জুমবাংলা ডেস্ক : চালের বৈশ্বিক বাজারদর বর্তমানে ১১ বছরের সর্বোচ্চে। আগামী মাসগুলোয় শস্যটি আরো ব্যয়বহুল হয়ে উঠতে পারে। এদিকে শীর্ষ উৎপাদক দেশগুলোয় এল নিনোর প্রভাবে অন্যান্য শস্য উৎপাদনও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ফলে এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোয় এসব শস্যের দামও চড়া হয়ে উঠতে পারে। খবর রয়টার্স।
বৈশ্বিক চাল রফতানিতে ৪০ শতাংশ অবদানই ভারতের। ২০২২ সালে দেশটি ৫ কোটি ৬০ লাখ টন চাল রফতানি করে। তবে চলতি বছরসহ আগামী বছরগুলোয় রফতানি নিম্নমুখী হয়ে উঠতে পারে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে গত বছরই চালসহ সব ধরনের শস্যের দাম আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে। এ বছর নতুন করে যোগ হয় এল নিনোর আশঙ্কা। এ পরিস্থিতিতে ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা মেটাতে রফতানিকারক দেশগুলোকে বিদ্যমান মজুদের ওপর নির্ভর করতে হবে। ফলে শিগগিরই চালের বৈশ্বিক মজুদ তলানিতে ঠেকতে পারে।
ভারতীয় চাল রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট বিভি কৃষ্ণ রাও বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় চালের দাম ছিল সবচেয়ে কম। সরকার কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সম্প্রতি ধানের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে চালের দামও ব্যাপক হারে বেড়েছে। এ সুবাদে অন্যান্য সরবরাহকারী দেশও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।’
বিশ্বজুড়ে ৩০০ কোটি মানুষের প্রধান খাদ্যশস্য চাল। শস্যটির ৯০ শতাংশই উৎপাদন হয় এশিয়ায়। শস্যটি মূলত পানিনির্ভর। কিন্তু এল নিনোর প্রভাবে বৃষ্টিপাতের হার স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক নিচে নামতে পারে, যা চাল উৎপাদনকে বড় ধরনের হুমকির মুখে ফেলবে।
তবে এল নিনো পরিস্থিতিতে চাল উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হওয়ার আগেই শস্যটির দাম রেকর্ড বেড়েছে। কিছুদিন আগে মার্কিন কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) বাংলাদেশ, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে রেকর্ড চাল উৎপাদনের পূর্বাভাস দিয়েছিল। এর পরও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মূল্যসূচকে চালের বৈশ্বিক দাম ১১ বছরের সর্বোচ্চে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এল নিনোর প্রভাব প্রকট হলে কোনো দেশই এর থেকে মুক্তি পাবে না। সব দেশেই কম-বেশি চাল উৎপাদন ব্যাহত হবে। এরই মধ্যে সরবরাহ সংকটে ভারতীয় চালের দাম ৯ শতাংশ বেড়ে পাঁচ বছরের সর্বোচ্চে। গত মাসে দেশটির সরকার ধানের দাম বাড়িয়ে দেয়ায় দাম ৭ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে চালের দাম বেড়ে দুই বছরের সর্বোচ্চে।
মার্কিন কৃষি বিভাগ জানায়, ২০২৩-২৪ মৌসুমের শেষ নাগাদ চালের বৈশ্বিক মজুদ কমে ছয় বছরের সর্বনিম্নে নামতে পারে। শীর্ষ উৎপাদক দেশ চীন ও ভারতে নিম্নমুখী মজুদ এক্ষেত্রে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা পালন করবে।
শুধু চাল নয়, সাম্প্রতিক মাসগুলোয় বিশ্বজুড়ে চিনি, মাংস ও ডিমের দাম বেড়ে কয়েক বছরের সর্বোচ্চে। স্থানীয় বাজারে মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে এসব পণ্যের শীর্ষ উৎপাদক দেশগুলো রফতানির পরিমাণ সীমিত করেছে।
নয়াদিল্লিভিত্তিক ব্যবসায়ীরা জানান, উৎপাদন ব্যাপক মাত্রায় কমে গেলে চালের দাম এক-পঞ্চমাংশ কমতে পারে। এল নিনোর কারণে এশিয়ার সব দেশেই স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক চাল উৎপাদন হবে।
এদিকে ২০২৩-২৪ মৌসুমে বিশ্বজুড়ে ৫২ কোটি ১০ লাখ টন চাল উৎপাদনের পূর্বাভাস দিয়েছে আইজিসি। আগের মাসের মতোই এটির পূর্বাভাস অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। বাণিজ্য পূর্বাভাসও ৫ কোটি ৪০ লাখ টনে অপরিবর্তিত থাকবে। তবে শস্যটির ব্যবহার ১০ লাখ টন বেড়ে ৫২ কোটি টনে উন্নীত হতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।