বিনোদন ডেস্ক: মাহিয়া মাহি ও জিয়াউল রোশান অভিনীত সিনেমা ‘আশীর্বাদ’। সরকারি অনুদানে নির্মিত এ সিনেমা পরিচালনা করেছেন মোস্তাফিজুর রহমান মানিক।সিনেমাটির কাহিনি, সংলাপ, চিত্রনাট্য রচনা করেছেন জেনিফার ফেরদৌস। আগামী ১৯ আগস্ট সিনেমাটি মুক্তি পাবে। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন প্রযোজক। এ সময় সিনেমাটির প্রযোজক জেনিফার, পরিচালক মানিক, ঝন্টুসহ অন্যান্য শিল্পীরা উপস্থিত ছিলেন। তবে হাজির ছিলেন না মাহি-রোশান। সিনেমাটির নায়ক-নায়িকা উপস্থিত না থাকার কারণ জানতে চান সাংবাদিকরা।
জেনিফার বলেন, নায়ক-নায়িকা যখন নিজের সিনেমার প্রচার না করে, তখন আমরা তো আর জোর করে করাতে পারি না। নিজের সিনেমার ভালো না বুঝলে আমাদের কিছু করার নেই। সিনেমার প্রচার না করলে এক সময় মাইনাস হয়ে যাবে তারা। আমার আর কিছু বলার নেই। আশা করছি, নির্মাণ এবং গল্পের জন্য আমার সিনেমা ভালো চলবে।
শুটিংয়ের সময়েও খারাপ আচরণ করেছেন মাহি। তা উল্লেখ করে জেনিফার বলেন, করোনার সময়ে শুটিং করা কতটা কঠিন ছিল তা আপনারা সবাই জানেন। ওই সময়ে অনেক কলাকুশলীর অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয় ছিল। ওই সময়ে শুটিং করছিলাম। আমার সহকারী হিসেবে একটি ছেলে ছিল। কিন্তু মাহির কারণে ওই ছেলেকে শুটিং থেকে বাদ দিতে হয়। পরে কাঁদতে কাঁদতে সেট থেকে বেরিয়ে যায় ছেলেটি।
শুটিং বয়কে বাদ দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে জেনিফার বলেন, আমার সিনেমার নায়িকা সম্ভবত নারকেল তেল চেয়েছিল। ওই সময়ে ছেলেটি আমার মাথায় ছাতা ধরেছিল। যার কারণে নায়িকাকে তেল দিতে দেরি হয়। এতে মাহি বেঁকে বসে। ওই ছেলেকে বাদ না দিলে মাহি শুটিং করবে না বলে জানায়। পরে বাধ্য হয়ে ছেলেটিকে বাদ দিই। এদিকে যাকে নিয়ে এত বিস্তর অভিযোগ তাঁর সাথে বাংলা ইনসাইডারের কথা হয়। মাহি বলেন, আমি প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জানাই আমার প্রযোজককে। কেননা তিনি আমাকে এই সিনেমায় কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। এই সিনেমাটি আমার অন্য অনেক স্পেশাল ছিলো কারণ এটি আমার প্রথম সরকারি অনুদানের সিনেমা।
জেনিফারের অভিযোগ মিথ্যা উল্লেখ করে বলেন, আপা বলেছে আমাকে তেল দেয়া হয়নি বলে আমি শুটিং করবো না বলে জানিয়েছিলাম এবং আমার কারণে নাকি একটি ছেলেকে শুটিং সেট থেকে বের করে দেয়া হয়ে ছিলো। বিষয়টি পুরোটাই মিথ্যা। আমরা সেদিন শুটিং করছিলাম ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে। শুটিংয়ের কিছুক্ষন আগে বৃষ্টি হয়েছিলো। এর কিছুক্ষন পরেই আমাদের শট ছিলো মাঠে। বৃষ্টির কারণে মাঠ অনেকটাই ভেজা ছিলো। সেই অবস্থায় শুট করতে গিয়ে আমার এলার্জির কারণে শরীরে চুলকানি শুরু হয়। আমি তখন তাড়াতাড়ি গাড়িতে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করি। আমাদের প্রোডাকশনে মেয়ে বলতে আমরা দুইজনই ছিলাম।
কাউকে তেমন ভাবে কিছু বলতেও পারছিলাম না। এমন অবস্থায় আমার সহকারী বললো নারিকেল তেল দিতে কিন্তু আশাপাশে তেমন কোন দোকানও ছিলো না। যার কারণে বেশ বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিলাম আমি। তখন বেশ কয়েকবার আমার সহকারী সেই প্রোডাশন বয়কে একটু তেল ব্যবস্থা করে দিতে বললে সে এক প্রকার রেগে যায়, বলে ম্যাডামের জন্য আগে গরুর মাংস ব্যবস্থা করি তারপর সব হবে। একটা মানুষ মারা যাচ্ছে আর অন্য জন্য গরুর মাংস খাবে সেটা কী করে হয় ? মানবতা বলতেও তো একটা কথা থাকে। শুধু আমি নই আমাদের অনেক আর্টিস্টদের কোন সম্মান করা হয়নি শুটিং সেটে।
মাহি আরও বলেন, ছবিটি সরকারি অনুদানের ছবি তাই আমরা আর্টিস্টরা অনেক কম পারিশ্রমিক নিয়েছি। কিন্তু সেই তুলনায় আমরা সম্মান পাইনি। একটি সিনেমা আমার সন্তানের মত, অথচ আমার চোখের সামনে সেই সন্তানটি মারা যাচ্ছে এটা আমি সহ্য করতে পারবো না।
ছবির মুক্তির বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মাহি বলেন, কিছুদিন আগে এক সাংবাদিক আমাকে কল দিয়ে বলছে ছবিটি ১৯ আগস্ট মুক্তি পাচ্ছে। আমি বললাম কোন সিনেমা সে বললো ‘আশীর্বাদ’। তাঁর কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম কারণ আমি এই বিষয়ে কিছুই জানতাম না। ছবির সংশ্লিষ্ট কেউ আমাকে একবার জানায়ও নাই। শুধু তাই নয় ছবির প্রচারণা কিভাবে কী হবে সে বিষয়েও কেউ আমাকে কিছুই বলে নাই। সব কিছু মিলিয়ে আমি বেশ বিরক্ত। আর এই ছবির নির্মাতা সব কিছু জানেন শুটিংয়ে কি হয়েছে। সে যদি বলে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ গুলো সত্য বলে একবার আমি সব মাথা পেতে নিবো।
মাহি আক্ষেপ করেই বলেন, এই ছবিটা আমাদের স্বপ্নের সিনেমা ছিলো। কিন্তু সব কিছুই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সাইনিংয়ের প্রথম দিনেই আমাদের শর্ত দেয়া হয় প্রযোজক ছাড়া কোন ছবি ফেসবুকে দেয়া যাবে না। এটা কেমন নিয়ম। এতগুলা সিনেমা করেছি কখনো এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়নি। শুধু তাই নয় সাভারে শুটিংয়ের সময় পাক হানাদার বাহিনির একটি সিন ছিলো। সেখানে প্রফেশনার কোন শিল্পী না নিয়ে নেয়া হয়েছে গ্রামের লোকদের। যারা ভালো করে বন্ধুক ধরতে পারেনা। এমনকি তাঁরা কখনো ক্যামেরার সামনেই দাঁড়ায়নি। শুনেছি ছবিটির জন্য ৬০ম লাখ টাকা অনুদান পেয়েছেন প্রযোজক। তবে দর্শক হলে দেলেই দেখতে পাবেন ছবিটি কত টাকা দিয়ে নির্মাণ হয়েছে।
এদিকে শুধু মাহি একাই নন ছবির নায়ক রোশানও প্রযোজকে নিয়ে জানিয়েছেন বেশ কিছু তথ্য। তিনি বলেন, জেনিফারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে রোশান বলেন, ‘এটা ৬০ লাখ টাকার অনুদানের ছবি। আমি জানি না আসলে সম্পূর্ণ টাকা দিয়ে সিনেমা বানানো হয়েছে কি না। না হলে এতো কোয়ালিটি কম্প্রোমাইজ করে কেন সিনেমা বানানো হলো। শুটিং ইউনিটে কখনো খাবারের সমস্যা হবার কথা না। অথচ উনি খাবারের সমস্যা করলেন। খাবার পানি পর্যন্ত নিজের ঘরে তালাবন্ধ করে রাখতেন। আমাদের খাবারের ও পানির সমস্যায় পড়তে হয়েছে অনেকবার। টাকা বাচাতে উনি নিজেই বাজার করতে যেতেন।
২০১৯-২০ অর্থ বছরে সরকারি অনুদান পেয়েছে ‘আশীর্বাদ’ সিনেমাটি। পরিচালক মানিক জানান, সিনেমায় সত্তর দশকের ছাত্র রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের পরিস্থিতি নিয়ে কয়েকটি ধাপ।সিনেমাটিতে আরো অভিনয় করেছেন, কাজী হায়াৎ, রেহানা জোলি, রেবেকা, শাহনূর, অরণ্য বিজয়, হারুন রশিদ, সায়েম আহমেদ, সীমান্ত, শিশুশিল্পী জেনিলিয়া, আরিয়ান প্রমুখ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।