লাইফস্টাইল ডেস্ক : কারাগারে কীভাবে রমজান মাসের তারাবিহ, সেহরি ও ইফতার করা হয়? পরিবার ছেড়ে কেমন কাটে হাজতিদের রোজা? এ বিষয়ে জানতে কথা হয় কারাগারের কয়েকজন কর্মকর্তা এবং সম্প্রতি জেল থেকে বের হওয়া হাজতির সঙ্গে। তাদের সূত্রে জানা গেছে, কারাগারে ইচ্ছেমতো ইফতার-সেহরির সুযোগ নেই। তাদের জন্য থাকে বিশেষ আয়োজন। জেল কর্তৃপক্ষ যেই ওয়ার্ডে রাখে সেই ওয়ার্ডের হাজতিদের সঙ্গেই ইফতার, সেহরি ও তারাবিহ নামাজ পড়তে হয়।
কারাগারের ইফতার
সম্প্রতি কুমিল্লা কারাগার থেকে বের হওয়া কয়েকজন হাজতির সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিনিধির। তারা জানান, ইফতারে আলুর চপ, ছোলা, পেঁয়াজি, খেজুর, কলা, মুড়ি, জিলাপি ইত্যাদি থাকে। নিয়মিত এগুলোই থাকে। তবে বিশেষ দিনে তার পরিবর্তে উন্নতমানের খাবারও দেওয়া হয়। হাজতের ভেতর আজানের শব্দ শোনা যায়। আজানের শব্দ শোনা গেলে আমরা ইফতার শুরু করি। অনেকে ক্যান্টিন থেকে বাড়তি ইফতারও কিনে খাই। যারা রোজা রাখতে পারে না তারাও আমাদের সঙ্গে ইফতার করেন।
এ সময় তারা বলেন, ‘রমজান মাসে একজন হাজতির সবচেয়ে বড় কষ্ট হলো, আত্মীয়-স্বজন ছাড়া ইফতার করা। সেহরিতেও কাছের কেউ থাকে না।’
তারাবিহ সালাত
ওই হাজতিরা জানান, জেলখানায় তারাবিহ নামাজও অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেক ওয়ার্ডে কেউ না কেউ আলেম বা হুজুর থাকেন। অনেক হাফেজ হাজতিও থাকেন। তারা নামাজ পড়ান। তবে সুরা তারাবিহ। ইশার নামাজের পর তারা নিয়ম অনুযায়ী তারাবিহ শুরু করেন। প্রত্যেক ওয়ার্ডেই নামাজের ব্যবস্থা আছে। অনেক ওয়ার্ডে নামাজ পড়ানোর লোক না থাকলেও ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করেন কারা কর্তৃপক্ষ। পরে তাকে দিয়েই নামাজ পড়ানো হয়। অনেকে গভীর রাত পর্যন্তও নামাজ পড়েন। কেউ কেউ কোরআন তেলাওয়াত করেন।
কারাগারের সেহরি
হাজতিরা বলেন, ‘কারাগারের সেহরি অনেক দুঃখের। অনেক হাজতিকে চোখের পানিতে সেহরি করতে দেখেছি। অনেকে বেশি খাবার খেতে পারেন না। যাদের জামিনের খবর আসে তারা খুব আনন্দে থাকে। তারা শেষ রাত্রিতে ঘুমায় না। সকাল হলেই যাওয়ার জন্য। সারারাত জেগে অনেকে ভোররাতের খাবার খেয়ে নামাজ পড়ে ঘুমাতে যান। ভোররাতে ভাত, মাছ অথবা মাংস, ডাল, সবজি থাকে। রমজান মাসে খাবার অন্য মাসের তুলনায় ভালোই থাকে। তবে বিশেষ দিনে অন্যদিনের তুলনায় ভালো খাবার থাকে।’
কুমিল্লা কারাগার সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) পর্যন্ত কুমিল্লা কারাগারে এক হাজার ৯৩০ জন পুরুষ এবং ১১৫ জন নারী বন্দি আছেন। তাদের ইফতার ও সেহরির জন্য প্রতিদিন খাবার ব্যবস্থা করে কুমিল্লা কারা কর্তৃপক্ষ। যারা অন্য ধর্মাবলম্বী তাদের জন্য দিনের বেলায় এবং রাতের জন্য আগের মতো স্বাভাবিক খাবারের আয়োজন থাকে। মঙ্গলবার গরুর মাংস খাবেন এক হাজার ৭৪৫ জন এবং আর খাশির মাংস ৩০০ জন।
জানা গেছে, বিশেষ দিনে কারাগারে উন্নতমানের খাবারের আয়োজন করা হয়। ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে উন্নত খাবারের বিশেষ তালিকায় ছিল ভাত, ডিম, পোলাও, জনপ্রতি ১০০ গ্রাম করে মুরগির মাংস, মুরগির রোস্ট, ছোলার ডাল দিয়ে মুরগির গিলা কলিজার ভূনা, সালাদ, পান-সুপারি। ইফতারে আছে ছোলা, পেঁয়াজি, খেজুর, কলা, মুড়ি, ম্যাংগো ড্রিংকস।
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, ‘কারাগারে মানুষ সংশোধনের জন্য আসে। আমরা চেষ্টা করি একটু ভালোভাবে তাদের থাকার ব্যবস্থা করতে। রমজানে ভালো করে ইফতার ও সেহরির ব্যবস্থা করি। আর রাতের খাবারের ব্যবস্থাও আছে। অনেকে ক্যান্টিন থেকে নিয়ে খাবার খায়। বিশেষ দিনে অনেকের পরিবার থেকে খাবার নিয়ে আসে। আমরা তাদের সেই খাবার পৌঁছে দিই। কুমিল্লা কারাগারকে সময়োপযোগী ও সংশোধনাগার হিসেবে তৈরি করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।