Close Menu
Bangla news
    Facebook X (Twitter) Instagram
    Bangla news
    • প্রচ্ছদ
    • জাতীয়
    • অর্থনীতি
    • আন্তর্জাতিক
    • রাজনীতি
    • বিনোদন
    • খেলাধুলা
    • শিক্ষা
    • আরও
      • লাইফস্টাইল
      • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
      • বিভাগীয় সংবাদ
      • স্বাস্থ্য
      • অন্যরকম খবর
      • অপরাধ-দুর্নীতি
      • পজিটিভ বাংলাদেশ
      • আইন-আদালত
      • ট্র্যাভেল
      • প্রশ্ন ও উত্তর
      • প্রবাসী খবর
      • আজকের রাশিফল
      • মুক্তমত/ফিচার/সাক্ষাৎকার
      • ইতিহাস
      • ক্যাম্পাস
      • ক্যারিয়ার ভাবনা
      • Jobs
      • লাইফ হ্যাকস
      • জমিজমা সংক্রান্ত
    • English
    Bangla news
    Home করোনাকালীন অর্থনৈতিক অবস্থার সালতামামি
    অর্থনীতি-ব্যবসা মুক্তমত/ফিচার/সাক্ষাৎকার

    করোনাকালীন অর্থনৈতিক অবস্থার সালতামামি

    জুমবাংলা নিউজ ডেস্কJanuary 6, 202110 Mins Read
    মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া
    Advertisement

    মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া : বছরের গোড়ার দিকে চীন দেশে করোনাভাইরাসের উত্পত্তি হলে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই এ ভাইরাস ইউরোপ-আমেরিকাসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম রোগী ধরা পড়ে। ক্রমান্বয়ে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে থাকলে মার্চ মাসের শেষ দিক থেকেই সরকার দেশে ছুটি ও লকডাউন ঘোষণা করে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আগেই জীবন ও জীবিকা বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে সরকার ও শিল্পোদ্যোক্তারা অফিস-আদালত, কলকারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে ক্রমান্বয়ে খুলে দেন। প্রধানমন্ত্রী কৃষিজমির সদ্ব্যবহার ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।

    লকডাউন ও সাধারণ ছুটির মধ্যেও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ও খাদ্যসামগ্রী বিক্রয় ও পরিবহনে কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। ফলে চাল-ডাল, তেল-নুন, মসলা, সবজি, টয়লেট্রিজ, ওষুধ, মাছ-মাংস, দুধ-ডিম ইত্যাদির উৎপাদন, সরবরাহ ও বিক্রি স্বাভাবিক ছিল। কিছু নতুন দ্রব্য যেমন: স্যানিটাইজার, মাস্ক, পিপিই ও অন্যান্য সুরক্ষাসামগ্রীর উৎপাদন ও বাজার সৃষ্টি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প-কারখানা চালু করার জন্য এবং শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের কর্মজীবীদের কষ্ট লাঘবের জন্য বিভিন্ন প্যাকেজের মাধ্যমে সরকার ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করে।

    দেশের অর্থনীতি সচল রাখা গেলেও করোনা পরিস্থিতির পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। আজ ২০২০ ইংরেজি বছর শেষে সালতামামি করলে দেখা যাবে দেশের উৎপাদন, ভোগ, আমদানি-রফতানি, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, শিক্ষা-স্বাস্থ্য ব্যাংক ও আর্থিক খাত, প্রকল্প বাস্তবায়ন, সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও মুদ্রাস্ফীতি প্রভৃতি সূচকে যে প্রত্যাশা ছিল তার চেয়ে অর্জন কম হয়েছে।

    করোনা মহামারী সারা বিশ্বের জীবন ব্যবস্থা, অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে তছনছ করে দিয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকাসহ উন্নত দেশগুলো তুলনামূলক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব দেশে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা যেমন বেশি, অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাবও বেশি হয়েছে। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ, ডব্লিউএফপিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও থিংক ট্যাংক অর্থনৈতিক মন্দাসহ দারিদ্র্য বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।

    উপর্যুক্ত প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা ও মহামারীর বিস্তার তুলনামূলক কম সংকটাপন্ন হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা মহামারীর মতো অবস্থা মোকাবেলা বা প্রতিরোধে বাংলাদেশের সক্ষমতাই আবারো প্রমাণিত হয়েছে। একে একে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা ও সূচকগুলোর পর্যালোচনা করা যাক।

    ২০১৯-২০ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮ শতাংশের ঊর্ধ্বে থাকলেও অর্জিত হয়েছে ৫.২৪ শতাংশ, যা বৈশ্বিক তুলনায় সন্তোষজনক বলা যায়। মাথাপিছু জাতীয় আয় ২০৬৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ যেখানে উন্নত দেশগুলোতেও ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে সেখানে ২০২১ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৪ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। সরকারের অবশ্য প্রত্যাশা ৮ দশমিক ২। তবে বছর শেষেও করোনা মহামারীর যে দাপট তাতে মনে হয় না পরিস্থিতি অদূর ভবিষ্যতে স্বাভাবিক হবে। সেক্ষেত্রে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ অতিক্রম করাও কঠিন হবে।

    বৃহৎ শিল্প-কলকারখানার জন্য প্রদত্ত প্রণোদনা ব্যাংকগুলো সন্তোষজনকভাবে বিতরণ করতে পারলেও ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উদ্যোক্তারা নানা জটিলতায় প্রণোদনা ঋণ গ্রহণ করতে পারেননি। এক্ষেত্রে ঋণ প্রদান করা গেছে ২৫ শতাংশের মতো। কলকারখানায় উপাদন অব্যাহত থাকলেও সেগুলো ১০০ ভাগ ক্যাপাসিটিতে চলছে না। শিল্প-কারখানায় নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে খুবই কম। অপ্রাতিষ্ঠানিক ও স্বউদ্যোগী ব্যবসা, হোটেল-রেস্তোরাঁ, গণপরিবহন, বিমান পরিবহন, পর্যটন প্রভৃতি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশি। অনেকে চাকরি ও কর্ম হারিয়ে শহর থেকে গ্রামে চলে গেছে। কর্মসংস্থান হারানোর এ সংখ্যা বা পরিমাণ প্রায় ২০ শতাংশ। করোনা-পূর্ববর্তী গত এক দশকে গড়ে প্রায় ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও শিল্পায়ন বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি সামাজিক সুরক্ষা খাতে পর্যাপ্ত সহায়তা দেয়ার ফলে চরম দারিদ্র্যের সংখ্যা ১২ শতাংশের নিচে নেমে আসে। কিন্তু মহামারীতে ক্ষুদ্র আয়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী কর্ম হারিয়ে চরম দরিদ্র লোকের সংখ্যা ২২ শতাংশে নিয়ে যায়।

    বিআইডিএসের এক জরিপে জানানো হয়, প্রায় ১ কোটি ৬৪ লাখ লোক নতুন করে দরিদ্র হয়ে যায়। বেসরকারি সেক্টরে কর্মরত বহু কর্মজীবীর বেতন কমে যাওয়ায় অনেকে ঠিকমতো বাড়িভাড়া দিতে পারছে না। নিম্ন আয়ের মানুষজন পূর্ব সঞ্চয় ভেঙে কিংবা আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার করে জীবিকা নির্বাহ করছে। গার্মেন্টস শিল্পও শতভাগ ক্যাপাসিটিতে চলছে না। ইউরোপ-আমেরিকায় মহামারী পরিস্থিতি ভয়াবহ বিধায় অনেক তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানের রফতানি আদেশ স্থগিত কিংবা বাতিল হয়েছে। ফলে অনেক শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন।

    অর্থনৈতিক অবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হলো দেশের আমদানি-রফতানি। যদিও করোনা মহামারীর আগে থেকেই দেশের আমদানিতে নেতিবাচক অবস্থা বিরাজিত ছিল, করোনার কারণে দেশে ব্যবসা মন্দা হওয়ায় আমদানিতে ধস নামে। বাংলাদেশের মোট আমদানির ২৬ শতাংশ আসে চীন থেকে। করোনার প্রাথমিক পর্যায়ে এ আমদানি অনেকাংশে কমে যায়। অবশ্য পরবর্তী পর্যায়ে চীন থেকে আমদানি সচল হয়। ২০১৯-২০ অর্থ সালে সার্বিক আমদানি কমে ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত আমদানি হ্রাসের পরিমাণ ১২.৯৯ শতাংশ। বাংলাদেশের রফতানির ৫৬ শতাংশ যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নে এবং প্রায় ২৬ শতাংশ যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। উভয় দেশেই মহামারীর প্রকোপ, মৃত্যুহারের আধিক্য, লকডাউন ও ব্যবসা মন্দার কারণে অনেক রফতানি আদেশ স্থগিত হয় ও রফতানি কমে যায়। তবে গত বছরের মে-জুন মাসে বেশকিছু স্থগিতকৃত রফতানি আদেশ পুনর্বহাল হওয়ায় রফতানিতে ইতিবাচক ধারা ফিরে আসে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের মূল্য কম হওয়ায় এর চাহিদা তেমন কমেনি। তথাপি গত অর্থবছরের রফতানি তার পূর্ববর্তী বছরের  রফতানির চেয়ে ১৬.৯৩ শতাংশ কম। গত জুলাই থেকে রফতানি পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৩-৪ শতাংশ বেড়েছে।

    মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা বাংলাদেশের একটি বড় সাফল্য। যদিও মাঝে মাঝে চাল, আটা, সবজি ইত্যাদির দাম নাগালের বাইরে চলে যায়। সার্বিক মুদ্রাস্ফীতি ৬ শতাংশের নিচে থাকা স্বস্তিদায়ক।

    দেশে রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ গত দুই দশক ধরেই ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। মোট রাজস্বের প্রায় ৮৫ ভাগই আদায় করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। তবে জিডিপির অনুপাতে এ রাজস্ব আহরণ সন্তোষজনক নয়। এশীয় দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের কর-জিডিপির অনুপাত অনেক কম, যা বর্তমানে ৯ শতাংশের নিচে। অর্থ বিভাগ রাজস্ব সংগ্রহের যে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয় তা কোনো বছরই আদায় হয় না। করোনা মহামারীর কারণে ২০১৯-২০ সালের রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা কম। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আহরণে কিছুটা গতি আছে বলে মনে হচ্ছে। কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধিকল্পে রাজস্ব প্রশাসনে সংস্কার ও আধুনিকায়ন জরুরি।

    দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত অর্থবছরে যেমন দ্রুতগতিতে বেড়েছে, বর্তমান অর্থবছরেও তা অব্যাহত রয়েছে। ফলে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ ৪৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। করোনার কারণে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বিপর্যয় এবং হুন্ডি ব্যবসা কম হওয়ায় এবং সর্বোপরি বৈধ পথে ব্যাংকের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণে সরকার কর্তৃক ২ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ায় এখন বেশির ভাগ রেমিট্যান্স আসছে বৈধ পথে। এছাড়া আমদানি বাণিজ্য কমে যাওয়াও রিজার্ভ বৃদ্ধির আরেকটি অন্যতম কারণ। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকে যে রিজার্ভ সঞ্চিতি হয়েছে তা আগামী এগারো মাস আমদানি ব্যয় নির্বাহসহ সরকারের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে কাজে লাগবে। দেশে চলমান মেগা প্রকল্পে সঞ্চিত রিজার্ভ থেকে ঋণ গ্রহণ করে খরচ করা যায় কিনা, এ ব্যাপারে চিন্তাভাবনা হচ্ছে। এ বিষয়ে আর্থিক ও মুদ্রানীতিতে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়ের ক্ষেত্রে একবার বাজারে অর্থ সরবরাহ হয়, আবার ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে অর্থ সরবরাহে মুদ্রাস্ফীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা তা দেখতে হবে। বৈদেশিক ব্যাংকে বিনিয়োগ করে অল্প সুদ প্রাপ্তির বিপরীতে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা ঋণ দিয়ে অধিক সুদ প্রাপ্তির স্বপক্ষেও যুক্তি রয়েছে।

    আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে নতুন বিনিয়োগে দেখা গেছে মন্থর গতি। সেজন্য মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিও কম হয়েছে। চালু শিল্প-কারখানাগুলো টিকে থাকার জন্য চেষ্টা করছে। তবে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও যন্ত্রপাতি এবং রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশন প্রভৃতি ইলেকট্রনিকস দ্রব্যের উৎপাদন ও বিক্রি বেড়েছে। সে সঙ্গে লবণ, চিনি, ভোজ্যতেল, টয়লেট্রিজ, সিগারেট, আটা-ময়দা, পানীয় ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি উৎপাদন ও সরবরাহে তেমন ব্যাঘাত ও ক্ষতি হয়নি। দেশের মেগা প্রকল্প ও সরকারি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প চলমান থাকায় রড, সিমেন্ট ও অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী উৎপাদন শিল্পগুলো মুখ থুবড়ে পড়েনি। বিদ্যুৎ, গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহেও তেমন ব্যঘাত ঘটছে না।

    মহামারী মোকাবেলায় স্বাভাবিকভাবেই ওষুধ, স্যানিটাইজার, টিস্যু ও টয়লেট পেপার, অন্যান্য স্বাস্থ্যসম্পর্কিত সামগ্রী অধিক ব্যবহার হয়। এসব উৎপাদনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান ভালো ব্যবসা করছে।

    করোনা প্রাদুর্ভাবের প্রাথমিক পর্যায়ে আবাসন শিল্প অর্থাৎ রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় বেশ বড় ধাক্কা লাগে। তবে ভ্যাট হার কমানো, রেজিস্ট্রেশন খরচ কমানো এবং অপ্রদর্শিত অর্থ এ খাতে ঢালাওভাবে বিনিয়োগের সুবিধা দেয়ার কারণে এ শিল্পে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এছাড়া ৯ শতাংশ সুদে ব্যাংকঋণও পাওয়া যাচ্ছে।

    ব্যাংক খাতে নানা পরীক্ষা ও সংস্কারের কারণে এ খাত বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে। গত এপ্রিল মাস থেকে সরকারি আদেশে ব্যাংকঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা হয়েছে। সেজন্য আমানতকারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন আমানতের সুদহার ৬ শতাংশের কাছাকাছি। তবে ঋণখেলাপিদের হয়েছে পোয়া বারো। ২ শতাংশ কিস্তি প্রদান করে খেলাপি ঋণ রিসিডিউল করা গেছে। এছাড়া করোনাকালে কিস্তি পরিশোধ না করেও নতুন করে কেউ ঋণখেলাপি হননি। নতুন ঋণও পাচ্ছেন। ব্যাংক বিশেষজ্ঞদের মতে, যেখানে প্রায় চার লাখ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ ছিল, সেখানে উপর্যুক্ত নিয়মে রিসিডিউল করিয়ে বর্তমানে খেলাপি ঋণ ৯৫ হাজার কোটি টাকা দেখানো হচ্ছে। দেশে ইচ্ছাকৃত খেলাপির সংখ্যাই বেশি, যারা খেলাপি ঋণ পরিশোধ না করে পার পেয়ে যাচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন। ব্যাংক খাতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও সুস্থ প্রতিযোগিতার অভাব অনেক অর্থনীতিবিদকে এ খাত নিয়ে ভাবিয়ে তুলেছে।

    শেয়ারবাজার নিয়ে নানা নীতি কৌশল ও প্রণোদনা দিয়ে একে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। করোনাকালে দুই মাসেরও অধিক সময় শেয়ারবাজার বন্ধ ছিল। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়ানো ও মিউচুয়াল ফান্ডকে চাঙ্গা করতে না পারলে এ বাজারের ফাটকা ভাব দূর করা যাবে না। তাছাড়া আইসিবিকে আগের মতো সরাসরি শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ে আনতে হবে এবং ব্যাংকগুলোকেও শেয়ার লেনদেনে যুক্ত করতে হবে।

    সরকারি খাতের ২৫টি পাটকল এবং ছয়টি চিনিকল হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসানের কারণে যথাক্রমে ২০২০ সালের জুলাই ও ডিসেম্বরে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে কয়েক লাখ শ্রমিক বেকার হয়েছে। তাদের গ্র্যাচুইটি বা ক্ষতিপূরণের টাকা কবে পাবে তার ঠিক নেই। তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের বিষয়টিও ভাবতে হবে।

    দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করোনাকালে বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষা ব্যবস্থায় স্থায়ী ক্ষতের সৃষ্টি হচ্ছে। অটো প্রমোশন কিংবা যেনতেন মূল্যায়নে শিক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, যা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে।

    দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্নীতি, অদক্ষতা ও নানা দুর্বলতা এখন ওপেনসিক্রেট। এর মধ্যেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারির ফলে করোনা নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসায় আমাদের দেশের হাসপাতাল, ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা অসামান্য সাফল্য দেখিয়েছে। দেশে অসংখ্য ছোট-বড় সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিকের পাশাপাশি প্রায় ১০০টি বেসরকারি বড় হাসপাতালসহ ছোট-বড় ১২ হাজারেরও অধিক বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিং হোম, ক্লিনিক প্রভৃতি স্বাভাবিক চিকিৎসার পাশাপাশি করোনা রোগীর চিকিৎসা করছে। যদিও প্রথমদিকে চিকিৎসা ব্যবস্থায় যথেষ্ট দুর্বলতা ছিল। অসংখ্য অব্যবস্থা, দুর্নীতি, অদক্ষতা ও অপ্রতুলতার মাঝেও আমাদের দেশে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বিশ্বের অন্যান্য বৃহৎ ও ধনী দেশের তুলনায় সীমিত রাখা সম্ভব হয়েছে। যদিও আমরা অনেক নামিদামি ব্যক্তি তথা রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, ডাক্তার, সরকারি কর্মকর্তা হারিয়েছি, তথাপি গ্রামের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মাঝে করোনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েনি।

    সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫,১৪,৫০০। মৃত্যুর সংখ্যা ৭ হাজার ৫৭৬। অন্যদিকে ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা যথাক্রমে ২ কোটি ও ৩ লাখ ৫০ হাজার। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে যথাক্রমে ১ কোটি ও দেড় লাখের ঊর্ধ্বে। ব্রাজিল, রাশিয়া ও ফ্রান্স মিলে এ পাঁচ দেশ  কভিড-১৯-এ আক্রান্ত ও মৃত্যুর দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে। উন্নত ও ধনী দেশে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকলেও করোনা মোকাবেলায় সেগুলো তেমন কাজে আসেনি। সারা বিশ্বে এখন করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ চলছে। আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে অতি সতর্কতার সঙ্গে এ মহামারী মোকাবেলা করতে হবে।

    গত ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একনেক সভায় দেশের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা পাস হয়েছে। স্বল্পমেয়াদি নীতি কৌশলের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি বহু নীতি কৌশল এ পরিকল্পনায় গ্রহণ করা হয়েছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিরবচ্ছিন্ন ৮ শতাংশের অধিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিকল্পনার শেষ বর্ষে অর্জিত হবে ৮.৫১ শতাংশ।

    বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণকালে ১৯৭২-৭৩ সালে যেখানে বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরতা ছিল প্রায় ৮৮ শতাংশ, সেখানে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নকালে বৈদেশিক সহায়তার ওপর নির্ভরতা ১০ শতাংশেরও নিচে নেমেছে। নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সক্ষমতা বেড়েছে। বর্তমানে পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, পায়রা সমুদ্রবন্দর,  মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর ও মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ ১০-১২টি মেগা প্রকল্পসহ কয়েকশ প্রকল্প দেশী-বিদেশী অর্থায়নে বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে। করোনাকালে সরকারি ব্যয় ক্রমবর্ধমান হারে চালু থাকায় কর্মসংস্থানসহ অর্থনীতিতে গতিসঞ্চার হয়েছে।

    বাংলাদেশের অথর্নীতি সচল থাকার পশ্চাতে সরকারের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও সঠিক কর্মপন্থা ছাড়াও কৃষক, শিল্পোদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, ব্যাংকার, বৃহৎ ভোক্তাশ্রেণীসহ সবার অবদান অনস্বীকার্য। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের সক্ষমতার বিষয়টি এখন স্বীকৃত। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের (সিইবিআর) এক নতুন জরিপে বলা হয়েছে, ২০৩৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান আকার ৩০২ বিলিয়ন, যা ২০৩৩ সালে হবে ৮৫৫ বিলিয়ন। বছর শেষে এটি নিঃসন্দেহে বলা যায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা প্রতিকূলতা দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবেলা করার যে সৎসাহস আমাদের রয়েছে সে অভিজ্ঞতায় আমরা করোনা মহামারীও মোকাবেলা করতে পারব।

    নতুন বছরে করোনাভাইরাসের টিকা বিশ্বব্যাপী প্রয়োগের ফলে মাহমারী নির্মূল না হলেও ক্রমান্বয়ে নিয়ন্ত্রণে আসার পর সর্বত্র স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এলে আমরা কাঙ্ক্ষিত গতিতে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব বলে আশা করি।

    মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া: সাবেক সিনিয়র সচিব ও বর্তমানে জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত

    জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।
    Related Posts
    food advisor

    খুব শিগগিরই চালের বাজার স্বাভাবিক হবে: খাদ্য উপদেষ্টা

    July 6, 2025
    biometric metal credit card

    বাংলাদেশে চালু হলো বিশ্বের প্রথম বায়োমেট্রিক মেটাল কার্ড

    July 6, 2025
    Onion

    দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়িয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পদক্ষেপ

    July 6, 2025
    সর্বশেষ খবর
    North West Kardashian: The Rising Star of Reality TV Royalty

    North West Kardashian: The Rising Star of Reality TV Royalty

    Ashura

    আজ পবিত্র আশুরা

    hasnat

    আ.লীগের ব্যবসাগুলো কারা চালায় আমরা জানি : হাসনাত

    food advisor

    খুব শিগগিরই চালের বাজার স্বাভাবিক হবে: খাদ্য উপদেষ্টা

    Tanjin Tisha

    সন্তান দাবি করে ছবি প্রকাশ, ক্ষোভ জানালেন তানজিন তিশা

    Roth

    ধামরাইয়ে উল্টো রথযাত্রায় নিহত ১, আহত ১০

    biometric metal credit card

    বাংলাদেশে চালু হলো বিশ্বের প্রথম বায়োমেট্রিক মেটাল কার্ড

    Ibotta Cash Back Innovations: Leading the Digital Savings Revolution

    Ibotta Cash Back Innovations: Leading the Digital Savings Revolution

    Sunday Rose Urban: Hollywood's Youngest Legacy in the Making

    Sunday Rose Urban: Hollywood’s Youngest Legacy in the Making

    Princess Andre: The Digital Dynasty Heiress Redefining Social Media Royalty

    Princess Andre: The Digital Dynasty Heiress Redefining Social Media Royalty

    • About Us
    • Contact Us
    • Career
    • Advertise
    • DMCA
    • Privacy Policy
    © 2025 ZoomBangla News - Powered by ZoomBangla

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.