জুমবাংলা ডেস্ক : ২০২৪ সালে প্রবাসী আয় তথা রেমিট্যান্সে বড় ধরনের রেকর্ড হতে চলেছে। বছর না যেতেই এরই মধ্যে ২৬ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের ঘর অতিক্রম করেছে। চলতি মাসের প্রথম ২১ দিনেই এসেছে ২০০ কোটি ডলার। এ ধারা অব্যাহত থাকলে পুরো বছরে ২৭ বিলিয়ন ডলারের নতুন মাইলফলকে পৌঁছে যাবে রেমিট্যান্স।
শুধু তাই নয়, ২০২৪ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ রেমিট্যান্স আহরণকারী দেশের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ওঠার সম্ভাবনাও রয়েছে বাংলাদেশের। জিডিপিতে অবদান রাখা শীর্ষ দেশের তালিকায় কয়েক ধাপ উন্নতিরও আশা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অর্থপাচার রোধ ও ডলারের দর বৃদ্ধি এবং প্রবাসীদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা ও সেবার মান উন্নত করায় রেমিট্যান্সে এমন জোয়ার এসেছে।
চলতি বছর প্রথম ছয় মাস প্রবাসী আয় গতি নিয়ে বাড়লেও শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকালে জুলাইতে ব্যাপকহারে কমে যায়। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তখন কয়েক দিন ব্যাংক বন্ধ ছিল; অন্যদিকে হাসিনা সরকারকে অসহযোগিতা করতে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠানোর প্রচারণাও ছিল ব্যাপক। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর
প্রবাসীদের জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়। যেমন- প্রবাসীরা এখন বিমানবন্দরে নেমে টেলিফোনে স্বজনদের সঙ্গে বিনা খরচে কথা বলতে পারছেন। লাগেজ পেতেও ভোগান্তি কমানো হয়েছে। ডলার সংকট কাটাতে আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যান্ড ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়েছে। ওই সিদ্ধান্তের কারণে বিনিময় হার নির্ধারণের ক্রলিং পেগ ব্যবস্থায় ডলারের মধ্যবর্তী দর ১১৭ থেকে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা পর্যন্ত বাড়াতে পারছে ব্যাংকগুলো।
ফলে প্রবাসী আয় কেনার ক্ষেত্রে ডলারের দামও কিছুটা বেশি দিতে পারছে তারা। আবার বিভিন্ন প্রয়োজনে প্রবাসীদের জন্য বিনা জামানতে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের সুযোগ দিয়ে সম্প্রতি সার্কুলার জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানি বাড়াতেও পদক্ষেপ চলমান রয়েছে। এসব কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে আগের চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন প্রবাসীরা। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত আগস্ট থেকে প্রবাসী আয়ে ব্যাপক উত্থান হচ্ছে। এই ধারাবাহিতা চলতি মাসেও দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত মাসে প্রবাসীরা প্রায় ২২০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠান। আর এ মাসের প্রথম ২১ দিনেই পাঠিয়েছেন প্রায় ২০০ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে গত ১ জানুয়ারি থেকে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত (১১ মাস ২১ দিন) রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ২ হাজার ৬২৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার (২৬.২৫ বিলিয়ন)। ডিসেম্বর মাসের বাকি ১০ দিনে আরও ১০০ কোটি ডলার আসার প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেটি হলে একক মাস হিসেবে ডিসেম্বরে ৩ বিলিয়নের ঘরে পৌঁছে যাবে রেমিট্যান্স।
২০২০-২১ অর্থবছরে জুলাই মাসে সর্বোচ্চ ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছিল। গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসে। গত মে মাসে ডলারের দাম একলাফে ৭ টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকা নির্ধারণ করায় তখন রেমিট্যান্সে গতি এসেছিল। এদিকে এই উড়ন্ত গতির কারণে এবার এক বছরের হিসাবেও রেমিট্যান্সে বড় ধরনের রেকর্ড হতে চলেছে।
ধারণা করা হচ্ছে, এবারই প্রথমবার ২৭ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করবে রেমিট্যান্স। আর সেটি হলে এক বছরে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে প্রায় ২৩ শতাংশ। ২০২৩ সালে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল মাত্র ২.২৮ শতাংশ। তখন রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১৯২ কোটি ডলার। ২০২২ সালে এসেছিল ২ হাজার ১২৯ কোটি ডলার।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার মাস আগস্টে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। সেপ্টেম্বরে তা আরও বেড়ে হয় ২৪০ কোটি ৪৭ কোটি ডলার, যা একক মাস হিসেবে এ যাবৎকালের তৃতীয় সর্বোচ্চ। অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং নভেম্বরে আসে ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। অন্যদিকে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রতি মাসে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ কোটি ডলারের মধ্যে রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। তবে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জুলাই মাসে রেমিট্যান্স আসে মাত্র ১৯১ কোটি ডলার, যা ছিল গত ১০ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।
দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় স্থানে উঠতে পারে বাংলাদেশ : প্রবাসী আয়ের অন্তঃপ্রবাহ নিয়ে তিন মাস পরপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করে বাংলাদেশের ব্যাংক। ওই প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ রেমিট্যান্স আহরণকারী দেশের তালিকাও তুলে ধরা হয়। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ২২.২ বিলিয়ন রেমিট্যান্স আহরণ করে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩ নম্বরে রয়েছে। শীর্ষে আছে ভারত।
দেশটির ২০২৩ সালে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ ছিল ১১৯.৫০ বিলিয়ন ডলার। ২৬.৬ বিলিয়ন রেমিট্যান্স আহরণ করে দ্বিতীয় অবস্থানে পাকিস্তান। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স যদি ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়, তাহলে পাকিস্তানকে টপকানোর সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। অন্যদিকে ২০২৩ সালে জিডিপিতে ৫ শতাংশ অবদান রেখে বাংলাদেশের অবস্থান ৪ নম্বরে। ৩.৭ শতাংশ অবদান রেখে ভারতের অবস্থান ৫ নম্বরে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এবার জিডিপিতেও রেমিট্যান্সের অবদান বাড়বে। ফলে এ তালিকায়ও বাংলাদেশের কয়েক ধাপ উন্নতির আশা করা হচ্ছে।
রাবিতে শাস্তি পাওয়া ৩২ শিক্ষার্থীর ২৫ জনই ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।