সুইচোরারা বেশ চালাক পাখি। দেখতেও খুব সুন্দর। সবার চোখেই যেন কাজল টানা। বেশ লম্বা-বাঁকা ঠোঁট। উজ্জ্বল চোখ। পোকা ধরতে যখন ওড়ে খুব সুন্দর লাগে। ডানা ঝাঁপটিয়ে, বিমানের মতো বাতাসে ভাসতে পারে ওরা। যে কোনো অ্যাঙ্গেলে ঝট করে উড়ে যেতে পারে। পোকামাকড়, কীটপতঙ্গের জন্য ওরা ওঁৎ পেতে থাকে ছোট ছোট গাছে, ঝোপ-ঝাড়ের মাথায়। কণ্ঠস্বর মিষ্টি। ‘টিউ টিউ টিউ, ছিট ছিট ছিট’ ধরনের ডাক। দলে থাকতে পছন্দ করে, মাটিতেও বসে।
সুইচোরাদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, লম্বাটে ডানা, খাটো পা, লম্বা লেজ, লম্বা ঠোঁট ও চোখে কাজল। পুরুষ ও মেয়ে পাখি দেখতে একই রকম। যদিও ওরা পতঙ্গভুখ, তবে মৌমাছিও খায়-যা মোট খাদ্যের ১৫ ভাগ। ওদের ইংরেজি নাম Bee eater অর্থাৎ মৌমাছিভুখ। অবশ্য মৌমাছি খেতে ওরা খুব পছন্দ করে। শুধু মৌমাছি নয়, যে কোনো পোকাই ওরা উড়ে গিয়ে ধরুক না কেন, শব্দ হবে ‘চট’ করে। সুইচোরা পৃথিবীতে আছে ২৪ রকমের। সবচেয়ে ছোটটির মাপ ৬ ইঞ্চি, বড়টি ১৪ ইঞ্চি। সবারই আচার-আচরণ, ওড়ার ধরন, বাসার গড়ন ও খাদ্য তালিকা একই রকম। সবারই শরীরে সবুজ রঙের আধিক্য। বাসা করে পাহাড়-টিলা, নদী-নালার পাড়ের মাটিতে গর্ত খুঁড়ে।
৪ ধরনের সুইচোরা পাখির কথা বলা যায়:
১. পিঙ্গল-মাথা সুইচোরা (Chestnutheaded Bee-eater, Merops leschenaulli)
২. নীললেজা সুইচোরা (Bluetarited Bee-eater, Merops Philippinus): এরাও লম্বায় প্রায় ২২ সেন্টিমিটার।
৩. সবুজ সুইচোরা (Green Bee-eater, Merops orientalis): এরা লম্বায় প্রায় ২১ সেন্টিমিটার।
৪. পাহাড়ি বড় সুইচোরা (Blue Bearheaded Bee-eater, Nyctyornis athertoni): সুঁই নেই। এদের মাপ ৩৫ সেন্টিমিটার।
আমাদের দেশে বাসা বাঁধার মৌসুম হচ্ছে বর্ষা ও হেমন্ত বাদে অন্য সব ঋতু। বছরে দুবার বাসা করে। বাসার জায়গা নির্বাচন করে ওরা খুব হিসাব-নিকাশ কষে। জায়গা নির্বাচনে লাগায় ২-৬ দিন। দুজনে মিলে গর্ত খোঁড়ে ঠোঁট ও পা দিয়ে। গর্তের মুখ ছোট রাখে, ভেতরে ক্রমশ তা বাড়ে। যেখানে ডিম পাড়ে, সেখানটা বেশ গোলাকার করে নেয়। গর্ত খোঁড়া শেষ হয় ৪-৭ দিনে। ডিম পাড়ে ৬টা। কমবেশিও হয়। তবে ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে ডিম ওই ৬টাই।
ডিমে তা দেয় দুজনে পালা করে। প্রজাতিভেদে ডিম ফোটে ২১-২৭ দিনে। এ সময়ে বৃষ্টি বা বন্যা হলেও ওদের গর্ত ডোবে না, জল জমে না। মাটি যাচাই ও সবদিক বিবেচনা করে যেভাবে গর্ত খোঁড়ে, তাতে অবাক না হয়ে পারা যায় না। সারাদিন হয়তো নীললেজ সুইচোরার ডিম, ছবি ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক এলাকা থেকে তোলা প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হল, খাবার খেতে পারল না, অথচ রাতে হয়তো ফুটফুটে জোছনা, সে রকম রাতে আমি ওদের খাবার খুঁজতে, উড়তে দেখেছি। ওদের ভুতুম ও বনবিড়ালের কবলে পড়তেও দেখেছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।