জুমবাংলা ডেস্ক : করোনার কোনো আবহ নেই এখন চট্টগ্রামে। কিন্তু সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে ঠিকই। তাও আবার দেশের গড় হারের চেয়ে এগিয়ে চট্টগ্রাম। বিশেষ করে গণপরিবহন ও বিনোদনকেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ার পর এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে চট্টগ্রামের সর্বত্র।
মানুষ মনে করছে, করোনা নেই বলেই বিনোদনকেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে দীর্ঘ সাড়ে ৫ মাস ঘরে বন্দি থাকা মানুষ হামলে পড়ছে বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে। নগরীর ফয়সলেক চিড়িয়াখানা, পতেঙ্গা সি-বিচ, শিশু পার্কসহ সবকটি পার্ক এখন লোকে লোকারণ্য। যাদের কারো মুখে নেই মাস্ক।
স্বাস্থ্যবিধি মানার বাকীটা ইতিহাস।
শনিবার সকালে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসেন জনতা ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার সিনিয়র অফিসার লোকমান হাকিম। তিনি বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাবে দীর্ঘদিন বাসা থেকে পরিবার নিয়ে বের হইনি। এখন বিনোদনকেন্দ্রগুলো খুলেছে। তাই পরিবার নিয়ে চিড়িয়াখানা দেখতে এসেছি। চিড়িয়াখানা আগের চেয়ে অনেক সুন্দর হয়েছে। পশুপাখির সংখ্যাও বেড়েছে।
মুখে মাস্ক না রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাস্ক নিয়ে প্রবেশ করেছি। এরপর পকেটে রেখেছি। এখানে আগত মানুষের মধ্যে কারো মুখে মাস্ক নেই। তাতে করোনার আবহ আছে বলে মনে হয়নি। মানুষের ভিড়ে অন্যরকম আবহ তৈরী হওয়ায় মাস্কের কথা ভুলে গেছি।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতেও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় জমে। সকালে সামান্য বৃষ্টি হলেও বিকেলে বৃষ্টি না থাকায় মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরাফেরা করছে। সাগরের ঢেউয়ে আনন্দ খুঁজছে ছোট বড় হাজার হাজার মানুষ। বিশেষ করে নব দম্পতিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে সাগরের শীতল বায়ুর পরশ পেতে। যাদের স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন লক্ষণ নেই।
শুধু কি বিনোদনকেন্দ্র, স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো লক্ষণ নেই সড়কে হাঁটাচলা মানুষগুলোর মধ্যেও। নেই গণপরিবহন ও হাটবাজারগুলোতেও। নেই খোদ ওষুধের দোকানগুলোতেও। ওষুধের দোকানের সামনে দড়ি টাঙ্গিয়ে সাদা কাগজে লিখে রেখেছেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন।
কিন্তু কে শোনে কার কথা। দড়ির একাংশের নিচ দিয়ে দোকানে পর্যন্ত ঢুকে যাচ্ছেন কেউ কেউ। দড়ি দেয়ার পরও এমন কেন জানতে চাইলে নগরীর বহদ্দারহাটের শাহ আমানত ফার্মেসীর বিক্রয়কর্মী সুমনের জবাব, লোকে বলে, লকডাউন নেই, করোনাও নেই। তাদেরকে আর বেশি কিছু বলতে পারি না।
এভাবে মাস্ক ছাড়া লোকজনের অবাধে ঘুরে বেড়ানো, আড্ডা ও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে জনগণের অনিয়ন্ত্রিত চলাফেরা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখায় চরম উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্যবিভাগও। সংশ্লিষ্টদের মতে, এমন পরিস্থিতিতে করোনার ধাক্কা আবার বড় আকার ধারণ করবে। মানুষ যদি এখনও সচেতন না হয়, তাহলে সামনের দিনগুলোতে বিপদ বাড়তেই থাকবে।
বিআইটিআইডি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশিদ বলেন, রাস্তার ধারে কিংবা বাইরে যারা খাবার বিক্রি করছে, তাদের থেকেও করোনার সংক্রমণ ছড়াতে পারে। শুধু তাই নয়, মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি না মানলেও তা সহজেই ছড়িয়ে পড়বে। এমন অবস্থায় এ ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়বে।
স্বাস্থবিভাগের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের ৬টি ল্যাবে ৮৬০টি এবং কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবে ১৮টি সহ মোট ৮৭৮টি নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে চট্টগ্রামে ১০৪ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমিত শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬,৮৬৬ জনে। যার হার ২১.৯৯ শতাংশ। যা দেশের গড় শনাক্তের হারের তুলনায় বেশি।
এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে আরো ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃত্যু দাঁড়িয়েছে ২৬৮ জনে। এরমধ্যে ৮৩ জন মহানগরীর, ২১ জন উপজেলা পর্যায়ের বাসিন্দা। এছাড়া নতুন ৯৩ জনসহ এ পর্যন্ত ১২,৩৩২ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। এরমধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ২,৭৩৪ জন। বাকি ৯,৫৯৮ জন হোম আইসোলেশনে থেকে সুস্থ হয়েছেন।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, চট্টগ্রামে প্রতিদিন আক্রান্ত বেড়েই যাচ্ছে। কবে নাগাদ এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে, তাও অজানা। তন্মধ্যে বিশ্বের একাধিক দেশে সেকেন্ড ওয়েভ বা দ্বিতীয় সংক্রমণ হানা দেয়ায় ইতোমধ্যে জল্পনা শুরু হয়েছে দেশেও। যার জন্য মাঠ পর্যায়ে মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংস্থাকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়ে চিঠিও দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু এমন অবস্থাতেও নেই দৃশ্যত কোন কার্যক্রম।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগতো পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু কেউই শুনছে না। প্রশাসনকেও তা বাস্তবায়নে চিঠি দেয়া হয়েছে। কঠোর হওয়া ছাড়া এখন আর কিছুই নেই। তাই প্রয়োজনে প্রশাসনকে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সিএমপির কমিশনার মাহবুবর রহমান বলেন, মুখে মাস্ক, সামাজিক র্দরত্ব বজায়, স্যানিটাইজার ব্যবহারসহ ১৬ শর্তে বিনোদনকেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। এর আগে একই শর্তে গণপরিবহন চালু করা হয়। গণপরিবহনের মতো বিনোদনকেন্দ্রগুলোতেও স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি শীঘ্রই নজরদারিতে আনা হবে।
সূত্র : মানবজমিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।