টাইম মেশিনে ফিরে যাওয়া যাক গত বছরের ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে। চীনের উহানে মারণ ভাইরাস করোনায় প্রথম আক্রান্ত হলেন ৫৭ বছরের মহিলা ওয়েই গুইজিয়ান (Wei Guixian)। পেশায় চিংড়ি মাছ বিক্রেতা (shrimp seller) গুইজিয়ান এখন পুরোপুরি সুস্থ। আর সুস্থ হতে না হতেই তিনি বললেন, ‘চীন যদি শুরুতেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে কড়া ব্যবস্থা নিত, তাহলে বিশ্বজুড়ে এর এতটা প্রভাব বিস্তার হত না। খুব সহজেই মোকাবিলা করা সম্ভব হত।’
সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হুনান সিফুড মার্কেটে (Huanan Seafood Market) চিংড়ি বিক্রি করতেন ওয়েই গুইজিয়ান। ১০ ডিসেম্বর তাঁর লাগাতার কাশি শুরু হতে থাকে। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছিল, এ হয়তো সাধারণ জ্বর। স্থানীয় এক ক্লিনিকে যেতেই তাঁকে একটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে লাভের লাভ কিসসু হয়নি। দিনের পর দিন ক্রমশ দুর্বল হতে থাকেন গুইজিয়ান। দিন দুয়েক পরই উহানের ইলেভন্থ হাসপাতালে যান। সেখানেও ধরা পড়েনি এই মারণ ভাইরাস। সাধারণ ফ্লু বলেই সেখান থেকেও তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তারপর ১৬ ডিসেম্বর ওই অঞ্চলে সবচেয়ে বড় উহান ইউনিয়ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান গুইজিয়ান। আর সেই হাসপাতালেই তাঁকে বলা হয় যে, শরীরে কঠিন রোগ বাসা বাঁধছে।
গুইজিয়ানের দেখাদেখি ওই হাসপাতালে ছোটেন হুনান মার্কেটের আরও অনেক মানুষ। তাঁদের প্রায় একই লক্ষণ দেখা যায়। শেষমেশ ডিসেম্বরের এক্কেবারে শেষের দিকে ওয়েই গুইজিয়ানকে কোয়ারানটিনে রাখা হয়। এমনই সময়ে চিকিৎসা করে তাঁর শরীরে COVID-19 ভাইরাসের উপস্থিতি মেলে। সে সময় ডাক্তারদের ধারণা, উহানের ওই সামুদ্রিক খাবার বিক্রির মার্কেট থেকেই ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস।
অন্য দিকে চীনা সংবাদমাধ্যম দ্য পেপার-এর একটি রিপোর্টে লেখা হচ্ছে যে, মানবজাতির সামনে মহামারী নিয়ে এসেছে এই করোনাভাইরাস। এক লহমায় নানান প্রজাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে এই ভাইরাস। নয়া প্রজাতির শরীরে নিজের মতো মানিয়ে নিতেও সক্ষম তা।
তখনই দ্য পেপার-এর ওই রিপোর্টে শঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছিল, সামনের দিনে এই ভাইরাস খুবই দ্রুত সমগ্র মানবজাতির মধ্যে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। সেই সময়েই এই মারণ ভাইরাসের বিস্তারকে রুখে দিতে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক নীতি গ্রহণের জন্য মানবজাতির আরও গবেষণা প্রয়োজন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করে দ্য পেপার। স্কুল অব লাইফ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস, স্কুল অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস, ইউনিভার্সিটি অব সিডনি এবং সাংহাই পাবলিক হেলথ ক্লিনিক্যাল সেন্টারের প্রফেসর এডওয়ার্ড হোমস এবং স্কুল অফ লাইফ সায়েন্সেস, ফুডান ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ঝাং ইংঝেন- মূলত এঁদেরই নানান রিপোর্ট উদ্ধৃত করে খবরটি তৈরি করে দ্য পেপার।
ঠিক এরপরই তড়িঘড়ি উহানের ওই সামুদ্রিক খাবার-দাবার মার্কেটটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। জানুয়ারি মাসের প্রায় শেষ। গুইজিয়ানের শরীরে ভাইরাস এর উপস্থিতি পাওয়ার পর এক মাস কেটে গিয়েছে। যদিও জানুয়ারির দিকেই ধীরে ধীরে সুস্থ হতে শুরু করেন ওয়েই গুইজিয়ান। তাঁকে COVID-19 পেশেন্ট জিরো (Patient Zero) বলে ঘোষণা করে দেওয়া হয় হাসপাতালের তরফে। সঙ্গে এ-ও বলা হয় যে, উহানের যে মার্কেটে মাংস বিক্রি হয়, সেখানকারই একটি টয়লেট ব্যবহার করেছিলেন। সেখান থেকেই তার শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে। ওয়েই গুইজিয়ান জানান যে, তাঁর সঙ্গে আরও যাঁরা ওই বাজারে নানানতর ব্যবসা করতেন, তাঁদের শরীরেও থাবা বসিয়েছে এই মারণ ভাইরাস।
উহান মিউনিসিপ্যাল হেলথ কমিশনের তরফে নিশ্চিত করে বলা হয়েছে যে, প্রথম COVID-19 আক্রান্ত হয়েছিলেন যে ২৭ জন রোগী তাঁদের মধ্যে প্রথমেই ছিলেন ওয়েই গুইজিয়ান। এহেন গুইজিয়ানই চিনের জিনপিং সরকারের প্রতি তোপ দেগেই বললেন, ‘সরকার যদি আরও আগে ব্যবস্থা নিত, তাহলে এই ভাইরাসে মৃত্যু আরও অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হত।’
সুত্র: এই সময়, টাইমস অফ ইন্ডিয়া
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।