বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক: কর্মচারীদের কাছে আকর্ষণীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গুগল। এটি এমন এক কোম্পানি যার ভেতর রয়েছে কর্মচারীদের জন্য প্রচুর খাবারের কাউন্টার এবং ঘুমানোর ব্যবস্থা।
গুগল হচ্ছে প্রথম বড় প্রযুক্তি কোম্পানি যারা তাদের কর্মচারীদের বিনামূল্যে খাবার পরিবেশন করে। গুগল কার্যালয়ে সবসময়েই সবার খাবার জন্য কিছু না কিছু রয়েছে। কর্মীরা সেখানে বিনামূল্যে খাবারের প্রতিটি আইটেম খেতে পারেন। এ ছাড়া রয়েছে বিনামূল্যে কফি ও জুস বার।
ফোবর্সের তথ্য অনুযায়ী, গুগলের প্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিন প্রথম দিকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, গুগলের অফিস কখনোই খাবার প্রাপ্তির স্থান থেকে ৬০ মিটারের বেশি দূরত্বে হবে না।
গুগলের প্রধান সেবা গুগল সার্চে প্রতি সেকেন্ডে গড়ে ৬৩ হাজার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান করা হয়। যা প্রতিদিনের হিসেবে ৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন এবং বছরে ২ ট্রিলিয়ন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গুগলে খোঁজা হয়।
তাছাড়া গুগল সম্পর্কে জেনে নিন কিছিু অজানা তথ্য, যা আপনাদের অনেকেরেই অজানা। বিবিসির প্রতিবেদনে সেসব অজান তথ্য উঠে এসেছে। যথা-
১. প্রথমটিতে হয়তো বিস্মিত হবার তেমন কিছু নেই। গুগুল হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভিজিটেড ওয়েবসাইট, অর্থাৎ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অধিকাংশই এই ওয়েবসাইটটিতে অন্তত একবার ঘুরে গেছেন।
২. গুগল শুরু করেছিলেন দু’জন কলেজ ছাত্র – তাদের নাম ল্যারি পেজ এবং সের্গেই ব্রিন। তারা চেয়েছিলেন এমন একটা ওয়েবসাইট তৈরি করতে – যার মাধ্যমে অন্য ওয়েবপেজগুলোর একটা তুলনামূলক তালিকা করা যাবে। এর ভিত্তি হবে অন্য ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে কতগুলো তাদের সাথে সংযুক্ত হয়েছেন ।
৩. গুগল শব্দটা উৎপত্তি ‘গুগোল’ (googol) থেকে – যা একটি বিশেষ সংখ্যার নাম। সংখ্যাটা হলো : ১ এর পিঠে ১০০টা শূন্য বসালে যা হয় – তাই। কেন এই নাম বেছে নিয়েছিলেন ল্যারি আর সের্গেই? তাদের ওয়েবসাইট যে বিপুল পরিমাণ উপাত্ত ঘাঁটাঘাঁটি-অনুসন্ধান করবে – সেটাই এই নাম দিয়ে বোঝাতে চেয়েছিলেন তারা।
৪. প্রথম গুগল ডুডল – অর্থাৎ গুগলের হোম পেজে কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বা দিনের স্মারক হিসেবে যে ছবি ব্যবহৃত হয় – তা তৈরি করা হয়েছিল ১৯৯৮ সালে, বার্নিং ম্যান নামের একটি উৎসব উদযাপনের জন্য। গুগলেল প্রতিষ্ঠাতারা ভেবেছিলেন এর মাধ্যমে তারা জানিয়ে দেবেন যে কেন তারা অফিসে অনুপস্থিত।
৫.গুগলের সবচেয়ে স্মরণীয় ডুডলগুলোর অন্যতম হচ্ছে চাঁদে পানির আবিষ্কার, এবং জন লেননের ৭০তম জন্মদিন উদযাপনের জন্য। জন লেননের ডুডলটি আবার ছিল প্রথম ভিডিও ডুডল।
৬.প্রথম গুগল সার্ভার রাখা হয়েছিল লেগো দিয়ে তৈরি একটি কাস্টম কেসে।
৭. গুগলের হেডকোয়ার্টার পরিচিত ‘গুগলপ্লেক্স’ নামে এবং এটি অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে।
৮.গুগলপ্লেক্সে টি-রেক্স জাতীয় ডাইনোসরের একটি বিশাল মূর্তি আছে – যার ওপর প্রায়ই অসংখ্য প্লাস্টিকের তৈরি গোলাপি ফ্ল্যামিঙ্গো বসে থাকতে দেখা যায়। গুজব রয়েছে যে এটা হচ্ছে কর্মচারীদের প্রতি এক সতর্কবার্তা যেন তারা কখনো গুগলকে বিলুপ্ত হয়ে যেতে না দেন।
৯. গুগলের হেডকোয়ার্টারটি বিশাল এবং এর ভেতরে অনেক সবুজ জায়গা আছে। এখানে ঘাস কাটার জন্য লন-মোয়ার মেশিন ব্যবহার করা হয় না। এ জন্য গুগল বাইরে থেকে ছাগল ভাড়া করে নিয়ে আসে।
১০. গুগল হচ্ছে প্রথম বড় প্রযুক্তি কোম্পানি যারা তাদের কর্মচারীদের বিনামূল্যে খাবার পরিবেশন করে। তা ছাড়া কর্মচারীদেরকে তাদের পোষা কুকুর অফিসে নিয়ে আসতে দেয়া হয়।
১১. ২০০১ সালে চালু করা হয় গুগল ইমেজ সার্চ -যার অনুপ্রেরণা ছিল ২০০০ সালের গ্র্যামি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে জেনিফার লোপেজের পরা সবুজ পোশাক। এটি গুগলের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চে পরিণত হয়েছিল।
১২. গুগলের নিজস্ব ইমেইল সেবা জিমেইলের কথা ঘোষণা করা হয় ২০০৪ সালে ১লা এপ্রিল বা এপ্রিল ফুলস ডে-তে। অনেকেই ভেবেছিলেন যে এটা আসলে একটা রসিকতা।
১৩. গুগলকে একটি ক্রিয়াপদ হিসেবে (‘গুগল করা’ অর্থে) প্রথম অভিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয় ২০০৬ সালে। মিরিয়াম-ওয়েবস্টার অভিধান লিখেছিল, গুগল করা মানে হচ্ছে ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব থেকে কোন তথ্য অনুসন্ধান করার জন্য গুগল সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করা।’
১৪. ইউটিউব গুগল পরিবারের সদস্য হয় ২০০৬ সালে। দেড়শ’ কোটি ডলারেরও বেশি দামে ইউটিউবকে কিনে নেয় গুগল।এখন ইউটিউবের মাসিক ব্যবহারকারী প্রায় ২০০ কোটি। প্রতি মিনিটে ইউটিউবে আপলোড হয় ৪০০ ঘন্টার ভিডিও।
১৫. গুগলের একজন ইঞ্জিনিয়ার ২০০৯ সালে একবার ইন্টারনেট ব্যবস্থা ‘ধসিয়ে দিয়েছিলেন’ । তিনি দুর্ঘটনাবশত: গুগলের ব্লকড ওয়েবসাইটের রেজিস্ট্রিতে ফরোয়ার্ড স্ল্যাশ (‘/’) চিহ্নটি যোগ করে ফেলেছিলেন। যেহেতু প্রায় প্রতিটি ওয়েবসাইটেই ‘/’ চিহ্নটি আছে, তাই সেসময় অনলাইনে কোন ওয়েবসাইটেই ঢোকা যাচ্ছিল না।
১৬.গুগল সার্চে ১৫ শতাংশ অনুসন্ধানই হচ্ছে একেবারে নতুন – যা আগে কখনো সার্চ করা হয় নি।
১৭. গুগল ২০১৮ সালের এপ্রিলে পরিণত হয় প্রথম কোম্পানিতে যারা শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করছে। এর অর্থ হচ্ছে তারা প্রতি এক কিলোওয়াট বিদ্যুত খরচ করার সাথে সাথে এক কিলোওয়াট বিদ্যুত ক্রয় করছে।
১৮. গুগলের আসলে ৬টি জন্মদিন আছে। কিন্তু তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে শুধু ২৭ সেপ্টেম্বরকেই তারা জন্মদিন হিসেবে পালন করবে।
১৯. গুগলের হাতে নানা রকম কূটকৌশল আছে। যেমন আপনি যদি এস্কিউ (askew) শব্দটি ইংরেজিতে সার্চ করেন তাহলে দেখবেন পুরো পেজটাই একদিকে কাত হয়ে গেছে।
২০. এ্যাপোলো ১১তে চড়ে চাঁদে মানুষ পাঠাতে যতটুকু কম্পিউটিং ক্ষমতা ব্যবহৃত হয়েছিল – এখন মাত্র একটি গুগল সার্চে প্রায় সেই পরিমাণ কম্পিউটিং ক্ষমতা কাজে লাগানো হয়।
২১. গুগল এখন শুধু একটি সার্চ ইঞ্জিন নয়। ভবিষ্যতে এখানে থাকবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, স্ট্রিমিং-ভিত্তিক গেম খেলার ব্যবস্থা, এমনকি ড্রাইভারবিহীন গাড়ি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।