মাহফুজুর রহমান সা’দ : ভয় ও লজ্জা মানবীয় বৈশিষ্ট্য। আর এই বৈশিষ্ট্যদ্বয় মানব জীবনে উন্নতির আলাস্কা পর্বতে আরোহণের জন্য চরম এক মানসিক বাধা। একটি ফুলেল-সুন্দর ও সমৃদ্ধ জীবনের পথে এটি মারাত্মক রকম অন্তরায়ও। কোনো কাজে নেমে পড়লে মনের বাতায়নে উঁকি দেয়, এ কাজ সমাজ কীভাবে দেখবে! লোকে কি বলবে! লোকে আমাকে নিয়ে কী ভাববে! অন্যের কটু কথা শোনার ভয় কিংবা লজ্জা কাটানোই যেন আমাদের মূল লক্ষ্য আর উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যুগে যুগে আলো আঁধার বিদ্যমান ছিল, আছে, থাকবে। অন্ধকারের বিপরীতে আলোর মশাল হাতে প্রতিকূলতা জয় করা ব্যক্তিগণই সাফল্যের চূড়ায় উঠতে সক্ষম হয়। সমাজে লোকে কী বলবে, মানুষ আমাকে নিয়ে কী ভাববে! এই মানসিকতা আমাদের ঈদ যাত্রায় দেওয়াল তৈরি করে দিয়েছে।
সমাজে মাছি চরিত্রের কিছু মানুষ আছে, যাদের সূর্যোদয় হওয়ার পর, দিনের শুরুটাই হয় অন্যের খারাপ সমালোচনার মধ্য দিয়ে আর সেই সমালোচনা গোধূলি রাঙা বিকাল ভেঙে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত চলতে থাকে, মাছি যেমন ক্ষত, ময়লা, বিষ্ঠায় স্বাদ খোঁজে—এসব লোক অনুরূপ অন্যের সমালোচনার মধ্যে স্বাদ খোঁজে। আসলে এরা অন্যের সমৃদ্ধি দেখে হিংসায় অশান্তির দাবানলে জ্বলতে থাকে। এসব লোকের পাহাড়সম দোষ থাকা সত্ত্বেও এরা নিজের দোষ দেখে না, অন্যের দোষ বলে বেড়ায় এবং অন্যের সফলতা যাত্রায় অদৃশ্য দেওয়াল তৈরি করতে এরা সদা ব্যস্ত থাকে।
এদের জীবনের সুখটা যেন এখানেই। এরা নিজ জীবন নিয়ে ভাবতে বসে না। আর এরা সাধারণ মানুষের কানে ময়লা ঢেলে দেওয়ার কারণে মানুষ কোনো ভালো কাজের জন্য পদক্ষেপ নিলেও সমালোচনার ভয় কিংবা কটু কথা শোনার ভয়ে অনেকেই ভালো কাজ থেকে বিরত থাকে, যার ফলে আলোর মুখ দেখে না হাজারো জীবন্ত প্রতিভা।
এক জন সচেতন ও বুদ্ধিমান ব্যক্তি কখনো অন্যের দোষ খুঁজে সময়কে নষ্ট করে না, তারা সর্বদা নিজেকে সংশোধনের কাজে ব্যস্ত থাকে, অন্যের কটু কথা তাদের ইচ্ছাকে বা কর্মকে মোটেও পিছপা করতে পারে না। তারা কোনো দিকে না তাকিয়ে চলন্ত ট্রেনের বেগে এগিয়ে যায়, কখনো যদি তাদের মাথায় এই চিন্তা আসে, লোকে কী ভাববে! তখন তারা সেই চিন্তাকে ডাস্টবিনে ফেলে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে চলে। তারা জানে, যদি আমি ধারাবাহিক উন্নতি করতে থাকি, তাহলে আমার ব্যাপারে মানুষের মানসিকতা বদলাবে, তারা আমার সফলতার প্রশংসা করবে।
তারা জানে, আমি যদি সত্ হই, তাহলে লোকের কটু কথা আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। কেননা সূর্যকে যদি কেউ নিয়ম করে প্রতিদিন গালি দেয়, সূর্য কিন্তু উদিত হওয়া বন্ধ করবে না। সমালোচনা তাদেরই হয়, যারা ১০টার মধ্যে আটটা সঠিক কাজ করে।
বুদ্ধিমান মানুষেরা সমালোচনাকে তোয়াক্কা না করে এগিয়ে যায়। যারাই সাফল্যের শীর্ষ চূড়ায় উঠেছেন, প্রত্যেকেই কটু কথা আর সমালোচনা শুনে শুনেই উঠেছেন, তারা অন্যের বিষ ঢালা কথাকে উপেক্ষা করেছেন প্রতিনিয়তই। তারা জীবনের সুখ-দুঃখ কিংবা জয়-পরাজয়ের রিমোট নিজের হাতেই রেখেছেন, দেননি সমালোচকদের হাতে। আর তাই, তারা এতটা সফল। পৃথিবীর সেরা ক্রিকেটারদের যখন জিগ্যেস করা হয়, লোকে আপনাকে নিয়ে নানা রকম কথা বলে, নানান মন্তব্য করে, আপনার খারাপ লাগে না? উত্তরে তারা বলে—‘এগুলো দেখি না, এগুলো কর্ণপাত করি না।’
যারা সর্বদা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কাজ করে যায়, তারা দিন শেষে সাফল্যের হাসি হাসে। একজন মনীষী বলেন, সফল মানুষেরা কাজ করে যায়, তারা ভুল করে ভুল শোধরায়, কিন্তু তারা থেমে যায় না, অন্যের কটু কথা তাদের ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তাকে টলাতে পারে না। তাই মনের মধ্যে সদা সাহস এবং সুন্দর চিন্তার আবাদ করতে হবে। আমাদের চেতনায় যদি এই ধরনের চিন্তা সর্বদা জাগ্রত থাকে, তাহলে শত প্রতিকূলতা আমাদের টলাতে পারবে না। আমরা যদি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অন্যের দূষিত বাক্যকে উপেক্ষা করে চলতে পারি, তাহলে আমাদের জীবনটা অনেক মসৃণ হবে। কালো অমানিশা শেষে আমাদের সামনে প্রতিভাত হবে ঝলমলে সেই সূর্যটি, যা এক লহমায় দূর করে দেয় একচ্ছত্র অন্ধকার!
শিক্ষার্থী : আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।