ড. কামরুল হাসান মামুন: শিহাব শাহীন‘কাছের মানুষ দূরে থুইয়া’ সিনেমার শেষ দৃশ্যে ‘পাউডার কেগ’ ইফেক্টের ব্যবহার করেছে। এই পাউডার কেগ ইফেক্ট প্রথম জানি পার্কোলেশন তত্ত্ব পড়তে, পড়াতে এবং গবেষণা করতে গিয়ে। ২০০৯ সালে আমার কোলাবোরেটর Raissa D’Souza এক্সপ্লোসিভ পার্কোলেশন তত্ত্ব প্রস্তাব করেন। সেই এক্সপ্লোসিভ পার্কোলেশন তত্ত্বের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে পাউডার কেগ ইফেক্ট প্রথম ব্যবহার করেন Friedman এবং Landsberg. কিন্তু এই পাউডার কেগ ইফেক্টের ধারণা এর আগে থেকেই ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পাউডার কেগ ইফেক্ট প্রথম আলোচিত হয়।
প্রশ্ন হলো পাউডার কেগ ইফেক্ট কী? প্রথম বিশ্বযুদ্ধ আসলে ইউরোপের পাউডার কেগ ইফেক্ট। ধরুন ১০০০ নিউরণ বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে আছে যারা কেউ কারো সাথে সংযুক্ত না। এবার ১০০০ নিউরন থেকে এক জোড়া নিউরণ রেন্ডমলি তুলে তাদের সংযুক্ত করলাম। এভাবে যদি আমরা অন্য নিউরণগুলোকেও সংযুক্ত করতে থাকি ৫০০টি লিংক লাগানোর পর সিস্টেমে একটি ট্রানজিশন ঘটবে। অর্থাৎ ৫০০ জোড়া নিউরনকে রেন্ডমলি সংযুক্ত করার পর দেখব হঠাৎ একটি নিউরণের একটি জায়ান্ট নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে, যার গড় সাইজ প্রায় ৫০০ থেকে ৮০০ এর মধ্যে। এর আগে সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্কের গড় সাইজ এক ডিজিটের মতো। Raissa D’Souza ২০০৯ সালে যেই মডেল প্রস্তাব করে সেটি হলো প্রতি স্টেপে একটি লিংকের জায়গায় রেন্ডমলি দুটি লিংক তুলে এর মধ্যে যেটি সংযুক্ত করলে তুলনামূলক ছোট নেটওয়ার্ক ক্লাস্টার তৈরী হবে সেটিকে সংযুক্ত কররা হবে। এর মাধ্যমে আমরা কী করলাম?
বড় ক্লাস্টার তৈরিতে বাধাগ্রস্ত করলাম ফলে ট্রানজিশনটা এখন দেরিতে ঘটবে। মজার ব্যাপার হলো ঘটনা দেরিতে ঘটবে কিন্তু যখন ঘটবে তখন সেটা অস্বাভাবিক দ্রুততার সাথে ঘটবে এবং এজন্যই এইটাকে এক্সপ্লিসিভ পার্কোলেশন বলে। কমেন্ট থ্রেডে একটি গ্রাফ দিলাম যার মাধ্যমে এটি ভালো করে বোঝা যাবে। ধরা যাক সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল তাদের আদর্শ বা কোনো একটা ইনফরমেশন ছড়াতে দিতে চায় না। না চাওয়া সত্ত্বেও বিরোধী দল যদি আদর্শ মানুষের মধ্যে থাকে দেশের একটা বড় অংশের মধ্যে ছাড়াতে হয়তো দেরি হবে, কিন্তু ছড়ানোটা যখন ঘটবে সেটা হঠাৎ করে দ্রুততার সাথে ঘটবে।
শিহাব শাহীনও তার নাটকের শেষ দৃশ্যে কী করলেন? ফারহান এবং শারমিনের মধ্যে ক্লাইম্যাক্সটা নীরবতার মাধ্যমে দীর্ঘায়িত করলো। এই ফবষধু করানোর ফলে একটা টিপিং পয়েন্টে এসে হঠাৎ করে ফারহান যখন শারমীনের হাত টেনে ধরলো avalanche-এর মতো সকল রাগ অভিমান ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। এই সুন্দর ক্লাইম্যাক্স পাউডার কেগ ইফেক্টের জন্য। উবষধু না করালে হতো না। কতোক্ষণ ডিলে করাতে হবে এইটাও খুবই crucial! শিহাব শাহীন এই কাজটি খুবই দক্ষতার সাথে করেছেন। লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।