দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে আগামীকাল দেশের মাটিতে পা রাখছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান। তাঁর এ প্রত্যাবর্তনকে শুধু একজন রাজনৈতিক নেতার দেশে ফেরা নয়, বরং বাংলাদেশের রাজনীতির নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে দেখছে বিএনপিসহ দেশবাসী। দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে সারা দেশ থেকে নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা আসছেন রাজধানীতে। শুভেচ্ছাসংবলিত ব্যানার-বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে ঢাকা সিটি। জন উপস্থিতির দিক থেকে অতীতের সব রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের রেকর্ড ভাঙার প্রত্যাশা করছে বিএনপি। তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ঘিরে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে তাঁর নিরাপত্তা।
বিএনপির দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলছেন, ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনের পর তৎকালীন সরকার তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করে। ২০০৮ সালে তাঁকে মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার নামে যুক্তরাজ্যে নির্বাসনে পাঠানো হয়। নতুন পরিবেশ-পরিস্থিতিতে তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে ব্যাপক উদ্দীপনা ও প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে। ধারণা করা যায়, উপস্থিতির দিক থেকে অতীতের সব আয়োজনকে ছাড়িয়ে যাবে এই গণসংবর্ধনা। তারা বলছেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তারেক রহমানের দেশে ফেরা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। যার পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান কয়েকবার দেশে এলেও তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেননি।
বরণে ব্যাপক প্রস্তুতি : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সন্নিকটে খিলক্ষেত ৩০০ ফুট এলাকায় গণসংবর্ধনার আয়োজন করেছে দলটি। সর্বোচ্চ জনসমাগম নিশ্চিত করার পাশাপাশি পুরো আয়োজন সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ রাখতে কাজ করছেন নেতা-কর্মীরা। নিরাপত্তা নিশ্চিতে দলের পাশাপাশি সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকেও নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের জন্য ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিক অনুমতি পেয়েছে দলটি।
প্রস্তুত হচ্ছে সংবর্ধনা মঞ্চ : বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, সংবর্ধনায় অন্তত ৫০ লাখ মানুষের উপস্থিতির প্রত্যাশা করছেন তাঁরা। বিশেষ করে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের শক্তি প্রদর্শনের লক্ষ্যও রয়েছে এই আয়োজনের পেছনে। গতকাল সংবর্ধনা মঞ্চ পরিদর্শন শেষে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সংবর্ধনায় অর্ধকোটি মানুষের উপস্থিতি আশা করছি।’ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারেক রহমানের বিমানবন্দর থেকে ৩০০ ফুটের গণসংবর্ধনা স্থান এবং গুলশান পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে, সেদিকে খেয়াল রাখতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংবর্ধনায় অংশ নিতে ইতোমধ্যে সারা দেশ থেকে নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করেছেন। আজকের মধ্যে অনেকে চলে আসবেন। তবে ঢাকা ও আশপাশের জেলার নেতা-কর্মীরা বৃহস্পতিবার সকাল সকাল বিমানবন্দর এলাকায় চলে আসবেন। দলের শীর্ষ নেতারা তাঁদের নেতাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাবেন। এ ছাড়া ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থী, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থেকে কর্মসূচি সফল করবেন। বৃহস্পতিবার সারা দেশের ১০টি লাইনে চলবে স্পেশাল ট্রেন। কক্সবাজার থেকে পঞ্চগড়, খুলনা থেকে রাজশাহীসহ দেশের প্রায় প্রতিটি প্রান্ত থেকে ঢাকামুখী হচ্ছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। রেলওয়ে জানিয়েছে, স্পেশাল ট্রেন ও অতিরিক্ত কোচ সংযোজনের মাধ্যমে আনুমানিক ৩৬ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হবে। তবে নির্বাচনি আচরণবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংবর্ধনায় উপস্থিতির ইতিহাস সৃষ্টি হবে এমনটা দাবি করে বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, সারা দেশের নেতা-কর্মীসহ দেশবাসী তারেক রহমানকে বরণে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইতিহাস সৃষ্টি হবে বৃহস্পতিবার। জনসমুদ্রে পরিণত হবে ঢাকা। তিনি বলেন, ‘দিনটি আমরা স্মরণীয় করে রাখতে চাই। আশা করি ঢাকায় অতীতের যেকোনো প্রত্যাবর্তনকে ছাপিয়ে যাবে।’
ঢাকায় পৌঁছেই যোগ দেবেন সংবর্ধনায় : দেশে পৌঁছার পর তারেক রহমান বিমানবন্দর থেকে সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে যাবেন। যাওয়ার পথে ৩০০ ফুটে সংবর্ধনায় যোগ দেবেন।
দেশে ফেরার প্রস্তুতি সেরেছেন তারেক রহমান : তারেক রহমান দেশে ফেরার সার্বিক প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছেন। ট্রাভেল পাস হাতে পেয়েছেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি ২০২০ ফ্লাইটে টিকিট বুকিং করেছেন তারেক রহমান। ফ্লাইটটি আজ ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে। সব ঠিক থাকলে বোয়িং ৭৮৭-৯ মডেলের উড়োজাহাজটি বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবে। এই ফ্লাইটের বিজনেস ক্লাসে তারেক রহমানের পাশাপাশি আরও পাঁচ সফরসঙ্গীর টিকিট বুকিং দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা জারনাজ রহমান।
সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে নিরাপত্তা : তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের দিন বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে বিএনপি। সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলামকে। তাঁর নেতৃত্বে চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্সসহ একাধিক নিরাপত্তা টিম দায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি দলের বিশ্বস্ত নেতা-কর্মীদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে আলাদা একটি সমন্বয় টিম। নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। এ নিয়ে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনও বৈঠক করছে। বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসা পর্যন্ত তারেক রহমানকে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা দিতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। একইভাবে নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকেও। বলা হয়েছে, তারেক রহমান দেশে এলে তার নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষ কোনো ঝুঁকির তথ্য নেই। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁর নিরাপত্তায় কোথাও যেন কোনো ফাঁক না থাকে, এ বিষয়টি জোরালোভাবে তদারকির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেশে ফেরার পর তারেক রহমান যাতায়াতের সময় পাবেন পুলিশি পাহারাসহ বিশেষ নিরাপত্তা। এ ছাড়া তাঁর বাসভবন ও অফিসে থাকবে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা। নিরাপত্তা ছাড়পত্র ছাড়া কাউকে তাঁর ধারে কাছে ভিড়তে দেবে না পুলিশ। ইউনিফর্মধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদাপোশাকেও গোয়েন্দারা তারেক রহমানের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন।
অন্যদিকে নিরাপত্তাজনিত হুমকির কথা উল্লেখ করে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরার আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) নিরাপত্তার আবেদন করেছে দলটি। তবে এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। গতকাল দুপুরে বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে নিরাপত্তা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক হয়।
তারেক রহমানের ব্যবহারের জন্য ইতোমধ্যে দুটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনা হয়েছে। একটি টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো এলসি ২৫০ মডেলের বিশেষ ‘হার্ড জিপ’, যা বিআরটিএর রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস অনুমোদন পেয়েছে। এ ছাড়া একটি বুলেটপ্রুফ বাসও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় অন্তত ৯টি চেকপোস্ট চালু রয়েছে। তারেক রহমানের আসার আগে চেকপোস্টের সংখ্যা আরও বাড়ানো হতে পারে, প্রয়োজন অনুযায়ী তাঁর বাসভবনের আশপাশেও নিরাপত্তা বাড়ানো হবে।
সংবর্ধনায় ৫০ লাখ মানুষ হবে : ঢাকায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ৫০ লাখ মানুষের সমাগম হবে বলে আশাবাদ জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও অভ্যর্থনা কমিটির সদস্যসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল দুপুরে রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকায় নির্মিত অভ্যর্থনা মঞ্চ পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমান আসবেন। আজকেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিভিন্ন জেলা থেকে লোক আসা শুরু হয়েছে। সুতরাং ২৫ ডিসেম্বর এখানে মানুষের মহামিলন ও মহামেলায় পরিণত হবে। এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



