রেহানুল করিম বেরিন (৫১) নামের এক ব্যক্তিকে ঈশ্বরদীতে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। আজ (শুক্রবার) বিকেলে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে রেবিনের নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাসের পজিটিভ হওয়ার ফলাফল পান উপজেলা, থানা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা।
আক্রান্ত রেহানুল ঈশ্বরদীর মুলাডুলি ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের মৃত শওকত আলী মাষ্টারের ছেলে। তিনি নাটোর জেলার সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র ওয়ার্ড বয়। হাসপাতালের আবাসিক বাসায় তিনি পরিবার নিয়ে থাকতেন। ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) শফিকুল ইসলাম শামিম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগেই আক্রান্ত রেহানুল বৃহস্পতিবার নিজের গ্রামের বাড়ি ঈশ্বরদীর মুলাডুলির চাঁদপুরে আসেন। নতুন বাড়ির উদ্বোধন উপলক্ষে নিজ আত্মীয়, স্থানীয় মোল্লাপাড়া মসজিদে গিয়ে মুসুল্লিদের ইফতারের দাওয়াত দেন ও জুম্মার নামাজ আদায় করেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রগুলো জানান, রেহানুলের করোনা আক্রান্ত হওয়ার রিপোর্ট পাওয়ার পর বিকাল সাড়ে ৫টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিহাব রায়হান, থানা পুলিশসহ তাঁর বাড়িতে যান। সেখানে তিনি হ্যান্ডমাইকের মাধ্যমে আক্রান্ত রেহানুলের বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করেন। মসজিদের নামাজ আদায় করার কথা জানতে পেরে মসজিদটিকেও লকডাউন করে দেন।
এলাকাবাসীদের সূত্রে জানা যায়, আক্রান্ত রেহানুল বৃহস্পতিবার নিজ বাড়িতে এসেছেন। নতুন বাড়িতে মিলাদ দেওয়ার জন্য ওই দিন থেকেই তিনি আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে গেছেন। এলাকাবাসীদের সঙ্গে চলাফেরা করেছেন।
শুক্রবার মসজিদে বাড়িতে ইফতারের দাওয়াত দেন ও মুসুল্লিদের সঙ্গে জুম্মার নামাযও আদায় করেন। বিকেলে ইফতার মাহফিলে যোগদানের জন্য রেহানুলের বাড়িতে আত্মীয় স্বজন, মুসল্লি ও এলাকাবাসীরা যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিছু লোক সেখানে গিয়েও ছিলেন। এমন সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলিশ ও চিকিৎসকদের নিয়ে বাড়িতে উপস্থিত হন এবং বাড়ি ও মসজিদটি লকডাউন ঘোষণা করেন।
পরে মসজিদের মাইকে লকডাউনের বিষয়টি ইমাম সাহেব ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে চাঁদপুরের পুরো গ্রামের মানুষের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে বলেও সূত্রগুলো দাবি করেছেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের (আরএমও) আবাসিক চিকিৎসক শফিকুল ইসলাম শামিম জানান, রেহানুলের কর্মস্থল নাটোর সদর হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রেহানুলসহ কয়েকজনের করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য রাজশাহীতে প্রেরণ করা হয়। এর মধ্যে রেহানুল গ্রামের বাড়ি ঈশ্বরদীর মুলাডুলির চাঁদপুরে চলে আসেন। তিনিই ঈশ্বরদীতে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী।
তিনি আশংকা প্রকাশ করে আরো জানান, নিজ বাড়িতে এসে আত্মীয়-স্বজন, এলাকাবাসী ও মসজিদের মুসল্লিদের সঙ্গে যেভাবে মেলামেশা করেছেন, তাতে কতজন যে আক্রান্ত হবে তা এই মুহূর্তে বোঝা যাচ্ছে না। এটা ঈশ্বরদীর জন্য খুবই হতাশাজনক একটা ব্যাপার। ডাক্তার শামিম আরো জানান, আক্রান্ত রোগীকে নিজ বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হবে।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিহাব রায়হান জানান, আক্রান্ত রেহানুল করিম রেবিনের বাড়ি লক ও মসজিদ লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। মসজিদে মুসল্লিদের সঙ্গে নামাজ আদায় এবং এলাকাবাসীদের সঙ্গে চলাফেরা করেছেন। পরিস্থিতি বিবেচনা করে পুরো গ্রামটি লকডাউন করা হবে। একই সঙ্গে রোগীর অবস্থা দেখে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।