অনিল চন্দ্র রায়,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: রাত তখন ৩টা। হঠাৎ পানির কলকল ধ্বনি কানে আসায় ঘুম থেকে জেগে উঠেন রবিদাস-শ্যামলী দম্পতি। জেগে দেখেন ঘরের ভেতর বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। বাধ্য হয়ে বিছানা পত্র সহ বাড়ির পাশের উঁচু সড়কে বিছানা পেতে রাত কাটান এ দম্পতি। কিš‘ দিনের আলো ফুটতেই দেখেন ঘর পেরিয়ে বন্যার পানি সেই সড়কেও তাদের বিছানা ছুঁই ছুঁই। চুলা ভিজে যাওয়ায় সকালের রান্নাটুকুও সেরে নিতে পারেননি শ্যামলী, অ্যাজমা রোগী ষাটোর্ধ বিদাসের মুখে তাই বেলা ১১ টাতেও কোনও খাবার জোটেনি।
শ্যামলী রানী বলেন,‘রাইতে হঠাৎ ঘরত পানি উঠি সউক ভিজি গেইছে। সড়কত উঠছি, এটিইয়ো পানি। কই যায়া আশ্রয় নেই! সকাল থাকি কোনও দানা পেটত যায় নাই। এখনা শুকনা খাবার দিলে খাবার পাইলং হয়।’
ঘরের ভেতন কোমর সমান উ”চতায় পানি থাকায় রান্না করতে পারছেন না উপজেলার বালাবাড়ি এলাকা সংলগ্ন পানফুল বেওয়া, বিবিজান বেওয়াসহ রমনা বাঁধে আশ্রয় নেওয়া কয়েকটি পরিবার। তাদের পানিবন্দি অবস্থার ছবি তুলতে গেলে পানফুল বেওয়া বলেন,‘ ছবি তুলি কী করবেন, হামাক এখনা শুকনা খাবার দ্যাও।’
এই ভানভাসিদের সাথে কথা বলে জানা গেল, তারা এখনও কোনও ত্রাণ সহায়তা পাননি। তাদের ঘরে চাল রয়েছে কিš‘ সেই চাল রান্না করার জায়গা এবং
শুকনো জ্বালানী তাদের জোগাড়ে নেই। তাই ভাত কিংবা তরকারি রান্না করতে পাচ্ছেন না। দোকান থেকে কিছু কিনে খাবেন, সে টাকাও তাদের কাছে নেই বলে জানান এই বানভাসি নারীরা।
চিলমারী উপজেলার রমনা ঘাট সড়কের পাশে সংসার পাতা রবিদাস-শ্যামলী দম্পতি কিংবা পানফুল বেওয়াদের মত কুড়িগ্রাম জেলার সব পানিবন্দি পরিবারেই প্রায় একই চিত্র। জেলার ৯ উপজেলার প্রায় পৌনে ২ লাখ পরিবার এখন পানিবন্দি। চারপাশে শুকনো জায়গা না থাকায় ঘরে চাল থাকা সত্ত্বেও এরা রান্না করে খেতে পারছেন না। যারা একটু উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়ে ঘরে থাকা চাল রান্না করছেন, তারা টাকার অভাবে তরকারির সংস্থান করতে
পারছেন না। পাচ্ছেন না বিশুদ্ধ খাবার পানি।
এদিকে, উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ও হলোখানা ইউনিয়ন সহ বন্যা কবলিত কয়েকটি এলাকা ঘুরে পানিবন্দি পরিবারগুলোর সাথে কথা বলে জানা গেছে, অধিকাংশ পরিবার এখনও কোনও পর্যায়ের ত্রান সহায়তা পাননি। এমনকি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের খোঁজটুকুও নিতে যাননি। উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের প্রায় ৯৫ ভাগ পরিবার পানিবন্দি। এরমধ্যে অনেকে বসত বাড়ি ত্যাগ না করলেও প্রায় ১০ হাজার পরিবার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানান বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মো. কাওসার আলী।
বাঁধে আশ্রয় নেওয়া পরিবার গুলোর সাথে কথা বলে জানা গেছে, শুকনো খাবারের পাশাপাশি তাদের এখন জরুরী ভিত্তিতে বিশুদ্ধ পানি ও শৌচাগারের পাশাপাশি গবাদি পশুর জন্য খাদ্যের প্রয়োজন। বেড়িবাঁধে গবাদি পশু নিয়ে আশ্রয় নেওয়া নয়াগ্রামের কছিমুদ্দি ও আফসার বলেন, ‘গুড় নিয়া মহা বিপদে আছি। চারপাশে পানি, খড়ের ডিবিও ডুবি গেইছে। বউ-ছাওয়ার খাবার জোটাই, না গরুর খাবার জোটাই, খুব পেরেশানিত আছি।’
এবারের বন্যা ’৮৮ সালের বন্যার ভয়াবহতাকেও ছাড়িয়ে জানিয়ে চিলমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শওকত আলী
সরকার বীরবিক্রম বলেন,‘এবারের বন্যা ৮৮ সালের বন্যাকেও ছাড়িয়েছে। আমি নিজে ওই বন্যার প্রত্যক্ষদর্শী। তখন এতো মানুষও ছিল না। পানি এত
বেশি প্লাবিত হয়নি, এতো ক্ষয়ক্ষতি ও হাহাকারও ওঠেনি। এবারের বন্যা সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে।’
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, ব্রহ্মপুত্র সহ জেলার সবকটি নদনদীর পানি কমতে শুরু করেছে। আশা করছি বৃহস্পতিবার রাত থেকে একটা ভালো পরিবর্তন হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।