নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: মাত্র সাড়ে ৩ লাখ টাকা ধার নিয়ে শুরু, কিন্তু শেষমেশ বায়নানামা দলিলে জমির মূল্য দাঁড়াল ৮১ লাখ ৮২ হাজার টাকা! এমনই অবিশ্বাস্য এক প্রতারণার অভিযোগে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার মঠবাড়ী এলাকার পঞ্চাশোর্ধ বিপ্লব গমেজ।
ভুক্তভোগী বিপ্লব গমেজ কালীগঞ্জের নাগরী ইউনিয়নের মঠবাড়ী গ্রামের সুনীল গমেজের ছেলে। অভিযুক্ত ব্যক্তি মো. সাইদুল ইসলাম (২৯) একই ইউনিয়নের নগরভেলা গ্রামের মো. ছাহিদ মিয়ার ছেলে।
বিপ্লব গমেজের অভিযোগ, পারিবারিক প্রয়োজনে গত ১১ মার্চ তিনি পরিচিত সাইদুল ইসলামের কাছ থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ধার নেন। শর্ত ছিল, প্রতি মাসে ওই টাকার ওপর ১০ শতাংশ সুদ দিতে হবে। সাইদুল জানান, অর্থ লেনদেনের স্বচ্ছতার জন্য স্ট্যাম্পে লিখে রাখা হবে।
বিপ্লব বলেন, “সেদিন দক্ষিণ মঠবাড়ীর বেনুর বাড়ির ভাড়াটিয়া শুকুমারের কক্ষে সাইদুল নগদ টাকা দেন। তিনি বলেন, শুধু স্বাক্ষর দিতে হবে—আমি স্ট্যাম্প না পড়ে সই করে দিই। বুঝতেই পারিনি, এর ভেতর এমন প্রতারণার ফাঁদ লুকানো ছিল।”
তিন মাস পর টাকা ফেরত দিতে গেলে সাইদুল নানা অজুহাত দেখাতে শুরু করেন। পরে স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে বিপ্লব জানতে পারেন, তার নামে জমি বিক্রির বায়নানামা দলিল তৈরি হয়েছে।
গত ২৩ জুলাই কালীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে দলিল নম্বর ২৩৯২/২৫ সংগ্রহ করে তিনি জানতে পারেন—অভিযুক্ত সাইদুল ইসলাম প্রতারণার মাধ্যমে ১১ মার্চ একটি দলিল সম্পাদন করেছেন, যেখানে উল্লেখ আছে বিপ্লব গমেজ মঠবাড়ী মৌজার ৯ শতাংশ জমি ৮১ লাখ ৮২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন এবং ৭০ লাখ টাকা নগদ পেয়েছেন!
বিপ্লবের দাবি, “আমি কোনো জমি বিক্রি করিনি। মাত্র ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলাম। সেই টাকাকেই ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে তারা আমার জমির দলিল করেছে।”
এ ঘটনায় স্থানীয় গণ্যমান্যদের উপস্থিতিতে ২৪ জুলাই এক সালিশ বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়—বিপ্লব ধারসহ মোট ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করবেন। কিন্তু স্থানীয়দের অনুরোধে তিনি ৭ লাখ টাকা দিতে রাজি হন।
বিপ্লব বলেন, “আমি নগদ ৭ লাখ টাকা নিয়ে সাইদুলের বাড়িতে যাই, কিন্তু সে টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। উল্টো আমাকে ভয়ভীতি দেখায়।”
তিনি আরও জানান, “এই ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি জড়িত। পরিকল্পিতভাবে প্রতারণা করে আমার জমির ওপর দলিল সম্পাদন করেছে তারা। আমি প্রশাসনের কাছে ন্যায়বিচার চাই।”
বিপ্লবের ছোট ভাই তুষার গমেজ বলেন, সাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে পূর্বেও অনুরূপ প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। “ধার দেওয়ার নামে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে পরে সেটিকে বায়নানামায় রূপান্তর করার একটি সক্রিয় চক্র এলাকায় কাজ করছে,” অভিযোগ করেন তিনি।
ঘটনার সময় দলিলে স্বাক্ষী ছিলেন সেনপাড়া গ্রামের আহামত শেখের ছেলে মতিন শেখ, কেটুন গ্রামের নারায়ণ করের ছেলে সঞ্চয় কর ও মঠবাড়ী গ্রামের যতীন্দ্র করের ছেলে রিপন কর।
স্বাক্ষী রিপন কর বলেন, “বিপ্লব ভাই টাকার প্রয়োজনে সুদে টাকা নিয়েছিল। সিকিউরিটি হিসেবে জমির কাগজ রাখে। কথা ছিল, টাকা ফেরত দিলে কাগজ ফেরত দেবে। কিন্তু পরে সাইদুল প্রতারণা করে জমি বায়না দেখিয়েছে। এটা সত্যিই দুঃখজনক।”
অভিযুক্ত সাইদুল ইসলাম অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি তার কাছ থেকে টাকা দিয়ে জমি কিনেছি। হয়তো এখন অন্য কোথাও বেশি দাম পাচ্ছেন, তাই এমন অভিযোগ করছেন। অনেক আগেই জমিটি নিয়েছি, এখন অভিযোগ তোলার কারণ বুঝতে পারছি না।”
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলাউদ্দিন বলেন, “অভিযোগটি আমরা পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।