নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুরের কালীগঞ্জে পরিবেশ আইন অমান্য করে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই স্থানীয় কয়েকটি চক্র কৃষি জমির উর্বর মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েক মাস ধরে চলছে কৃষি জমির এ মাটি কর্তন। এতে যেমন জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্যও। ইতিমধ্যে বিভিন্ন গোপন তথ্যের ভিত্তিতে স্থানীয় প্রশাসন একাধিক অভিযান পরিচালনা করে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে একাধিক ব্যক্তিকে জেল-জরিমানা করলেও থামছে না এই মাটি কাটা। তবে স্থানীয় অনেক নেতৃবৃন্দ নিজেদের অন্তঃকোন্দলে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলে প্রশাসনকে ভুল তথ্যে বিভ্রান্ত করছে বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।
মঙ্গলবার (১৪ মে) সকালে এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এস এম ইমাম রাজী টুলুর সাথে আলোচনায় এবং গত সোমবার (১৩ মে) উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা মাসিক সভায় বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে। স্থানীয় বিভিন্ন গোপন তথ্যের উপর ভিত্তি করে প্রশাসন গুরুত্ব দিয়ে অভিযান চালালেও ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় প্রাপ্ত তথ্যের সাথে ঘটনার কোন মিল নেই। এতে করে স্থানীয় জনগণকে সেবা প্রদান করা প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদের অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি যথাযথ তথ্যের সাথে ঘটনার মিল থাকলেই অপরাধী জেল-জরিমানার শিকার হচ্ছে।
জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্নস্থানে কৃষি জমি উঁচু-নিচু হওয়ার কারণে অনেক কৃষক নিজ উদ্যোগে সেগুলো সমান করার ব্যবস্থা করেন। আবার অনেক কৃষক তাদের বোরো জমিতে ধানের ফলন না হওয়ায় চার পাশে পাড় বেঁধে মাছ চাষের উদ্যোগ নিচ্ছেন। অনেকে নিজেদের নতুন বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে কৃষি জমির মাটি কেটে সেখানে ফেলছে, কেউবা বর্ষা ও বন্যার পানি থেকে রক্ষার জন্য নিজেদের বাড়ি উঁচু করছেন। কিন্তু সেই ক্ষেত্রে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বিভক্তির কারণে এবং তাদের নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলে প্রশাসনকে ভুল তথ্যে বিভ্রান্ত করছেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত মাসের ২৪ এপ্রিল বিকেলে উপজেলার জামালপুর, জাঙ্গালিয়া, বক্তারপুর, মোক্তারপুর ইউনিয়নে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হয়। অভিযানে ৫টি ভেকু ও ৫টি লড়ির ব্যাটারি জব্দ করা হয়। এছাড়াও কৃষি জমি থেকে মাটি উত্তোলন ও বিপনন বন্ধ করা হয়। চলতি মাসের ৪ মে উপজেলার জামালপুর, কাপাইস ও বড়হরা এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হয় এবং বালু মহাল মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ১৫ (১) ধারা লংঘনের দায়ে পাঁচটি মামলায় ৫ জনকে ১৫ দিনের করে বিনাশ্রম কারাদÐ প্রদান করা হয়। গত ১৩ মে বিকেলে উপজেলা বক্তারপুর ইউনিয়নের ফুলদী এলাকায় অভিযান চালিয়ে একই আইনে একজনকে ৫০ হাজার টাকা ও মাটি কাটার এই গণউপদ্রব বন্ধে দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ২৯১ ধারা লংঘনের দায়ে একজনকে ১০ হাজার টাকা অর্থদÐ করা হয়। সবগুলো অভিযান এবং ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস. এম ইমাম রাজী টুলু।
ইউএনও এস. এম ইমাম রাজী টুলু বলেন, আমি মাস খানেক হয় এ উপজেলায় যোগদান করেছি। কিন্তু যখনই কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার খবর পেয়েছি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তখনই অভিযান পরিচালনা করছি এবং জেল-জরিমানা করেছি। তবে অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো স্থানীয় কয়েকটি চক্র নিজের ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রায়ঃশই প্রশাসনকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে। এতে করে অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমি গেল উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা মাসিক সভায়ও আলোচনা করেছি। ভুল তথ্যের কারণে অনেক সময় নষ্ট হয় এবং দায়িদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতেও অসুবিধা হয়। প্রশাসনকে সঠিক তথ্যের বদলে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করলে এখন থেকে ভুল তথ্যদাতার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান। তবে সঠিক তথ্য দিলে দায়িদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে সকলকে আশ^স্ত করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।