তুরস্ক, জর্ডান, মরক্কো, মিসর—এই চার দেশের খাবার আমার কাছে প্রায় একই রকম লেগেছে, নামের ভিন্নতা ছাড়া। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, কৃষ্টি, ভাষা, খাদ্যসংস্কৃতি স্রোতের মতো বহমান। এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে নানা মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। জর্ডানের খাবারে উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, পারস্য ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের নানা দেশের খাদ্যসংস্কৃতির প্রভাব রয়েছে।
মাংস ও সবজি মসলায় মাখিয়ে একটি ট্রেতে নেওয়া হয়। তারপর একে ঢেকে মাটির নিচে পোড়ানো হয়। এতে স্মোকি স্বাদ পাওয়া যায়। গাইড ইয়াসির বলল, ‘এলিজা তোমার ক্যামেরা নিয়ে রেডি হও। এখন জার্বের পাত্র মাটির নিচ থেকে তোলা হবে।’
রান্নার স্থলে গিয়ে দেখি এলাহি কাণ্ড। ক্যাম্পের সব পর্যটক দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে বালুকাময় আয়তকার একটি চত্বরে। বোঝা যাচ্ছে, সেখানে দুই থেকে তিনটি ভূগর্ভস্থ চুল্লি রয়েছে। সেখানকার একটি চুল্লিতে রান্না হয়েছে আজকের জার্ব। চারজন মিলে দুটি বড় লোহার লাঠিসহযোগে গরম একটি পাত্র মাটির নিচ থেকে তুলে আনল। পাত্র বলতে ট্রেসদৃশ কিছু একটা। পাত্রটিও লোহার। পাত্রের তিনটি পৃথক অংশ। প্রথম অংশে আলু আর মুরগি গ্রিল করা হয়েছে। তারপরের অংশে ভেড়ার মাংস। সবশেষ অংশে একটি পাত্রে পোলাও।
জর্ডান, মিসর আর তুরস্কের আরও একটি বিষয় উল্লেখ করতে হয়, তা হলো, প্রতি দশজনের মধ্যে একজনের নাম মোহাম্মদ, আহমেদ কিংবা ইয়াসির। জর্ডানের রেস্তোরাঁ হোক কিংবা পথের পাশের খাবারের দোকানই হোক, হামুস, ফালাফেল স্যান্ডউইচ, সালাদ ও বিভিন্ন ধরনের রুটি সহজলভ্য। হয়তো মান ও গুণের ফারাক থাকতে পারে। জর্ডানের রসনাকে অন্য সব আরব দেশের থেকে আলাদা করেছে ৪টি খাবার—মানসাফ, মাগলোবা, ফালাফেল ও জার্ব।
জর্ডানের কুইজিনে জাতীয় খাবারটি হলো মানসাফ। এটি আরবের অন্যান্য দেশের মতোই মনে হলো। স্থানীয় মসলার ব্যবহারে একটি আলাদা ফ্লেভার টের পাওয়া যায়। খুশবুতে আধা ভোজন হয়ে যায়। ফলে একটু খেলেই মনে হয়, মেলা খেয়ে ফেলেছি। এটি সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত মত। মানসাফ খাওয়ার আগে রীতিমতো আধ্যাত্মিক বিষয় রয়েছে। সবাই দাঁড়িয়ে কেবল ডান হাত দিয়ে এটি উপভোগ করে থাকে। একটি বড় পাত্রে সবাই একসঙ্গে খাবার গ্রহণ করে। অবশ্য পর্যটকদের জন্য এ রকম কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। জর্ডানের সব শহরেই দুপুরের আয়োজনে মানসাফ খেয়েছি।
আবার জার্বের রন্ধনপদ্ধতি বেশ নাটকীয়। ওয়াদি রাম মরুভূমিতে এক রাতের তাঁবুবাস করেছি। দিনে জিপে চড়ে পাথরের পাহাড় আর সোনালি বালুকাময় প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছি। সন্ধ্যাবেলায় ক্যাম্পে ফেরার পর বেদুইন চায়ের সঙ্গে উপভোগ করেছি জার্ব। পুরো রান্নার পদ্ধতি দেখিনি। কিন্তু রান্না হওয়ার পর মাটির নিচ থেকে পাত্র উত্তোলনের আয়োজন দেখেছি। এটি বেদুইন বারবিকিউ। জার্ব রান্না হয় মাটির নিচে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।