আবু সাঈদ নিশান : ঢাকার রাস্তায় নামছে বিদ্যুতচালিত বাস। রাজধানীতে বিদ্যুতচালিত বাসের চলাচল একেবারে নতুন বলে গণমানুষের মনে প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশ কি আদৌ বিদ্যুতচালিত বাস পরিচালনার জন্য প্রস্তুত কি-না। এ নিয়ে ইতিবাচক ও নেতিবাচক, সমাধান ও চ্যালেঞ্জের মতো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে সরকার ‘ইলেকট্রিক ভেহিকল নীতিমালা’ প্রণয়নের কাজের অংশ হিসেবে বিদ্যুতচালিত গাড়ি চালু করার আগ্রহ প্রকাশ করে। ২০১৫ সালের জুন মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকালে এ বিষয়ে ২০০ কোটি ডলারের একটি সমঝোতা চুক্তি হয়। এই চুক্তির আওতায় বিআরটিসির জন্য ৩০০টি বিদ্যুৎচালিত দ্বিতল এসি বাস সংগ্রহ করা হবে। তারই প্রথম চালানের ১০০ বাস অক্টোবরে ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ মে) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনের বুড়িগঙ্গা হলে বাস রুট র্যাশনালাইজেশন কমিটির ২৭তম সভায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের দুই মেয়র তাদের মতামত তুলে ধরেন। দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, চলতি বছরের মধ্যেই ঢাকায় নগর পরিবহনে চালু হবে বিদ্যুতচালিত বাস। এতে বায়ুদূষণের নগরীর তকমা থেকে বেরিয়ে ঢাকা ধীরে ধীরে পরিবেশবান্ধব শহরে পরিণত হবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি।
কবে নাগাদ রাজধানীর রাস্তায় বিদ্যুতচালিত বাস চলবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তাপস বলেন, ‘সেটাতো আপনাদের বলবো না। আপনাদের নির্ধারিত তারিখ বলে দিলে আর সেই তারিখের মধ্যে বাস নামাতে না পারলে আপনারা আবার জিজ্ঞাসা করে বসবেন, নির্ধারিত তারিখের মধ্যে পারলাম না কেন।’
তাপসের বক্তব্যে প্রশ্ন উঠছে বাস চালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে কি-না তা নিয়ে। এ ব্যাপারে সুপষ্ট কোনো তথ্য ঢাকার দুই মেয়রের কেউই জানাননি। একটি প্রস্তুতিহীন পদক্ষেপ মুখ থুবড়ে পড়তে পারে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি এবং পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, ঢাকা শহরে এখনও বাস রুট র্যাশনালাইজেশনের কাজ সম্পন্ন হয়নি, বাসগুলো যেখানে দাঁড়াবে সে জায়গা অধিগ্রহণও হয়নি, যেগুলো অন টেস্টে চললো সেগুলোর ফলাফল পর্যন্ত পাওয়া যায়নি এবং যেসব বিদ্যুৎচালিত বাস আসবে সেগুলোর ডিপো ও চার্জিং স্টেশন তৈরি হলো না, সেখানে এ বছরের মধ্যে বাস চলবে তা অনেকটাই অসম্ভব। এর জন্য যে লক্ষ্য ও প্রস্তুতি দরকার সেটির বড় রকমের দৃশ্যমান ঘাটতি রয়েছে। আমার কাছে এটা অনেকটা আগাম ‘বলার জন্য বলা কথা’ বলে মনে হয়।
তবে ঢাকা উত্তরের মেয়র মো.আতিকুল ইসলাম বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রিক বাসের জন্য চার্জিং স্টেশন তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হবে। এর আগে গত ৯ এপ্রিল ঢাকার যানজট নিরসনে ও পরিবেশ উন্নয়নে বিআরটিসির অধীনে অক্টোবর-নভেম্বরে ১০০ বিদ্যুৎচালিত গাড়ি নামবে বলে জানিয়েছিল সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
চার্জিং স্টেশন ও বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘাটতির পাশাপাশি সঠিক প্রস্তুতির ঘাটতিও রয়েছে মন্তব্য করে আকতার বলেন, এখানে প্রচুর ঘাটতি রয়ে গেছে। যেকোনা পদক্ষেপ যখন ঘাটতি নিয়ে শুরু করা হয় তখন সে কাজের সুফল দেখা যায় না। মানুষের মধ্যেও বিরূপ ধারণা তৈরি হয়। বাস চলার তথ্যের চাইতে কীভাবে চলবে ও তার জন্য প্রস্তুতি কেমন সেটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরণের কাজে যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে তারপর নামা উচিত।
তাপস বলেন, রাজধানীর ২১ নম্বর রুটে এসব বৈদ্যুতিক বাস চলাচল করবে। এ পথে অন্য কোনো বাস চলবে না। বাকিদের অনুমোদন বাতিল করা হবে। আপাতত এ রুটে বিআরটিসির বাস চলাচল করবে।
চলতি বছরেই বৈদ্যুতিক বাস চলাচলের সম্ভব্যতা উল্লেখ করে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, সরকারের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ভারতের সঙ্গে যে ঋণ চুক্তি হয়েছে, তাতে এটি দ্রুত বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করা যায়। বিদ্যুতচালিত বাস ঢাকার পরিবেশ ও ঢাকার যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে শুধু বাস আনলেই তো হবে না, অবকাঠামো নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আশা করতে পারি, চুক্তিতে সেসব অন্তর্ভুক্ত আছে। সেক্ষেত্রে এ বছরের মধ্যে বিদ্যুতচালিত বাস ঢাকা মহানগরে চলবে বলে ধারনা করা যায়। ঢাকার মতো এমন ঘিঞ্জি পরিবেশে যদি মেট্রোরেল হয়, তাহলে বিদ্যুতচালিত বাসের অবকাঠামো ও চার্জিং স্টেশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সম্ভব।
সার্বিক দিক বিবেচনায় ঢাকায় বিদ্যুতচালিত বাস চলাচল প্রসঙ্গে নগর পরিকল্পনাবিদরা মনে করেন, এ ধরনের বাস চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যুৎচালিত বাস পরিচালনা করা হলে ব্যবহারিক বিদ্যুৎ চাহিদা আরও বেড়ে যেতে পারে এবং শহরে বিদ্যুৎতের ওভারলোডিং হতে পারে। বর্তমান সময়ে দেশ বিদ্যুৎ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সেখানে বিদ্যুতচালিত বাসের জন্য উৎপাদন করা বিদ্যুতের সমস্যা নিরসনে আগে কাজ করতে হবে। তারপর বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হলে সেটা প্রয়োগের জন্য চার্জিং স্টেশন বানাতে হবে। তবেই এ বছরের মধ্যে বিদ্যুতচালিত বাস ঢাকার বুকে চলার সম্ভাবনা দেখা যাবে। এখন দেখার বিষয়, সেই প্রস্তুতি কতখানি ও কত দ্রুত এগোচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।