ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলায় এবার নতুন চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কুমিল্লার হোমনা উপজেলার শরীফ বলী। তিনি বাঘা শরীফ নামে পরিচিত।
বন্দরনগরীর ঐতিহাসিক লালদীঘি মাঠে আজ বিকালে এই প্রতিযোগিতার ১১৫তম আসর অনুষ্ঠিত হয়।
বলীখেলার ফাইনালে শরীফ একই জেলার মো. রাশেদ বলীকে ১১ মিনিটে পরাজিত করে বিজয়ী হন।
রানারআপ রাশেদ ১১ মিনিট পর নিজেই খেলা চালিয়ে নিতে অপারগতা জানালে রেফারি শরীফকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।
এর আগে প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়ে রাঙামাটির সৃজন চাকমাকে হারিয়ে ফাইনালে যান রাশেদ।
আসরে খেলার কথা ছিল গতবারের চ্যাম্পীয়ন কুমিল্লার শাহজালাল বলীর। নামও দিয়েছিলেন জমা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে শিষ্যকে সুযোগ দিতে নিজেই সরে দাঁড়ান তিনি। অন্যদিকে সাবেক চ্যাম্পীয়ন জীবন বলীও শারীরিক অসুস্থ থাকায় নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন।
বিকাল সোয়া পাঁচটার দিকে চ্যাম্পিয়ন রাউন্ড শুরু হয়। এর আগে বিকাল চারটা থেকে প্রায় ৮৪ জন বলী জব্বারের বলীখেলার রিংয়ে পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এরপর বাছাই করা ৮ জন বলী কোয়ার্টার ফাইনালে অংশ নেন। সেখান থেকে জয়ী চারজন সেমি ফাইনালে অংশ নেন। অপর দুই সেমিফাইনালিস্ট ছিলেন খাগড়াছড়ির সৃজন চাকমা ও সীতাকুণ্ডের রাসেল। সৃজন শেষ পর্যন্ত তৃতীয় স্থান অধিকার করেন।
বিজয়ের পর কুস্তির রিংয়ে দাঁড়িয়ে গুরুর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলেননি শরীফ বলী।
তিনি বলেন, আমি প্রথমবার খেলতে এসেছি জব্বারের বলীখেলায়। গতবারের চ্যাম্পিয়ন শাহজালাল ভাই আমার গুরু। তিনি না খেলে আমাকে খেলার সুযোগ করে দিয়েছেন। উনি অনেক বড় মনের মানুষ। আপনারা উনার জন্য দোয়া করবেন।
গত আসরের রানারআপ জীবন বলী বলেন, আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। তাই নিজের নাম প্রত্যাহার করে বাঘা শরীফকে খেলানোর নাম প্রস্তাব করি।
প্রতিযোগিতা শেষে প্রধান অতিথি হিসেবে পুরস্কার বিতরণ করেন রেল মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
আয়োজক কমিটির যুগ্মসচিব সাংবাদিক চৌধুরী ফরিদের সঞ্চালনায় এসময় সভাপতিত্ব করেন মেলা কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী।
১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের সনামধন্য ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার সাওদাগর এই বলীখেলা বা কুস্তী প্রতিযোগিতার সূচনা করেন। সেই থেকে প্রতি বছরের বৈশাখ মাসের ১২ তারিখ এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে ব্যতিক্রমধর্মী এ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন করেন আবদুল জব্বার মিয়া।
জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলাকে ঘিরে লালদীঘি ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। মেলাকে কেন্দ্র করে নগরের প্রায় ২ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসেছে মেলা। এতে লাখ লাখ ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম ঘটেছে। এবারও তিনদিনব্যাপী চলমান এই মেলার গতকাল ছিল দ্বিতীয় দিন। মেলায় চট্টগ্রামসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার নারী-পুরুষরাও যোগ দিয়ে থাকেন এবং সাংবাৎসরিক প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র, হাতপাখা, পাটি, বালিশ, ঝারু এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয়-বিক্রয় করে থাকেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।