আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দক্ষিণ ভারতের একটি জনপ্রিয় খাবার দোসা বা দোসাই। প্রতিদিন সকালের নাশতা হিসেবে লক্ষ লক্ষ ভারতীয়ের থালায় ওঠে তৃপ্তিদায়ক ও স্বাস্থ্যকর নিরামিষ খাবার দোসাই। এটি ডেমোক্রেট দলীয় সম্ভাব্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিসের অন্যতম প্রিয় ভারতীয় খাবার।
দোসাই প্রায় দুই হাজার বছরের পুরনো একটি খাবার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে খাবারটি আরও বেশি জনপ্রিয় হয়েছে। দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্য তামিলনাড়ু এবং কর্ণাটক উভয়ই এটিকে নিজেদের বলে দাবি করে। দোসাইয়ের প্রকৃত মালিক কে তা নিয়ে বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও, ১৯ শতক থেকে যে ক্রিস্পি দোসাইয়ের সঙ্গে আমরা পরিচিত এর কৃতিত্ব কর্ণাটকের উডুপি অঞ্চলের শেফদের। এর আগ পর্যন্ত দোসাই ছিল নরম, তুলতুলে এবং লেসি ক্রেপ। কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে এমটিআর টিফিন (১৯২৪ সালে খোলা) এবং বিদ্যার্থী ভবন (১৯৪৩ সালে খোলা) এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলি কয়েক দশক ধরে সুস্বাদু দোসাই তৈরি করে চলেছে।
২০০৩ সালে, চেন্নাই-ভিত্তিক সারাভানা ভবন চেইন দুবাই থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশে দক্ষিণ ভারতীয় রেস্তোরাঁ খোলার মাধ্যমে দোসাইয়ের জনপ্রিয়তাকে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যায়। বর্তমানে সারা বিশ্বেই ভোজনরসিকদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় দোসাই। বিশেষ করে ভারতীয় প্রবাসীরা বিশ্বের যে প্রান্তেই থাকেন দোসাই তৈরী হয় এমন রেঁস্তরাগুলোতে নিয়মিতই ঢুঁ মেরে থাকেন তারা। যে কারণে চেন্নাইয়ের প্যারি’স কর্নার থেকে প্যারিসের উপকণ্ঠে লা চ্যাপেল (তামিল জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত) এলাকাতে হাত বাড়ালেই মেলে দোসাই।
ভারতীয় খাদ্য বিশারদদের মতে, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বর্তমানে প্রায় ৭০ ধরনের দোসাই তৈরী হয়ে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় ‘মাসালা দোসাই’। দোসাই নানা ধরনের চাটনি অথবা সম্ভার যোগে পরিবেশন করা হয়। সঙ্গে থাকে বিভিন্ন ধরনের ডাল, মরিচ, লবণ ও নানা সুগন্ধি মসলা দিয়ে তৈরী করা ইডলি পডি।
২০১৯ সালে ডেমোক্রেট দলীয় ফোরামে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস মার্কিন অভিনেত্রী মিন্ডি কলিংয়ের সঙ্গে ‘মাসালা দোসা’ তৈরীর একটি ভিডিও টুইটারে শেয়ার করেন। সে সময় ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। হ্যারিস বলেছিলেন, ‘আমি দক্ষিণ ভারতীয় খাবার খেয়ে বড় হয়েছি– প্রচুর ভাত, দই, আলুর তরকারি ও ঝাল ইডলি– যেটি প্রচুর ঝাল।’
দক্ষিণ ভারতে দোসাই একটি নিছক সকালের নাস্তা বা ফাস্ট ফুড আইটেমের চেয়ে বেশি পবিত্র খাবার। এটি বিভিন্ন মন্দিরে দেবতাদের নৈবেদ্য হিসেবে পরিবেশন করা হয়। আর ‘টেম্পল কুইজিন’ হিসেবে এটির রেসিপিও সুরক্ষিত। কখনও কখনও পুরানো মন্দিরের শিলালিপি অনুসরণ করে এটি তৈরী করা হয়।
গাঁজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দোসাই তৈরী হয় বলে স্বাস্থ্য সচেতন লোকদের মধ্যেও দোসাই ব্যাপক সমাদৃত। ‘প্রোবায়োটিক’ গুণাবলীর কারণে এটি একটি দেশীয় ভারতীয় সুপারফুড হিসাবে বিবেচিত হয়। দোসাই তৈরীর জন্য চাল, কালো ছোলা এবং কয়েকটি মেথি বীজের ভেজানো ত্রয়ী কিছু পানি দিয়ে গুঁড়া করা হয়। এরপর এটি সাত থেকে আট ঘন্টার জন্য প্রাকৃতিকভাবে গাঁজন করার জন্য একটি পাত্রে স্থানান্তরিত হয়। গাঁজন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পিষানোর পরে কয়েক চামচ লবণ যোগ করা হয়।
মাইক্রোবায়োলজিস্ট ডঃ নবনীথা টি দোসাই তৈরীতে গাঁজন প্রক্রিয়ার উপকারিতার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘এটি অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্টস (যেমন ফাইটিক অ্যাসিড) এবং এনজাইম ইনহিবিটর কমাতে সাহায্য করে, এইভাবে এটি খাওয়ার জন্য একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার তৈরি করে।’
প্রাচীন আয়ুর্বেদ গ্রন্থে ‘দোসাকা’ নামে অভিহিত দোসাই, ব্যক্তি বিশেষের চিকিৎসা মেনুতেও এটি রাখতেন আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।