বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই যোগাযোগের মাধ্যম হতে পারে গণিত। এখন পর্যন্ত আমাদের জানা মৌলিক সংখ্যার তালিকা, পাইয়ের মান কিংবা ফিবোনাচ্চি ধারা—এমন কিছু আদান-প্রদানের মাধ্যমে হয়তো যোগাযোগ শুরু হতে পারে। যদি ও প্রান্তের প্রাণীরা গণিত বোঝে-ই, তাহলে পরে বাইনারি সিগন্যাল ব্যবহার করে আরও বিস্তারিত বার্তা, এমনকি ছবিও আদান-প্রদান করা সম্ভব।
কিন্তু এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যাটা আসলে গাণিতিক প্রতীক বা সিম্বল নিয়ে। যেমন দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি বা ১০ ভিত্তিক গণনার পেছনে যথাসম্ভব আমাদের ‘হাত-পায়ে ১০টা করে আঙুল থাকা’টা একটা বড় ভূমিকা রেখেছে। কথা হলো, বহির্জাগতিক কোনো সভ্যতার সঙ্গে যদি আমাদের গণিত দিয়েও কথা হয়, তারা ঠিক কত ভিত্তিক সংখ্যাপদ্ধতি ব্যবহার করবে? এসব সমস্যা সমাধানের জন্য গণিতের সর্বজনীনতাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, এ নিয়ে বিখ্যাত পদার্থবিদ কার্ল সাগানের বেশ কিছু তত্ত্ব আছে। যেমন, ‘২+৩ = ৫’— এটা দিয়ে সত্য বোঝানো যেতে পারে, এবং ‘২+২ = ৫’— এটা দিয়ে মিথ্যা বোঝানো যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সংখ্যা পদ্ধতি ভিন্ন হলেও বহির্জাগতিক সভ্যতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়তো সম্ভব হবে।
তবে এই যোগাযোগের জন্য সবচেয়ে বড় শর্তটা হচ্ছে, বহির্জাগতিক সেই প্রাণীদের বুদ্ধিমান হতে হবে। এ নিয়ে কথা বলতে গেলে সবার আগে যে প্রশ্নটা আসে, তা হলো, দৈহিকভাবে কেমন হবে সেই প্রাণীরা?
এই প্রশ্নের উত্তর আবার আরেকটা প্রশ্নের ওপর নির্ভর করে। তাদের বাসভূমিটা কেমন? যদি বহির্জাগতিক প্রাণীদের আবাসস্থল পৃথিবীর মতো হয়, তাহলে ধরে নেওয়া যায়, সেই প্রাণীরাও প্রায় আমাদের মতোই হবে। প্রাণের বিকাশের স্বাভাবিক নিয়ম হলো, একই ধরনের পরিবেশে সে সাধারণত একইভাবে বিকশিত হয়।
পরিবেশ ভিন্নতার কারণে তাদের বুদ্ধিমান হতে কোনো সমস্যা নেই। যেমন, ডলফিন। পানিতে থাকলেও এরা বেশ বুদ্ধিমান প্রাণী। এর মধ্যে অবশ্যই একটা ‘কিন্তু’ আছে। বহির্জাগতিক প্রাণের সূচনা পানিতে হোক কিংবা বায়ুতে, আমাদের মতো কিংবা আমাদের চেয়ে বুদ্ধিমান হতে হলে তাদের একসময় অবশ্যই মাটিতে বসবাস করা শুরু করতে হবে।
মাটির বুকে, আগুনের চারপাশে জড়ো হয়ে বসে গল্প করা এবং আগুনকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখা আমাদের সভ্যতার পেছনে বিশাল ভূমিকা রেখেছে। সহজ কথায়, ভিনগ্রহী প্রাণীদের গ্রহটি যদি পৃথিবীর মতোই হয়, তাহলে তাদের দৈহিক গঠনও আমাদের মতোই হবে। যদি তাদের গ্রহের মহাকর্ষ বল তুলনামূলকভাবে দুর্বল হয়, তাহলে তাদের আকৃতি হবে লম্বা এবং সরু। আর মহাকর্ষ বল অনেক শক্তিশালী হলে তাদের আকৃতি হবে মোটা এবং খাটো ধরনের।
প্রাণীদের আকৃতি নিয়ে এত কথা বলার কারণ কী? কারণ, স্নায়ুবিদেরা মনে করেন, গৃহপালিত বিড়ালের চেয়ে ছোট আকৃতির কোনো প্রাণীর মস্তিষ্কের আকার এত ছোট যে, তাদের পক্ষে খুব বেশি বুদ্ধিমান হওয়া সম্ভব না। তবে আকৃতিতে ছোট হলেও তারা যদি ‘সামষ্টিক বুদ্ধিমত্তা’ হিসেবে কাজ করতে পারে, মানে, পুরো গ্রহের সব প্রাণী মিলে যদি একটি প্রাণীর মতো চিন্তা করতে পারে, তাহলে তারা এই সমস্যা এড়াতে পারবে।
এসব কিছুর পেছনের কথাটি ছিল, বহির্জাগতিক প্রাণীদের আবাসস্থল পৃথিবীর মতো হতে হবে। তা-ই যদি হয়, তাহলে ধরে নেওয়া যায়, তাদের প্রাণও হবে আমাদের মতোই কার্বন-ভিত্তিক। তবে সেটা যদি না হয়? অন্য গ্রহের প্রাণ যদি অন্য কোনোভাবে গড়ে ওঠে? বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মহাবিশ্বের যেকোনো প্রান্তে প্রাণ তৈরি হলে সেটা কার্বন-ভিত্তিক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
কারণ, কার্বন একসঙ্গে চারটি জিনিসের সঙ্গে স্থিতিশীলভাবে যুক্ত হতে পারে। তার ওপর, কার্বন নিজেই নিজের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যুক্ত হতে পারে। কার্বনের বিকল্প হিসেবে সবার আগে আসবে সিলিকনের কথা। প্রায় কার্বনের মতোই কাজ করলেও, কার্বনের মতো স্থিতিশীল বন্ধন গঠন করতে পারে না এই মৌলটি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।