শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে আজব কিছু বৃষ্টির কথা শোনা গেছে। যেমন: মাছ বৃষ্টি, ব্যাঙ বৃষ্টি, রক্ত বৃষ্টি, মাংস বৃষ্টি ইত্যাদি। অবশ্য এসবের আসলে কোনো প্রমাণ নেই। আর এসব বৃষ্টির মধ্যে আজগুবি ব্যাপার থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু এসিড বৃষ্টি সেরকম কিছু নয়।
বিভিন্ন এসিডের মধ্যে কোনোটা শক্তিশালী, আর কোনো কোনোটা দুর্বল। সালফিউরিক, নাইট্রিক, হাইড্রোক্লোরিক হলো শক্তিশালী এসিড। এসব এসিড অনেক ধাতুকে গলিয়ে ফেলতে পারে। চামড়ায় লাগলে পুড়ে যায় মুহূর্তেই। দুর্বল এসিডের মধ্যে রয়েছে সাইট্রিক এসিড, ভিনেগারসহ আরও বেশকিছু এসিড। ক্ষতিকর না হওয়ায় অনেক দুর্বল এসিড খাবার হিসেবে গ্রহণ করা হয়। যেমন লেবু বা কমলায় আছে সাইট্রিক এসিড, তেঁতুলে টারটারিক এসিড।
তবে সাইট্রিক এসিডের মতো এসিড বৃষ্টি মোটেও নির্দোষ নয়। এ বৃষ্টি মানুষ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। ভাগ্য ভালো বলতে হবে, এ বৃষ্টিতে থাকা এসিড সাধারণত ততটা শক্তিশালী হয় না। পানির সঙ্গে মিশে এর শক্তি অনেকটাই কমে যায়। কিন্তু তারপরও এতে অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস, নিউমেনিয়াসহ নানান অসুখ হয়।
এ ছাড়া মাটি ও পানি এসিডিক বা অম্লীয় হয়ে গাছপালা বা বনভূমি ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যায়। আবার নদী-নালা, পুকুর, হ্রদের মাছ ও অন্যান্য জীব অসুস্থ হয় বা মারা যায়। চেইন রিয়েকশনের মতো এসব অসুস্থ মাছ খেয়ে অসুস্থ হতে বা মারা যেতে পারে পাখি বা অন্য প্রাণী। এতে পরিবেশের স্বাভাবিকতা ধ্বংস হয়। সর্বোপরি বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই এসিড বৃষ্টি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানুষের জন্য ক্ষতিকর।
অবশ্য এসিড বৃষ্টিকে বুমেরাংয়ের সঙ্গে তুলনা করা চলে। এটা আসলে মানুষের প্রতি প্রকৃতির এক ধরনের প্রতিশোধ। কারণ এই ক্ষতিকর বৃষ্টির জন্য আসলে মানুষই দায়ী। এর প্রধানতম কারণ বায়ুদূষণ। কল-কারখানা বা গাড়ির ধোঁয়া ও অন্যান্য জ্বালানি পোড়া গ্যাসে নাইট্রোজেন অক্সাইড ও সালফার অক্সাইডের কণা থাকে। এসব কণা মেঘের ক্ষুদ্র পানি কণার সঙ্গে মিশে সালফিউরিক এসিড ও নাইট্রিক এসিড তৈরি করে। তারপর বৃষ্টি হয়ে ক্ষতিকর এসিডগুলো মাটিতে নেমে আসে।
এসিড বৃষ্টির উপযোগী মেঘ কিন্তু যেখানে সৃষ্টি হয়, সেখানেই সবসময় ঝরে পড়ে না। বাতাসে ভেসে অন্য এলাকায় গিয়ে বৃষ্টি হয়ে ঝরে। তাই এসিড বৃষ্টি সৃষ্টির পেছনে যারা প্রত্যক্ষভাবে দায়ী, তারা তেমন ক্ষতির স্বীকার নাও হতে পারে। তবে যেখানেই এ বৃষ্টি হোক, ক্ষতিগ্রস্ত হয় মানুষ ও প্রকৃতি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।