দীপক শর্মা দীপু, ইউএনবি (কক্সবাজার): ‘যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম, মইশখাইল্ল্যা পানর খিলি তারে বানাই হাবাইতাম’
‘মইশখাইল্ল্যা পানের খিলি, শাড়ির কোনত বাঁধি রাখি, ওগ্গ্যা মনের মানুষ পাইলে নিজের হাতে দিতাম হাবাই’
‘টেকনাইফ্ফা ছল সুয়ারি, মইশখাইল্ল্যা পান রে কি মাইয়া লাগাইলো মোরে ও সুন্দরী বোইনরে’
এরকম অসংখ্য জনপ্রিয় গান কক্সবাজারের পান নিয়ে রচিত হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজারের মিষ্টি পানের সুনাম বিশ্বজুড়ে রয়েছে। কারণ কক্সবাজারের মিষ্টি পান দেশের সীমানা পেড়িয়ে বিদেশেও যাচ্ছে।
কক্সবাজারের অর্থনৈতিক চাকা সচলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে পান চাষ। দেশ-বিদেশে কক্সবাজারের পানের চাহিদার কারণে কৃষকরা ঝুঁকছেন পান চাষে। পান চাষে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই পান চাষিদের মুখে হাসিও ফুটেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে কক্সবাজার জেলায় তিন হাজার ৬৫ হেক্টর জমিতে পানের চাষ হয়েছে। এই চাষ থেকে বাৎসরিক ৭৯ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন পানের উৎপাদন হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।
জেলা জুড়ে পান চাষ হয়। এছাড়া শুধু মহেশখালীতেই এক হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি পান চাষ করা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন বাজার থেকে ট্রাকে ট্রাকে করে চট্টগ্রাম, ঢাকা, রংপুর, রাজশাহীসহ পাইকারি ব্যবসায়ীরা এই মিষ্টি পান নিয়ে যায়।
মহেশখালির গোরকঘাটা পানবাজার ঘুরে দেখা যায়, পান ভর্তি শত শত ঝুড়ি বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছে বিক্রেতারা, বাজারের পাশে দাঁড়িয়ে আছে ট্রাক, এখান থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম-দর করে নিয়ে যায় চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
পান সাধারণত ‘বিরা’ এককে বিক্রয় করা হয়। এক বিরায় বাজার ভেদে ৫০ থেকে ৭০ গন্ডা পান। আর এক গন্ডায় থাকে চারটি পান।
বর্তমানে মিষ্টি পান পাইকারি বাজারে আকার ভেদে প্রতি বিরা পান ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয় বলে জানান গোরকঘাটা পান বাজার সমিতির সভাপতি সুভাষ ঘোষ।
গোরকঘাটা পান বাজার সমিতির কোষাধ্যক্ষ শীপন ঘোষ জানান, সপ্তাহের মঙ্গল ও শুক্রবার দুইদিন পানের হাট বসে মহেশখালীতে। সেখান থেকে বেপারিরা মিষ্টি পান কিনে নিয়ে যায় দেশের বিভিন্ন জায়গায়। বাজারে প্রতিদিনে প্রায় ২৭ লাখ টাকার বেশি পান বিক্রি হয়। সে হিসাবে একটি বাজারে লেনদেন হয় প্রতি মাসে দুই কোটি টাকারও বেশি।
সাগর পাড়ের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী। এখানকার অধিকাংশ মানুষের অন্যতম পেশা পান চাষ। পাহাড়ি ভূমি হওয়ায় পান চাষ এখানকার জন্য উপযোগী। তবে সমতল ভূমিতে শুধু ছয় মাস পান চাষ হয়। আর পাহাড়ি ভূমিতে সারা বছরই পান চাষ হয়।
পানচাষিরা জানান, এই পান চাষ করা এত সহজ নয়।
মহেশখালীর মিষ্টি পান চাষী বাবুল দে জানান, নিয়মিত বেশ পরিচর্যার মাধ্যমে তিন মাস পর গাছ থেকে পান পাতা পাওয়া যায়, একটি গাছ তিন বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. কবির হোসেন জানান, কক্সবাজার জেলা পানের জন্য বিখ্যাতl সারাদেশসহ বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পান থেকে বড় অংকের আয় হয়। যা কক্সবাজারের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।