সেরার শিরোপা পেল টুয়েলভথ ফেল। পেল ৯.২ রেটিং, যা কি-না ক্রিস্টোফার নোলানের ‘ওপেনহাইমার’ সিনেমার রেটিংকেও ছাড়িয়ে গেছে।
এমনকি আইএমডিবির তালিকায় সেরা ২৫০টি ভারতীয় সিনেমার মধ্যেও শীর্ষস্থানে রয়েছে টুয়েলভথ ফেল। আইএমডিবিতে প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি ভোট পড়েছে এই সিনেমার জন্য। আইএমডিবিতে ‘ওপেনহাইমার’ ছাড়াও ‘স্পাইডার-ভার্স’ রেটিং পেয়েছে ৮.৬, ‘গডজিলা মাইনাস ওয়ান’ পেয়েছে ৮.৪।
টুয়েলভথ ফেল সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার সময় থেকেই সর্বমহলে চর্চা শুরু হয়। যেহেতু খুবই সীমিত সংখ্যক প্রেক্ষাগৃহে এই সিনেমা দেখা যাচ্ছিল, ফলে বিশাল অঙ্কের মানুষ তা দেখতে পাননি। আর তাই ওটিটিতে আসার পরেই যেন এর জনপ্রিয়তা একবারে কয়েক ধাপ বেড়ে গেছে। বক্স অফিসে ৫২ দিনে সারা বিশ্বজুড়ে ৬৭ কোটি টাকার ব্যবসা করার পর ওটিটির দুনিয়াতেও এই সিনেমা সেরার শিরোপায় ভূষিত।
ডিজনি হটস্টারের কনটেন্ট হেড গৌরব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ওটিটিতে মুক্তি পাওয়ার মাত্র তিনদিনের মাথায়, ২০২৩ সালের মোস্ট ওয়াচড সিনেমার তালিকায় একেবারে শীর্ষে উঠে এসেছে টুয়েলভথ ফেল।
‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমার নেপথ্যে যে সত্যি গল্প
ভারতের আইপিএস কর্মকর্তা মনোজ শর্মা ও আইআরএস কর্মকর্তা শ্রদ্ধা জোশি দম্পতির জীবনের গল্প নিয়ে ২০১৯ সালে ‘টুয়েলভথ ফেল’ নামে একটি উপন্যাস লেখেন দেশটির ঔপন্যাসিক অনুরাগ পাঠক। সেই উপন্যাস অবলম্বনে ‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমা নির্মাণ করেন বিধু বিনোদ চোপড়া।
বাস্তব জীবনে আর্থিক ও পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা সঙ্গী করে বেড়ে ওঠেন মনোজ। পরিবারকে সহযোগিতা করতে পড়াশোনার পাশাপাশি অটো রিকশাও চালাতেন তিনি। মাধ্যমিকে কোনোরকম পাস করলেও দ্বাদশ শ্রেণিতে হিন্দি ছাড়া সব বিষয়ে ফেল করেছিলেন তিনি। পরেরবার অনেক কষ্টে দ্বাদশ পাস করেন।
এর মধ্যেই একবার এক পুলিশ কর্মকর্তা মনোজর অটোটি আটক করেন। পরে থানায় গিয়ে অটোটি ছাড়িয়ে আনতে যান তিনি। সেখানে একটি সাক্ষাৎ বদলে দেয় তার জীবনের প্রথম গতিপথ। কীভাবে ইউপিএসসি পরীক্ষা দেওয়া যায়, কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হয় সবকিছু ওই আলোচনায় উঠে আসে। এরপর মনজ স্বপ্ন বুনেন আইপিএস কর্মকর্তা হওয়ার।
ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসার স্বপ্ন চেপে বসে মধ্য প্রদেশের এই দ্বাদশ ফেল ছেলেটির মাথায়। পাড়ি দেন গোয়ালিয়র। প্রথমটায় টেম্পো চালিয়ে, ছোটখাট কাজ করে লড়াই শুরু করেন তিনি। সে সময় তার মাথার উপর ছাদটুকুও ছিল না। ফুটপাথে ভিখারিদের সঙ্গে ঘুমাতে হয়েছে মনোজকে। একটা সময় লাইব্রেরিতে পিয়নের কাজ পান তিনি। কাজের সূত্রে বই পড়ার সুযোগ পেয়ে যান । সেটাই তাকে নতুন দিশা দেখায়। ধীরে ধীরে ইউপিএসসির জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন।
সেই থেকে শত প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে ইউপিএসসি পরীক্ষা দিতে মধ্য প্রদেশ থেকে দিল্লিতে পৌঁছান মনোজ। সেখানে ধনী পরিবারের কুকুরদের দেখভালের মতো কাজও করতে হয়েছে তাকে। তবে লড়াই বন্ধ হয়নি। এই লড়াইয়ের যাত্রায় মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া ছেলেটির জীবনে আসে উত্তরাখন্ডের মেয়ে শ্রদ্ধা জোশি। তার সব সময়ের সঙ্গী ছিলেন প্রেমিকা শ্রদ্ধা। তিনিও চাকরির পরীক্ষা দিতে দিল্লি যান। প্রথমবারেই আইআরএস কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি পান শ্রদ্ধা।
তিনবারের চেষ্টায়ও উত্তীর্ণ হতে পারেননি মনোজ। শ্রদ্ধার অনুপ্রেরণায় চারবারের চেষ্টায় আইপিএস এর চাকরিটা পেয়ে যান তিনি। ২০০৫ সালে মনোজ শর্মাকে বিয়ে করেন বিয়ে করেন শ্রদ্ধা। বর্তমানে এই দম্পতির ঘরে চিয়া ও মানস নামের এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।
জানা গেছে, সামাজিক মাধ্যমে আলোড়ন ফেলে দেওয়া ‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমাটি ইতোমধ্যে ৬০ কোটির বেশি রুপি ব্যবসা করেছে। ছবিটি নির্মাণে ব্যয় হয় মাত্র ২০ কোটি রুপি। এ সিনেমায় মনোজ চরিত্রে বিক্রান্ত ম্যাসি ও শ্রদ্ধা চরিত্রে অভিনেত্রী মেধা শংকর অভিনয় করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।