বাংলাদেশের জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর তার ছেলে এরিক এরশাদের দেখভাল নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে তার মা বিদিশা সিদ্দিক এবং এরশাদের গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের মধ্যে।
বিদিশা সিদ্দিক বলছেন, তার প্রতিবন্ধী ছেলের দেখাশোনার ঘাটতির কারণে তিনি জেনারেল এরশাদের ভবন প্রেসিডেন্ট পার্কে অবস্থান করছেন। কিন্তু ট্রাস্টি বোর্ড থেকে বলা হচ্ছে, বিদিশা অবৈধভাবে প্রেসিডেন্ট পার্কে অবস্থান করছেন এবং তিনি রাজনীতিতে পুনরায় সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন।
হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ মারা যাওয়ার আগে প্রেসিডেন্ট পার্কসহ বেশ কিছু সম্পত্তি নিয়ে একটি ট্রাস্ট গঠন করে যান। বোর্ড বলছে, জেনারেল এরশাদ সেই ট্রাস্টের টাকা থেকে তার ছেলে এরিক এরশাদের সমস্ত খরচ চালানোর কথা লিখিতভাবে বলে গেছেন।
কিন্তু বিদিশা বলছেন, এরশাদ মারা যাবার পর তার ছেলের দেখাশোনা ঠিক মত হচ্ছে না।
তিনি অভিযোগ করেন, তার ছেলে নানা রকম মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তারই এক পর্যায়ে এরিক তার মাকে প্রেসিডেন্ট পার্কে আসতে বলেন।
বিদিশা সিদ্দিক বলছেন, ‘এরশাদ মারা যাওয়ার পরেই আমি ভীত ছিলাম যে আমার ছেলের ঠিক মত দেখাশোনা করা হচ্ছে না। আমি যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি। গত ১৪ নভেম্বর এরিক নিজেই আমাকে ফোন করে বলে-মা তুমি আসো, আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে। আমি অনেক সাহস নিয়ে আসি। এখানে এসে আমার সন্তানকে আমি খুবই জঘন্য অবস্থায় পেয়েছি। সে খুবই ভয়াবহ, ভীত অবস্থায় ছিল, কথা বলতে পারছিল না। ক্ষুধায় কাঁপছিল। গা থেকে গন্ধ বের হচ্ছিল।’
কিন্তু ট্রাস্টি বোর্ড বিদিশার এই বক্তব্য অস্বীকার করেছে। প্রেসিডেন্ট পার্কে বিদিশা সিদ্দিকের থাকাকে মোটেই ভালোভাবে নিচ্ছেন না ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা।
তারা বলছেন, এরিকের দেখাশোনার ভার সম্পূর্ণভাবে ট্রাস্টের দায়িত্ব। তাদের কথা হলো- মা হিসেবে বিদিশা দেখা করতে পারেন কিন্তু সেখানে অবস্থান করতে পারবেন না।
বিদিশা সিদ্দিক বলছেন, তার ছেলের দেখাশোনা তিনি নিজেই করতে চান, সেটা যেখানেই হোক তার আপত্তি নেই, কিন্তু ছেলে এরিক চাইছে তিনি যেন প্রেসিডেন্ট পার্কে থেকে তার দেখাশোনা করেন।
ট্রাস্টি বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর খালিদ আকতার বলছেন, ‘ট্রাস্টের একটা ডকুমেন্টে লেখা আছে ট্রাস্টের সবকিছু এরিক ভোগ দখল করবে। সেখানে বিদিশা প্রেসিডেন্ট পার্কে অবস্থান করলে সেও ভোগের অংশীদার হবে। যদি তার ছেলেকে নিজের কাছে রাখতে হয় তাহলে তাকে অন্যস্থানে রাখতে হবে।’
এছাড়াও তিনি মনে করেছেন যে বিদিশা এরশাদ প্রেসিডেন্ট পার্কে থেকে আবারো রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারেন।
আকতার বলছেন, ‘বিদিশা প্রেসিডেন্ট পার্কে বসে বিভিন্ন নেতাদের সাথে যোগাযোগ করছেন, তাদের ডাকছেন, তাদের সাথে আলোচনা করছেন সেটা তো ঠিক না।’
ট্রাস্টের পক্ষ থেকে থানায় একটা সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিদিশা সিদ্দিক অবৈধভাবে প্রেসিডেন্ট পার্কে অনুপ্রবেশ করেছেন। যার ফলে এরিকের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এরিক এরশাদের পক্ষ থেকেও গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, তাকে ট্রাস্টের সদস্যের দায়িত্বে রাখা হলে তার জীবনের নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা রয়েছে।
এরিক এরশাদ বলেছেন জিডিতে বলেছেন, তিনি তার মা বিদিশার সাথে প্রেসিডেন্ট পার্কেই থাকতে চান।
জেনারেল এরশাদের সম্পত্তি ভোগ করা এবং রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে সে সম্পর্কে বিদিশা সিদ্দিক বলেন, ‘আমি তো রাজনীতি নিয়ে এখন ভাবছি না। আমার সবচেয়ে বড় চিন্তা আমার অসুস্থ সন্তানকে নিরাপত্তা দেওয়া।’
‘তাই এরিককে বাঁচানোর জন্য, তার উপর যে নির্যাতন হয়েছে তার জন্য আমি আইনগত যা যা পদক্ষেপ নেয়া দরকার সেটা আমি আমার আইনজীবীর সাথে কথা বলে সেই পদক্ষেপ অবশ্যই নেব।’
জেনারেল এরশাদের সাথে বিদিশার বিবাহ বিচ্ছেদের পর এরিক কার কাছে থাকবে সে নিয়ে আদালতে আইনি লড়াই হয়েছে।
আদালতের নির্দেশে এরশাদ নিজের কাছে ছেলেকে রাখার অনুমতি পায়। আর বিদিশা ছেলেকে দেখার অনুমতি পায়।
তবে জেনারেল এরশাদের মৃত্যুর পর বিদিশা বলছেন, এখন তিনি সেই দায়িত্ব নিতে চান। সূত্র: বিবিসি বাংলা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।