জুমবাংলা ডেস্ক: আবারও ঐতিহ্যবাহী গুটি কার্পাস তুলা চাষে ফিরেছেন কাপাসিয়ার চাষিরা। বাণিজ্যিকভাবে এই তুলা চাষে সাফল্য পেয়েছেন তারা। গুটি কার্পাস তুলা চাষে লাভ যেমন বেশি, তেমনি উৎপাদনে খরচও কম। বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদক রায়হানুল ইসলাম আকন্দ-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
স্থানীয় চাষিরা জানিয়েছেন, একসময় কাপাসিয়ায় প্রচুর কার্পাস তুলা চাষ হতো। এজন্য এই এলাকার নাম দেওয়া হয় কাপাসিয়া। দীর্ঘ সময় ধরে কার্পাস তুলা চাষ বন্ধ ছিল। এবার বাণিজ্যিকভাবে প্রায় ৫০ একর জমিতে তুলা চাষ করেছেন চাষিরা। তুলা উন্নয়ন বোর্ড প্রশিক্ষণের পাশাপাশি চাষিদের প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছে। চাষের শুরু থেকে সংগ্রহ ও বিপণন পর্যন্ত কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড।
কাপাসিয়ার বেলাসী গ্রামের চাষি কমর উদ্দিন বলেন, ‘শ্রীপুরের তুলা উন্নয়ন গবেষণা ও বীজ বর্ধন খামারের কৃষিবিদদের পরামর্শে এ বছর এক একর জমিতে গুটি কার্পাস তুলা চাষ করেছি। প্রায় সাড়ে পাঁচশ কেজি তুলা সংগ্রহ করেছি। এখনও জমিতে যে পরিমাণ তুলা আছে, তাতে আরও প্রায় দেড়শ কেজি সংগ্রহ করতে পারবো।’
আগামী বছর তিন একর জমিতে তুলা চাষ করবো জানিয়ে কমর উদ্দিন বলেন, ‘উৎপাদিত তুলা বিক্রি নিয়ে সংশয়ে ছিলাম। কিন্তু তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ন্যায্যমূল্যে তুলা কিনে নেওয়ায় শঙ্কা দূর হয়েছে।’
রায়েদ গ্রামের কৃষক মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘কার্পাস থেকে কাপাসিয়ার নামকরণ হওয়ায় ঐতিহ্য ধরে রাখতে গুটি কার্পাস তুলা চাষ শুরু করেছি। অন্যান্য ফসলের তুলনায় তুলা চাষে রোগ-জীবাণুর আক্রমণ কম। প্রতি শতকে ২০ কেজি তুলা পেয়েছি। মৌসুমের প্রথম দিকে ৩৫ শতক জমি থেকে ২৮০ কেজি তুলা সংগ্রহ করেছি।’
একই গ্রামের চাষি রুমা বেগম বলেন, ‘৩৫ শতক জমিতে তুলা চাষ করতে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রায় সাড়ে ছয়শ কেজি তুলা সংগ্রহ করতে পারবো বলে আশা করছি। প্রতি কেজি তুলা ১০০-১০৫ টাকায় বিক্রি করছি। গাছে যে পরিমাণ তুলা আছে, আরও এক মাস বিক্রি করতে পারবো। অন্য যেকোনো ফসল থেকে গুটি কার্পাসের ফলন বেশি, খরচও কম।’
বেলাসী গ্রামের কৃষক মাহফিজুল হক বলেন, ‘এলাকার অনেক চাষি গুটি কার্পাস জাতের তুলার চাষ করেছেন। সংগ্রহের আগে স্ফটিক স্বচ্ছ তুলা পুরো ক্ষেতজুড়ে ছড়িয়ে থাকে। দেখে মনে হয় আকাশের সাদা মেঘ জমিতে নেমে এসেছে। আশপাশের লোকজন তুলাক্ষেত দেখতে আসেন।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান বলেন, ‘কার্পাস তুলা থেকে জগদ্বিখ্যাত মসলিন উৎপাদিত হয়। জনশ্রুতি আছে, কাপাসিয়ায় বহু বছর আগে ব্যাপকভাবে কার্পাস তুলা চাষ হতো। তা দিয়ে তৈরি হতো জগদ্বিখ্যাত মসলিন। সেই থেকে কাপাসিয়া উপজেলার নামকরণ হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা প্রশাসন, তুলা উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও চাষিদের সম্মিলিত উদ্যোগে কার্পাস তুলার চাষ হচ্ছে। উপজেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে এটি ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে ঐতিহ্য ধরে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এই অঞ্চলের চাষিরা।’
ঢাকা জোনের প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ এস এম আব্দুল বাতেন বলেন, ‘ঢাকা জোনের ১৪টি ইউনিটের মধ্যে কাপাসিয়াতে এ বছর গুটি কার্পাস তুলার আবাদ ভালো হয়েছে। অন্তত ৫০ একর জমিতে তুলা চাষ হয়েছে। সঠিক সময়ে বীজ বপন, সঠিক পরিচর্যা এবং আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ভালো ফলন হয়েছে। এ বছর কাপাসিয়াতে হেক্টরপ্রতি গড়ে সাড়ে চার টন ফলনের সম্ভাবনা আছে। তুলা চাষে এটি বাম্পার ফলন বলা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘শ্রাবণ মাস তুলার বীজ বপনের সময়। এই সময়ে বৃষ্টিপাত হওয়ায় বীজ বপনে সেচের প্রয়োজন হয় না। তুলার সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে লালশাক ও সবজি চাষ করা যায়। সাথী ফসল বিক্রি করে বাড়তি টাকাতে তুলার উৎপাদন খরচ উঠে যায়। এতে কৃষকরা তুলা থেকে অধিক লাভবান হতে পারেন। খাদ্য ফসলকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে তুলনামূলকভাবে কম উর্বর উঁচু জমিতে লেবু, কলা, আম এবং কাঁঠালের বাগানেও তুলা চাষ করা যায়। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর ঢাকা জোনের সব ইউনিটসহ কাপাসিয়ায় ব্যাপক তুলা চাষের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
অল্প খরচে বেশি আয়: মিষ্টি কুমড়া চাষে ঝুঁকছেন বরিশালের চাষিরা!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।