ধর্ম ডেস্ক : কোরবানি ইসলামি শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। রাসুলুল্লাহ (স.) হিজরতের পর প্রতিবছর কোরবানি করেছেন। তিনি কখনও কোরবানি পরিত্যাগ করেননি; বরং সামর্থ্য থাকার পরও যে কোরবানি করে না, হাদিসে তার নিন্দা করা হয়েছে। তার সম্পর্কে নবীজি (স.) বলেছেন, ‘..সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ (মুস্তাদরাকে হাকেম: ৩৫১৯; আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব: ২/১৫৫)
হজ জীবনে একবার ফরজ হলেও কোরবানি প্রতিবছর একবার দিতে হয়। কারো ওপর কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ একবছর অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়, বরং ১০ জিলহজ ফজরের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তাকে কোরবানি দিতে হবে। জিলহজের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ এই তিনদিনের যেকোনো দিন কোরবানি করা যায়। তবে সম্ভব হলে ১০ তারিখেই কোরবানি করা উত্তম।
নেসাব হলো- স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত ভরি (বর্তমানে টাকার অঙ্কে ৫ লাখ তিন হাজার টাকা)। আর রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন ভরি। আর অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের সম্পদ। (টাকার অঙ্কে ৫৫ হাজার টাকা)
নেসাব পরিমাণ সোনার বাজারমূল্য
জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে কারো কাছে সাড়ে ৭ তোলা/ভরি সোনা থাকলে তার ওপর কোরবানি আবশ্যক। সোনার পরিমাণকে নেসাব ধরলে টাকার পরিমাণ হবে—
> ২২ ক্যারেট মানের সোনার প্রতি ভরি/তোলা দাম ৯৮ হাজার ৪৪৪ টাকা হিসেবে সাড়ে ৭ ভরির দাম- ৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকা।
> ২১ ক্যারেট সোনার প্রতি ভরি/তোলা ৯৩ হাজার ৯৫৪ টাকা হিসেবে সাড়ে ৭ ভরির দাম- ৭ লাখ ৫ হাজার টাকা।
> ১৮ ক্যারেট সোনার প্রতি ভরি/তোলা ৮০ হাজার ৫৪০ টাকা হিসেবে সাড়ে ৭ ভরির দাম- ৬ লাখ ৪ হাজার টাকা।
> সনাতন পদ্ধতির সোনা প্রতি ভরি ৬৭ হাজার ১২৬ টাকা হিসেবে সাড়ে ৭ ভরির দাম- ৫ লাখ ৩ হাজার টাকা।
এ দাম ওঠানামা করতে পারে। সেক্ষেত্রে বাজার দর হিসাব করে নেসাব নির্ধারণ করতে হবে। সুতরাং যারা স্বর্ণের নেসাবে কোরবানি দেবেন, তাদের জন্য ৫ লাখ ৩ হাজার টাকা বা সমপরিমাণ সম্পদ জিলহজ মাসের ১০-১২ তারিখ (এ তিনদিন) মালিকানায় থাকলে কোরবানি দেওয়া আবশ্যক।
নেসাব পরিমাণ রুপার বাজারমূল্য
জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে কারও কাছে সাড়ে ৫২ তোলা/ভরি রুপা থাকলে কোরবানি আবশ্যক। রুপার পরিমাণকে নেসাব ধরলে টাকার পরিমাণ হবে—
> ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি রুপার মূল্য ১৮০০ টাকা হিসাবে সাড়ে ৫২ তোলা রুপার দাম হয় ৯৪ হাজার ৫০০ টাকা।
> ২১ ক্যারেটের রুপার প্রতি ভরি ১৭০০ টাকা হিসাবে সাড়ে ৫২ তোলা রুপার দাম হয় ৮৯ হাজার ২৫০ টাকা।
> ১৮ ক্যারেটের রুপা প্রতি ভরি ১৪০০ টাকা হিসাবে সাড়ে ৫২ তোলা রুপার দাম হয় ৭৩ হাজার ৫০০
> সনাতন পদ্ধতির রুপা প্রতি ভরি ১০৫০ টাকা হিসাবে সাড়ে ৫২ তোলা রুপার দাম হয় ৫৫ হাজার ১২৫ টাকা।
তাই কারো কাছে যদি সর্বনিন্ম ৫৫ হাজার টাকাও থাকে তবে তাকে রুপার নেসাব পরিমাণ অর্থের বিধান অনুযায়ী কোরবানি দিতে হবে।
সুতরাং পরিবারের খরচ মেটানোর পর যদি জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ নির্ধারিত পরিমাণ সোনা বা রুপা থাকে কিংবা বাজার দর অনুযায়ী সমপরিমাণ টাকা অর্থাৎ ৫৫ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা থাকে তবে ওই ব্যক্তির জন্য কোরবানি করা আবশ্যক।
কয়েকটি শর্তসাপেক্ষে বান্দার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়। শর্তগুলো হলো—১) মুসলিম হওয়া। ২) প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়া। ৩) সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হওয়া। পাগল সম্পদের মালিক হলেও কোরবানি ওয়াজিব হবে না। ৪) স্বাধীন ব্যক্তি হওয়া। দাসের ওপর কোরবানি আবশ্যক না। ৫) মুকিম হওয়া অর্থাৎ কোনো স্থানে ১৫ দিনের বেশি সময়ের জন্য স্থায়ী হওয়া। মুসাফিরের ওপর কোরবানি আবশ্যক নয়। ৬) জাকাত ফরজ হয় এই পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া।
—সোনা-রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে, কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায়, তাহলেও তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব।
—নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের ওপর শুধুমাত্র একটি কোরবানি ওয়াজিব হয়। অনেক সম্পদের মালিক হলেও একটি কোরবানিতেই ওয়াজিব আদায় হবে। অবশ্য একাধিক পশু কোরবানি করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে।
—কোরবানি শুধুমাত্র নিজের ওপর ওয়াজিব হয়। তাই সন্তানের পক্ষ থেকে কোরবানি দেওয়া পিতার ওপর ওয়াজিব নয়। অবশ্য নাবালিগ বা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নয় এমন সন্তানের পক্ষ থেকে কোরবানি করলে সওয়াবের অধিকারী হবেন।
—কোনো নারী নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার ওপরও কোরবানি ওয়াজিব হবে। একান্নভুক্ত পরিবারের মধ্যে একাধিক ব্যক্তির কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তাদের প্রত্যেকের ওপর ভিন্ন ভিন্ন কোরবানি ওয়াজিব।
—যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয় এমন দরিদ্র ব্যক্তি কোরবানি করলে তার কোরবানি শুদ্ধ হবে এবং অনেক সওয়াব লাভ করবে। এমন দরিদ্র লোক কোরবানির উদ্দেশ্যে পশু ক্রয় করলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়ে যায়।
—যে সকল হাজি কোরবানির সময় মক্কা, মিনা ও মুজদালেফা মিলে ১৫ দিন থাকবে তারা মুকিম। নেসাবের মালিক হলে হজের কোরবানি ছাড়াও তাদের ওপর ঈদুল আজহার কোরবানি ওয়াজিব। আর যারা মুসাফির, তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়।
— কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য কোরবানির ৩ দিনই মুকিম থাকা জরুরি নয়। বরং কেউ যদি এ ৩ দিনের শুরুর দিকে মুসাফির থাকে আর শেষ দিকে মুকিম হয়ে যায় তবে তার নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তার কোরবানি ওয়াজিব হবে। আর কেউ যদি এ ৩ দিনের শুরুতে মুকিম থাকে এবং শেষের দিকে মুসাফির হয়ে যায় তাহলে তার ওপরে কোরবানি ওয়াজিব হবে না।
(তথ্যসূত্র: দুররুল মুখতার, পৃষ্ঠা-২১৯, খণ্ড-৫; আলমুহিতুল বুরহানি:৮/৪৫৫; ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া: ১৭/৪০৫; কিফায়াতুল মুফতি: ৮/১৭৮; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/২৯৩; বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৮, ২৩; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/২৯৫)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকদেরকে যথাযথভাবে কোরবানি আদায় করার মাধ্যমে তার নৈকট্য অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
কত টাকা থাকলে কোরানি ফরজ, কত টাকা থাকলে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।