আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কর্মীদের তিন দিন ছুটি দিয়ে চার দিনের কর্ম সপ্তাহ চালু করতে চায় জাপান সরকার। শ্রমসংকট কাটাতেই চার দিনের কর্ম সপ্তাহ চালুর কথা ভাবছে দেশটি। সিএনবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাপানের এসএমবিসি নিক্কো সিকিউরিটিজ ইনক. ২০২০ সালে কর্মীদের সপ্তাহে তিন দিন ছুটি দেওয়া শুরু করে। এরপর সরকারিভাবে প্রথমবারের মতো ২০২১ সালে জাপানে চার দিনের কর্ম সপ্তাহের প্রস্তাব করা হয়। সে সময় আইনপ্রণেতারা এই ধারণাটিকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরে এই ধারণা বাস্তবায়নের গতি ধীর হয়।
দেশটির স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সে সময় জাপানের প্রায় ৮ শতাংশ কোম্পানি কর্মীদের সপ্তাহে তিন বা তার বেশি দিন ছুটি নেওয়ার অনুমতি দেয়। তবে ৭ শতাংশ কোম্পানি তাদের কর্মীদের আইনত বাধ্যতামূলকভাবে এক দিন ছুটি দেয়।
আর ৮৫ শতাংশ নিয়োগকর্তা তাদের কর্মীদের সপ্তাহে দুই দিন ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তিন দিনের ছুটির মডেলের উদ্যোক্তারা বলছেন, এটি শিশুদের লালন-পালন করা, বয়স্ক আত্মীয়দের যত্ন নেওয়া, পেনশনে থাকা অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের এবং আরও বেশি দিন কর্মশক্তিতে থাকার জন্য নমনীয়তা বা অতিরিক্ত আয়ের সন্ধানে থাকা ব্যক্তিদের উৎসাহিত করবে।
বর্তমানে ছোট ও মাঝারি আকারের ব্যবসার মধ্যে আরও বেশি ক্রেতা তৈরির আশায় সরকার ‘কাজের স্টাইল সংস্কার’ প্রচারাভিযান চালু করেছে। এতে ওভারটাইম সীমা এবং সবেতন বার্ষিক ছুটিসহ কম ঘণ্টা কাজ এবং অন্যান্য নমনীয় ব্যবস্থাকে প্রচার করছে। এই প্রচারাভিযানের নাম ‘হাতারাকিকাতা কাইকাকু’। এর অর্থ ‘আমরা কীভাবে কাজ করি তা উদ্ভাবন করা’।
জাপানে দীর্ঘ সময় কাজ করা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। তবে দেশটিতে ওভারটাইম ঘণ্টার ওপর আইনি বিধিনিষেধ রয়েছে। এসব নিয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা হয়। তবে কিছু জাপানি ‘পরিষেবা ওভারটাইম’ করে। এর অর্থ এর কোনো নথি নেই এবং কোনো ক্ষতিপূরণ ছাড়াই তা করা হয়।
সরকারি তথ্য বলছে, জাপানে বর্তমানে কর্মক্ষম বয়সের জনসংখ্যা ৭ কোটি ৪০ লাখ। ২০৬৫ সালে তা কমে ৪ কোটি ৫০ লাখে দাঁড়াবে। একটি সাম্প্রতিক সরকারি শ্বেতপত্রে ‘কারোশি’র কথা বলা হয়েছে। জাপানি এই শব্দের ইংরেজি অর্থ ‘অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে মৃত্যু’। ওই শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, এ কারণে জাপানে বছরে অন্তত ৫৪টি প্রাণহানি ঘটেছে, এর মধ্যে হার্ট অ্যাটাকও আছে।
আকিকো ইয়োকোহামা টোকিওভিত্তিক প্রযুক্তি সংস্থা স্পেলডাটায় কাজ করেন। এই প্রতিষ্ঠানটি কর্মীদের চার দিনের সময়সূচিতে কাজ করার অনুমতি দেয়। শনি ও রবিবারের সঙ্গে বুধবারও সাপ্তাহিক ছুটি। এই অতিরিক্ত ছুটির দিনে তিনি কেনাকাটাসহ কিছু ব্যক্তিগত বাড়তি কাজ করতে পারেন।
ইয়োকোহামা বলেন, আপনি যখন টানা পাঁচ দিন ভালো বোধ করেন না, তখন এসব করা কঠিন। বিশ্রাম আপনাকে সেরে উঠতে বা চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার সুযোগ দেয়।
ইয়োকোহামার স্বামী একজন রিয়েল এস্টেট ব্রোকার। তিনিও বুধবার ছুটি পান। এ কারণে তারা সন্তানদের নিয়ে সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে পারিবারিক ভ্রমণে যেতে পারেন।
জাপানে ইতিমধ্যে ফাস্ট রিটেইলিং কোম্পানি, ইউনিক্লো, থিওরি, জে ব্র্যান্ড ও অন্যান্য পোশাক ব্র্যান্ডের মালিক, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি শিওনোগি অ্যান্ড কোম্পানি এবং ইলেকট্রনিকস কোম্পানি রিকো কোম্পানি ও হিটাচি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চার দিনের কর্ম সপ্তাহের প্রস্তাব দিতে শুরু করেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।