ঢাকা শহরের প্রতিটি ফ্ল্যাট ও বাড়ির মালিককে আয়কর রিটার্নের আওতায় আনা হবে। কার কয়টি বাড়ি, ফ্ল্যাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেই তথ্য যাচাই করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) মধ্যে তথ্য বিনিময়ে সমঝোতা স্মারক সই করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর মধ্যে দিয়ে এনবিআর নতুন করদাতা শনাক্ত করবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) মধ্যে তথ্য বিনিময়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়। এসময় এনবিআর সদস্য (কর তথ্য ব্যবস্থাপনা ও সেবা) মোহাম্মদ জাহিদ হাছানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান ও ডিপিডিসির এমডি প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এনবিআরের পক্ষে সিস্টেম ম্যানেজার ফজলুর রহমান এবং ডিপিডিসির পক্ষে উপসচিব ও কোম্পানি সচিব মো. আসাদুজ্জামান সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।
অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিম বলেন, ঢাকা শহরের প্রতিটি ফ্ল্যাট ও বাড়ির মালিকদের আয়কর রিটার্নের আওতায় আনতে চাই। কার কয়টি বাড়ি, ফ্ল্যাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেই তথ্য জানতে চাই। তাদের করনেটের আওতায় আনতে চাই। সে কারণেই ডিপিডিসির সঙ্গে এপিআই করা হয়েছে। সমঝোতা স্মারক সইয়ের মাধ্যমে তথ্য বিনিময় করা হবে।
তিনি আরো বলেন, এনবিআর মনে করে ঢাকা শহরে এক বা একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাটের মালিকের রিটার্ন দাখিলের সক্ষমতা রয়েছে। এদের অনেকেই রিটার্ন দাখিল করেন না, করনেটের বাইরে রয়েছেন। এক বা একাধিক বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাটের মালিকের নামেই ডিপিডিসির মিটার নির্ধারিত থাকে। তাই ডিপিডিসির সঙ্গে পারস্পরিক তথ্য বিনিময় হলে করনেট বৃদ্ধির পাশাপাশি রাজস্ব আয়ও বাড়বে। এক্ষেত্রে ইটিআইএন ডাটাবেইজের তথ্য বিনিময় একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। বিশেষ করে কোম্পানি করদাতাদের ধারণাপ্রসূত কর নিরূপণের পরিবর্তে সঠিক তথ্যভিত্তিক কর নিরূপিত হবে। অযাচিত দায় ও হয়রানি কমবে।
রহমাতুল মুনিম বলেন, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করায় রাজস্ব ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে সব শ্রেণির বিদ্যুৎ গ্রাহকের নতুন সংযোগ গ্রহণ এবং পুরাতন সংযোগ বহাল রাখার জন্য করদাতা শনাক্তকরণ সংখ্যার (টিআইএন) সঠিকতা যাচাইয়ের পাশাপাশি করনেট সম সম্প্রসারণসহ কর নির্ধারণী প্রক্রিয়া সহজ হবে।
বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ডিপিডিসির দাপ্তরিক কাজের সুবিধার্থে সব বিদ্যুৎ গ্রাহকের (করদাতা) ইটিআইএন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা ও যাচাইয়ের জন্য এনবিআরের ইটিআইএন ডাটাবেজের তথ্য বিনিময়ের লক্ষ্যে দুই সংস্থার একযোগে কাজ করা এবং পারস্পরিক আন্তঃসহযোগিতার বিষয়টি অত্যন্ত সময়োপযোগী। ভবিষ্যতে এ বিভাগের অধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে।
অনুষ্ঠানে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতে এ ধরনের আন্তঃসংস্থার মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও তথ্য বিনিময়ের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। নতুন করদাতা চিহ্নিত করা, সঠিকভাবে প্রযোজ্য কর নিরূপণ করা এবং করনেট বৃদ্ধির লক্ষ্যে পারস্পরিক তথ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি), বিআরটিএ, বিএফআইইউ, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর, বিভা, বেপজা, আইবাস সফটওয়ার (অর্থ মন্ত্রণালয়) ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এনবিআরের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন করদাতারা সঠিক তথ্যপ্রাপ্তি-প্রদান নিশ্চিত হয়েছে, একইভাবে কর্মকর্তাদের কর আহরণ কার্যক্রমে অধিকতর স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা সুনিশ্চিত হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে তথ্যউপাত্ত যাচাই বিষয়ে যৌথভাবে কাজ করার লক্ষ্যে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সম্পাদিত হয়েছে।
এর আগে বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতের করদাতা শনাক্তে সহযোগিতা চেয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরে কয়েক দফায় চিঠি দিয়েছিল এনবিআর চেয়ারম্যান। এ বিষয়ে চিঠি ও এনবিআর সূত্রানুসারে জানা যায়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অধীনে চারটি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ও দুটি সংস্থা রয়েছে। চারটি বিতরণ কোম্পানি হলো-ডিপিডিসি, ডেসকো, নেসকো ও ওজোপাডিকো। আর দুটি সংস্থা হলো-পল্লী বিদ্যুৎ ও পিডিবি। যেখানে সারা দেশে আবাসিক গ্রাহকের সংখ্যা চার কোটি ১৯ লাখ। আর বাণিজ্যিক সংযোগ রয়েছে চার লাখ ৮৬ হাজার। অন্যদিকে দেশে গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানি রয়েছে ছয়টি। এগুলো হলো— তিতাস গ্যাস, কর্ণফুলী ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড এবং সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড। এখানে সারা দেশে আবাসিক ও বাণিজ্যিক বৈধ গ্যাস সংযোগ গ্রহণকারী প্রায় ৪৪ লাখ গ্রাহক।
এছাড়া করের আওতা বৃদ্ধি ও আয়কর ফাঁকি বন্ধ করতে মোটরযান ও নৌযান, সব ধরনের ট্রেড লাইসেন্স এবং ঠিকাদার তালিকাভুক্তি কিংবা নবায়নে আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক করতে সেতু ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও নৌ-পরিবহনসহ ১০টি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দেয় প্রতিষ্ঠানটি। চলতি অর্থবছরে করযোগ্য আয় করা ছাড়াও ৪০ ধরনের সেবা প্রাপ্তিতে একজন ব্যক্তির আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে— গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে অবশ্যই রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে। শুধু তাই নয়, রিটার্ন দাখিলের প্রাপ্তি স্বীকারের প্রমাণ দেখাতে না পারলে বিচ্ছিন্ন করা হবে করদাতার গ্যাস কিংবা বিদ্যুতের লাইন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।