পোষা পাখি হচ্ছে সেই সব পাখি, যেসব বুনো পাখিকে ধরে খাঁচায় বন্দি করে রাখলেও সুস্থ থাকে, সজীব থাকে, নিয়মিত খাবার খায় ও উপযুক্ত পরিবেশ পেলে ডাকাডাকি করে বা গান গায় এবং উপকরণ ও জায়গা থাকলে বাসা বাঁধে ও ডিম পেড়ে সেই ডিম তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। সেই বাচ্চাদের খাওয়ায় ও আদর করে। এসব পাখিই হচ্ছে পোষা পাখি। খাঁচা ছোট হতে পারে, মাঝারি হতে পারে আবার অনেক বড়ও হতে পারে।
মুক্ত পোষা পাখি: যেসব পাখি পোষ মানার পর খাঁচা থেকে ছেড়ে দিলেও উড়ে চলে যায় না, পোষক বা পোষকদের আশপাশেই থাকে, ডাক দিলে উড়ে এসে হাতে, ঘাড়ে বা মাথায় বসে, বিশ্রামের সময় হলে খাঁচায় ঢুকে পড়ে, তারাই হচ্ছে মুক্ত পোষা পাখি। এদেরকে ছেড়ে দিয়েও পোষা চলে দিব্যি।
এ রকম পাখির উদাহরণ হচ্ছে: আমাদের জাতীয় পাখি দোয়েল (ম্যাগপাই রবিন), কমলাবউ (অরেঞ্জ হেডেড গ্রাউন্ড থ্রাস), ভীমরাজ (র্যাকেট টেইল্ড ড্রোঙ্গো), ডাহুক (হোয়াইট ব্রেস্টেড ওয়াটার হেন), কালিম (পার্পল মুরহেন), কোড়া (কোরা), বুলবুল (রেড ভেন্টেড বুলবুল) ও ডুংকর (ইন্ডিয়ান মুরহেন)। তবে পোষক ভালো না হলেও পোষা পাখিটির বয়স (পোষাকালীন বয়স) একটু বেশি হলে এবং বাচ্চা অবস্থা থেকে পুষতে শুরু করলেই কেবল মুক্ত পোষা পাখি পাওয়া যেতে পারে। মুক্ত পোষা পাখি কালিম ডিম-বাচ্চাও দেয়, পোষা মুরগির মতো বাচ্চাদের নিয়ে চরাইও করে।
কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদী জেলার কিছু এলাকায়, শেরপুর জেলার একটি এলাকায় ও বাগেরহাট জেলার একটি গ্রামে আমি এ রকম মুক্ত পোষা কালিম ও তাদের কুশি কুশি ছানাদের দেখেছি। কিশোর বয়সে আমি দোয়েল, ডাহুক, হালতি, বনকোয়েল, বড় হালতি, কমলাবউ ও ডুংকর পোষার চেষ্টা করেছিলাম।
বন্দি পোষা পাখি: যেসব পাখি খাঁচাবন্দি করা ছাড়া পোষা চলে না, সুযোগ পেলেই উড়ে পালিয়ে যায়, তারাই হচ্ছে বন্দি পোষা পাখি। এ দলে সব পোষা পাখিকেই ফেলা চলে।
খাঁচায় অভ্যস্ত পোষা পাখি: যেসব পাখি খাঁচার জীবনে অভ্যস্ত হয়ে যায়, চুপচাপ থাকে, খাঁচা থেকে পালাবার জন্য ছটফট করে না বা খাঁচা ভেঙে পালাবার কসরত করে না, তারাই হচ্ছে খাঁচায় অভ্যস্ত পোষা পাখি। এ দলে পড়ে তিলা ঘুঘু (স্পটেড ডাভ), ভাত-শালিক (কমন ময়না), সবুজ ঘুঘু (ব্রাঞ্জড উইংড ডাভ), শ্যামা ইত্যাদি।
খাঁচায় ছটফট পাখি: যেসব পাখি দিনের বেশিরভাগ সময়ে খাঁচা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ছটফট করে, ফাঁক-ফোঁকর খোঁজে ও ঠোঁট-পা চালিয়ে খাঁচা ভেঙে পালানোর কসরত করে, তারাই পড়ে এই দলে। খাঁচায় অভ্যস্ত পোষা পাখিদের মনোভাব যেমন- ‘খাঁচায় খুব সুখেই আছি, নিরাপদে আছি,’।
খাঁচায় ছটফট পাখিদের স্বভাব ঠিক এর উল্টো। হাবভাবে ওরা সব সময় প্রকাশ করে যে, ‘খাঁচার ভেতরে বড্ড যন্ত্রণায় আছি। মুক্তি পেতে চাই।’ এ দলে আছে টিয়া (আলোক্সজাড্রিন প্যারাকিট), লালবুক টিয়া (রেড ব্রেস্টেড প্যারাকিট), কন্ঠি টিয়া (রোজ রিংগড প্যারাকিট), লটকন (লরি কিট), ময়না (হিল ময়না), সিপাহি বুলবুল (রেড হুইসকার্ড বুলবুল) ও অন্যান্য পাখি। টিয়ারা তো সুযোগ পেলেই খাঁচার শিক কেটে পালায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।